logo
আপডেট : ২০ নভেম্বর, ২০২৩ ১৩:৪৪
জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অটো রাইসমিল হুমকিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (হ্যঙ্গার)
মো. মাসুদ রানা, সিরাজগঞ্জ

জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অটো রাইসমিল
হুমকিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (হ্যঙ্গার)

ক্যাপশন: রায়গঞ্জে ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে অটো রাইসমিল

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনায় জনবসতি এলাকায় পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে তিনটি ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে বিসমিল্লাহ নামের অটো রাইসমিল। এতে করে ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবেশ ও জনজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। রাইসমিল স্থাপনের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়াসহ আইনগত ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন শিশুশিক্ষার্থী, স্থানীয়রা ও শিক্ষকগণ।

 

এদিকে, বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের চান্দাইকোনা (মৌজার খতিয়ান নং-১৬ ও ২২৩, দাগ নং-১৮১৮ ও ১৮২৪) ৫৭ শতক ফসলি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে অটো রাইসমিল স্থাপনের কাজ চলছে। এই অটো রাইসমিলটি চালু হলে মিলের বর্জ্যে ফসলি জমিসহ এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। অটো রাইসমিলের ধোঁয়া-ছাইয়ে বয়স্ক ও শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর পাশে অবস্থিত চান্দাইকোনা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান ব্যাহত হবে। এ কারণে মিলটি বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এস.এম সোহাগ নামের স্থানীয় কৃষক।

 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চান্দাইকোনা বাজারের পাশে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিবেশ আইন ও নিয়মনীতি না মেনে ৩ টি ফসলি জমিতে রিয়া নামের অটো মিল গড়ে তোলা হয়েছে। এই অটো মিলের অন্তরালে আনোরুল ইসলাম গংরা অটো রাইসমিল স্থাপন করছে। এ মিলটি চালু হলে এর বর্জ্য মিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত পানি, কালো ধোঁয়ার সাথে মিশে, বাতাসে ছাই উড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পল্লীবিদ্যুৎ সাব-স্টেশনসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হবে। একই সঙ্গে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় জনসাধারণের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সেই সাথে নষ্ট হবে ৩টি ফসলি জমি।

 

রোববার সকালে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার রায়গঞ্জ উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৫০টি চালকল ও অটো রাইসমিল রয়েছে। এরমধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র দুটির। বাকি চালকলগুলো অবৈধভাবে চলছে। এতে ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক অঞ্চলের কারণে পরিবেশের ছাড়পত্র পায়নি অধিকাংশ চালকল। পরিবেশের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়াই দাপটের সঙ্গে চলছে এসব চালকল। এ কারণে কারখানার গরম পানি, ছাই ও দূষিত বর্জ্যে আবাদি জমি ও নদী দূষণ হচ্ছে।

 

উপজেলার চান্দাইকোলা ইউনিয়নের আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আব্দুর রউফসহ প্রভাবশালী ১৫ জন একত্র হয়ে অনুমতি ছাড়াই অটো রাইসমিল নামে একটি বড় মিল তৈরি করেছে।

 

চান্দাইকোনা গ্রামের বাসিন্দা হাসান সরকার বলেন, মিলের কাছাকাছি ১০ মিনিট দাঁড়ানো যায় না। ছাই উড়তে থাকে পুরো এলাকায়। গাছপালার পাতা লাল হয়ে গেছে। গাছে নতুন করে কোনো ফল ধরে না। এলাকায় শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছে। একই এলাকায় আরেকটি বড় অটো রাইসমিল তৈরি হচ্ছে। এই মিলটি চালু হলে এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

 

রিয়া অটো রাইসমিলের মালিক আব্দুর রউফ ভোরের আকাশকে বলেন, এখানে সব নিয়ম মেনেই মিলটি চালু করা হচ্ছে। সবকিছুর অনুমোদন আছে আমাদের। তবে মিলের কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো দ্রুত নিরসন করবেন বলে তিনি জানান।

 

এ বিষয়ে অটো রাইস মিলের পার্টনার বাবু সরকার ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের কোনো কাগজপত্র নেই। নির্মাণকাজ শেষ হলে কাগজপত্র তৈরি করে সব দপ্তরে আবেদন জমা দেয়া হবে। সেই মোতাবেক কাজ চলছে।

 

এ বিষয়ে চান্দাইকোনা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুজ্জামান সরকার অভিযোগ করে ভোরের আকাশকে বলেন, স্কুল খোলার সাথে সাথে কালো ধোঁয়ায় স্কুলের আশপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। এ ছাড়া অন্যান্য কারণে চরম দুর্গন্ধ হয়। এতে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, স্কুলের আশপাশে আরো কয়েকটি চাল কল আছে। সেই চাল কলের কালো ধোঁয়া, ছাই ও দুর্গন্ধ পানির কারণে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। সেখানে যদি আবার অটো রাইস মিল তৈরি হয়, তাহলে এখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হবে।

 

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ভুঁইয়াগাতী জোনাল অফিসের (ডিজিএম) ছোলাইমান হোসেন ভোরের আকাশকে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ওই মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাবে না। এক মিলের লাইন যদি অন্য মিলে নিতে চায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

রায়গঞ্জ ইউএনও তৃপ্তি কণা মন্ডল ভোরের আকাশকে বলেন, ওই রাইস মিলের ব্যাপারে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। সেই অভিযোগের আলোকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ওই অটো রাইস মিলটি চালু করা যাবে না। যদি কেউ অটো রাইস মিলটি চালু করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) বাবলু কুমার সূত্রধর ভোরের আকাশকে বলেন, অটো রাইস মিল ও ইটভাটার ধোঁয়া এবং ছাই পরিবেশ ও ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রায়গঞ্জ উপজেলায় এর প্রভাব বেশি পড়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ ও খাদ্য অধিদপ্তরকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

 

পরিবেশ অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জের সহকারী পরিচালক আব্দুর গফুর ভোরের আকাশকে জানান, কাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা নির্দেশ না মানায় ঢাকায় মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/মি