বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীতার হার ৮ শতাংশ। তবে পুরুষদের মধ্যে প্রতিবন্ধীতার হার ৭ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে এই হার আরো বেশি; ৯ শতাংশ। ৫৯ কিংবা এর চেয়ে কম বয়সীদের প্রতিবন্ধীতার হারের (৫.২%) তুলনায়, ৭০ বা ততোর্দ্ধ বয়সীদের মধ্যে প্রতিবন্ধীতার হার (৪৭%) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
বাংলাদেশ সোসইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) ও আইসিডিডিআর,বি-র যৌথ জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালে অক্টোবর পর্যন্ত জনসংখ্যা-ভিত্তিক এই সমীক্ষা কার্যক্রমটি দেশের ৮ টি বিভাগের ৩২ জেলায় পরিচালিত হয়। এই গবেষনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সনাক্তকরণে, শহর ও গ্রামের ৬ হাজার ৪৫৭ পরিবারের মোট ১৭ হাজার ৫৭৭ জন ব্যক্তিকে স্ক্রিনিং করা হয়।
দেশব্যাপী প্রতিবন্ধী ও বয়ষ্ক ব্যক্তিদের নিরাপদ পানি, পয়নিষ্কাশন (ওয়াশ), ও স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপনে আজ রাজধানী ঢাকার ডেইলি স্টার সেন্টারে এক গোলটেবিল বৈঠক হয়। বাংলাদেশ সোসইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) ও আইসিডিডিআর,বি-র যৌথভাবে এই বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে জানানো হয়- সর্বজন গৃহীত “ওয়াশিংটন গ্রুপের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলীর” মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সনাক্তকরণ করা হয়। প্রশ্নাবলির ছয়টি বিভাগের যেকোনো একটিতে কেউ "অনেক অসুবিধা" বা "কিছুই করতে পারে না" বলে উল্লেখ করলে অথবা “প্রতিদিন” এবং “অনেক বেশি” বিষণ্ণ বা উদ্বিগ্ন থাকলে তাদেরকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
প্রতিবন্ধী ও বয়ষ্ক ব্যক্তিদের ওয়াশ বিষয়ক সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান সার্বিকভাবে চিহ্নিতকরনের লক্ষ্যে ২,৩৭৮ জন প্রতিবন্ধী ও স্বাভাবিক ব্যক্তিদের সাথে একটি পূর্নাঙ্গ জরিপ সম্পন্ন করা হয়।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিই পানি সংগ্রহে অসুবিধার (৪৮%) সম্মুখীন হোন । ১৪% প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রয়োজনের সময় বাড়িতে খাবার পানি নিজে নিয়ে খেতে পারেন না। এর কারণ হিসেবে বেশিরভাগই (৯০% এর অধিক) শারিরিক সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং ১৬% অন্যের উপর নির্ভশীলতার কথা ব্যক্ত করেছেন।
জরিপে অংশ নেয়া বেশিরভাগ (৭৭%) পরিবারে মৌলিক পয়নিষ্কাশন সুবিধা থাকলেও অধিকাংশের প্রবেশপথ এবং অবকাঠামোতে প্রতিবন্ধীবান্ধব বৈশিষ্ট্য যেমন: হুইলচেয়ার-বান্ধব প্রবেশ পথ (৯৭%), উচ্চতা-সামঞ্জস্যযোগ্য প্যান/কমোড (৯৭%), পানি ও হাত ধোয়ার সামগ্রীর সহজ প্রাপ্যতার (৭৪%) অভাব রয়েছে । ফলস্বরূপ, প্রায় ২৫% প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা শৌচাগার ব্যবহার করার সময় মল-মূত্রের সংস্পর্শে আসেন। এ ব্যতীত, বাড়ি থেকে ওয়াশ ফ্যাসেলিটির দীর্ঘ দূরত্বের কারণে বেশিরভাগ গ্রামে বা শহুরে বস্তিগুলোতে, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হয়। এছাড়াও, বিশেষত যাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা (উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা) বা কমিউনিকেশান লিমিটেশন রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে, ওয়াশ সুবিধাসমূহ ব্যবহার করার সময় বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার ভয়, মৌখিক বা শারীরিক নির্যাতনের ভয়, আক্রমণাত্মক প্রাণীদের ভয়, এবং রাতে নিরাপত্তাহীনতা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।
এই গবেষণার ফলাফল অনুসারে, ১২% প্রতিবন্ধী নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবকালীন পণ্য পরিবর্তন এবং ব্যবহার পরবর্তী ব্যবস্থাপনার জন্য অন্যকারো সহায়তার প্রয়োজন হয়, এবং এই সহয়াতার অপ্রতুলতা প্রতিবন্ধী নারীদের মধ্যে ইনকন্টিনেন্স সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষত যাদের যোগাযোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য, এই ইনকন্টিনেন্স সমস্যাটি একটি গুরুতর এবং জরুরী উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।
আইসিডিডিআর,বি-র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট মাহবুব উল আলম বলেন, “এই গবেষণার ফলাফলগুলি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরাপদ পানি, পয়নিষ্কাশন, ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) বিষয়ক সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করবে, যা কেবল অবকাঠামোগত পরিবর্তনই নয়, বরং বয়স্ক ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রয়োজন এবং বাধা মোকাবেলা করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরিতে সার্বিক সহায়তা করবে। ”
এই সমীক্ষাটি মূলত বাংলাদেশ, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, এবং জাম্বিয়াতে বাস্তবায়িত একটি বৈশ্বিক কর্মসূচির অংশ যা লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন (এলএসএইচটিএম) এর প্রোগ্রাম ফর এভিডেন্স টু ইনফরমেশেন ডিসেবিলিটি একশান (পিইএনডিএ), এফসিডিও এর ও আইসিডিডিআরবি’র আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বি-স্ক্যান বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করেছে ।
ভোরের আকাশ/আসা