logo
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০৯:৫৬
মধ্যপাড়া শিলাখনি
বিক্রি কমেছে পাথরের, শ্রমিকদের শঙ্কা
পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

বিক্রি কমেছে পাথরের, শ্রমিকদের শঙ্কা

পার্বতীপুরের মধ্যপাড়ায় খনির স্তূপকৃত পাথর

বিক্রি কমে যাওয়ায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর মধ্যপাড়ায় পাথরের স্তূপ জমতে শুরু করেছে। এতে কমেছে পাথর উত্তোলনের পারিমাণও। পেট্রোবাংলার মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এ কঠিন শিলাখনি থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ টন পাথর উত্তোলন করা হতো। এখন সেখানে উত্তোলন করা হয় ১ লাখ টন।

 

এদিকে বিক্রি কমে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শ্রমিক ও স্থানীয়দের মধ্যে। তাদের অভিযোগ, এখানকার পাথর বিক্রি না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পেট্রোবাংলার কিছু অসাধু কর্মকর্তার সিন্ডিকেট। তাই ভারত থেকে আমদানিকৃত পাথরের বিক্রি বাড়লেও বিক্রি হচ্ছে না দেশীয় এ খনি থেকে উৎপাদিত পাথর।

 

ডিলাররা বলছেন, আমদানিকৃত পাথরে তাদের লাভ বেশি, তাই অনেক ব্যবসায়ী মধ্যপাড়া খনির পাথর কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। কমেছে ডিলারের সংখ্যাও। চুক্তিবদ্ধ ১৪০-১৫০ ডিলারের মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ৫০-৬০ ডিলার।

 

শ্রমিক মোহাম্মদ ফয়জার রহমান বলেন, পাথর বিক্রি কমে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। দুপুরে শ্রমিকদের খাওয়ার পয়সা নেই। এভাবে চললে খনির প্রায় ৮০০ শ্রমিকের দুর্দশা আগামীতে আরও বাড়বে। দেখা দিতে পারে শ্রমিক অসন্তোষ।

 

এ ছাড়া মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড ২৫ শতাংশ মজুরি কেটে রাখছে বলে জানায় শ্রমিকরা। এ কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। এতে যেকোনো সময় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন খনিশ্রমিক ইউনিয়নের সুপারভাইজার রহিম বাদশা, শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ মিনহাজসহ অনেকে বলেন, গেল ১ বছর ধরে পেট্রোবাংলা পাথর বিক্রি করতে পারছে না। এজন্য পেট্রোবাংলার সিন্ডিকেট দায়ী। এর বাইরে রয়েছে সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের অভাব ও বিপণন ব্যবস্থার ঘাটতি। এখন আবার ২৫ শতাংশ মজুরি কেটে রাখা হচ্ছে।

 

পাথর ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগে এখানে ১৪০-১৫০ ডিলার ছিল। এখন আছে মাত্র ৫০-৬০ জনের মতো। ভারতীয় আমদানিকৃত পাথরের মূল্য কম হয়। এজন্য মধ্যপাড়া পাথরখনি থেকে পাথর কেনা বন্ধ করেছে অনেক ব্যবসায়ী। তাই পাথরের স্তূপ জমা হয়েছে মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনির স্টোন ইয়ার্ডে। পাথর বিক্রি কমে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয়দের মধ্যেও। কমেছে খনিকেন্দ্রিক আশপাশের দোকানগুলোর বিক্রি। এ ছাড়া ভাটা পড়েছে অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যেও।

 

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং ও সেলস) রাজিউন নবী বলেন, পাথর বিক্রি কমে গেছে। স্টোন ইয়ার্ডে বর্তমানে ৮-৯ লাখ টন বিভিন্ন সাইজের পাথর রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৩০ কোটি টাকা। রাখার স্থান সংকুলান না হওয়ায় পাথর উত্তোলন কিছুটা কমিয়ে দিয়েছি। আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন দেড় লাখ টন পাথর উত্তোলন করা হতো, এখন তা নেমে এসেছে ১ লাখ টনের নিচে।

 

বিক্রি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতীয় আমদানিকৃত পাথরের দাম কম। তাই ব্যবসায়ীরা অনেকে এখান থেকে পাথর কিনছেন না। অক্টোবরে পাথরের দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। তারপরও আশানুরূপ পাথর বিক্রি হচ্ছে না।

 

তবে শ্রমিকের বেতন কেটে নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ডর উপমহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং ও সেলস) রাজিউন নবী।

 

ভোরের আকাশ/নি