ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ায় আনোয়ারা ও সীতাকুণ্ডে ১৯৫ হেক্টর আমন এবং ৫৯ হেক্টর রবি শস্যের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া ফটিকছড়ি উপজেলায়ও কিছু ফসলের মাঠে ধান ও সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত শুক্রবার আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে আনোয়ারা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর রোপা আমন ও ৪০ হেক্টর রবি শস্যের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। আনোয়ারা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় ৭৫৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ১২০ হেক্টর ধানের মাঠ ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঠিতে লুটিয়ে পড়েছে মাঠের ধানগাছ। অপরদিকে ৫৫০ হেক্টর জমিতে রবি শস্য শিম, ঢেঁড়স, বেগুন, টমেটো, মরিচ, লাউ, সরিষা, বাদামসহ সব প্রকারের রবি শষ্যের আবাদ হয়েছে বলে জানা গেছে। তার মধ্যে ৪০ হেক্টর রবি শস্যের মাঠ ক্ষতি হয়েছে।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সরোয়ার আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে পড়ে যাওয়া ধান ও রবি ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টায় আছে কৃষক। আবহাওয়ার উন্নতি হলে হয়ত ফসলের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
গত শনিবার উপজেলার বারখাইন, বরুমচড়া ইউনিয়নের রবি শস্য আর রোপা আমন ধানের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ঝড়ো হাওয়ায় রোপা আমন ধান পড়ে গেছে। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে টমেটো, শিম, ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। বরুমচড়ার কৃষক জাফর আহমদ বলেন, আমার কাঁচা ধান আর শিমের বেশি ক্ষতি হয়েছে। আনোয়ারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী জানায়, উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠ সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করা হচ্ছে। ১১ ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর রোপা আমন আর ৪০ হেক্টর রবি শস্যের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন স্থানে বোরোর বীজতলা ও আমন ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, বৃষ্টির কারণে ৭৫ হেক্টর রোপা আমন, ১০ হেক্টর বিভিন্ন জাতের শিম, ৫ হেক্টর খেসারি ডাল, ৪ হেক্টর বিভিন্ন জাতের সবজিসহ মোট ৯৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়াকুল এলাকার কৃষক মো. আবদুল আলিম জানান, অসময়ের বৃষ্টিতে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে টমেটো ও শিমের সব ফুল ঝরে যাচ্ছে। পাশাপাশি বীজতলায় লাগানো বিভিন্ন সবজির বীজও নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বগাচতর গ্রামের কৃষক ফয়সাল আহমেদ জানান, ঝড়ে তার ক্ষেতের একশর বেশি পেঁপে গাছ ভেঙে পড়েছে। প্রতিটি গাছে একদেড় মণ পেঁপে ছিল। অনেক কৃষকের ক্ষেতে পানি জমে এখন চারা মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ জানান, বৃষ্টিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, বেগুন, ধনেপাতাসহ নতুন লাগানো সবজি নষ্ট হতে পারে। তবে এখনই ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে না। এদিকে যারা রোপা আমনের ফসল কেটে এখনো মাঠে ফেলে রেখেছেন, তাদের দ্রুত ফসল ঘরে তুলতে হবে। অন্যথায় তারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
গত শুক্রবার টানা বর্ষণ, ঝড়ো হাওয়ায় রোপা-আমন হেলে পড়াসহ আগাম শীতকালীন শাক-সবজিতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ফটিকছড়িতে। উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা গত শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেটসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বেলা ৫টা পর্যন্তও ফটিকছড়ি হারুয়ালছড়িসহ বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল বলে সূত্র জানায়।
উপজেলার পৌরসভা, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, সুয়াবিল, ভূজপুর এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে পাকা আমন ঘরেই তোলার আগেই হেলে পড়েছে। শীতকালীন মুলাসহ অন্যান্য শাক-সবজি গাছের চারায়ও সেই ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উত্তর ফটিকছড়িতে আগাম ধান রোপণে কিছু ধান ঘরে তোলা হলেও বেশিরভাগ আমন পাকা ধান এখন মাঠেই থেকে গেছে। অন্যদিকে ফটিকছড়ির উত্তরে বেশিরভাগ পাকা-কাঁচা ধান এখনো মাঠে। কৃষকরা বলছেন, এখন আমন ধানের মৌসুম, ধান পাকা ধরেছে। এই সময়ে অতিবৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ধানে চিটা ধরে যেতে পারে। ধান যখন ঘরে তোলা হবে তখন ধানের মধ্যে চিটার পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং ধান হেলে পড়ায় এসব ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, বাতাস এবং বৃষ্টির কারণে ধান হেলে পড়তে পারে। পাকা স্টেজে কাটতে কিছু জায়গায় কষ্ট হবে। পোস্ট হারভেস্ট ম্যানেজমেন্ট বিঘ্ন ঘটতে পারে। এছাড়াও সবজি ক্ষেত পর্যবেক্ষণ ও বীজতলার বিশেষ যত্ন নিতে হবে। বিদ্যুতের ব্যাপারে ফটিকছড়ি জোনাল অফিসের এজিএম জানান, লাইনম্যানরা কাজ করছে। দ্রুত বিদ্যুৎ স্বাভাবিক করা হবে।
ভোরের আকাশ/মি