অলসতা মানেই কাজেরপ্রতি অনীহা প্রকাশ করা। কর্ম-বিমুখতার সামগ্রিক রুপ অলসতা। অলসতার কারণে মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যার কারণে মানুষ আস্তে আস্তে অবনতির দিকে এগিয়ে যায়। আর এই অলস ব্যক্তি সহজেই সফলতার মুখ দেখতে পায় না। সকলের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠে।
অলসতার কারণে জীবনে অনেক কষ্ট আসে এবং না পাওয়ার বেদনায় ভুগতে হয় সব সময়। অলস ব্যক্তি শুধু নিজের কাছেই নন; পরিবার, সমাজ, দেশের কাছে বোঝা হয়ে যান। এমনকি আপনি অলস থাকলে নিজের জীবনসঙ্গীর কাছেও হতে পারেন অপ্রিয় ব্যক্তি। তার কাছে শুনতে হতে পারে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত কটুক্তি।
তাই সমাজ, দেশ, নিজের উন্নতির জন্য অলসতাকে পরিহার করা উচিত। অলসতাকে নিয়ে মহান ব্যক্তিরা অনেক উক্তি লিখে গেছেন।
এন্থনি রবিন্স বলেছেন- ‘কেউই সাধারণত অলস না, আসলে কিছু মানুষের জীবনের লক্ষ্যই হয় এমন ছোট, যা তাদেরকে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে না।’ আবার বিশ্বের সেরা ধনী বিল গেটস তিনি অলস ব্যক্তিকে খোজেন।
তিনি বলেন, ‘আমি কঠিন কাজ করার জন্য একজন অলসকে নিয়োগ করেছি, কারণ অলস ব্যক্তি অবশ্যই কাজটি করার সহজ উপায় বের করবে।’ গবেষণার মাধ্যমে কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করলে অলসতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হতে পারে। যার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন উৎপাদন ও শৃঙ্খলার মানসিকতা। চলুন যেনে আসি কীভাবে অলসতা কাটাবেন।
লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে: প্রত্যেক কাজের সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। ব্যর্থতার ভয়ে কাজ ফেলে রাখা যাবে না। তাহলে কাজেরপ্রতি অলসতা চলে আসবে। কাজে বিলম্ব করার কারণে আপনার সময় কমে যাবে এবং আপনার ভেতর ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়াবে, উদ্বিগ্ন করে তুলবে। বড় কাজ দেখে দূরে না রেখে কাজকে ছোট ছোট আকারে ভাগ করে করুন, দেখবেন বড় কাজগুলোয় আর অলসতা আসবে না। যার ফলে আপনার সফলতার দেখা মিলতে পারে।
নিজের কাজে নিজেকে পুরস্কৃত করতে হবে: নিজের কাজের জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করতে পারলে দেখবেন আপনার কাজের প্রতি অলসতা চলে যাবে। কর্নেল বিশ্ব বিদ্যালয় কাইটলিনয়ুলির নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে তাৎক্ষণিক কোনো পুরস্কার কঠোর পরিশ্রম করতে উদ্বুদ্ধ করে। অথাৎ কঠিন কাজ ফেলে রাখার মাধ্যমে অলসতা তৈরি হয়, তাই পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যথা সময়ে কাজের পুরস্কার দিতে পারেন। তবে সময়ও কোনো পন্থায় কাজ করবে তাও ভাবতে হবে। সুতারাং আপনি দেখতে পারেন আপনার ক্ষেত্রে কোনটি কাজ করতে পারে।
অগ্রিম পরিকল্পনা করতে হবে: অগ্রিম পরিকল্পনা কাজের গতিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। অগ্রিম পরিকল্পনার মাধ্যমে আগে থেকে জানা থাকে যে কীভাবে করতে হবে। কতদূর করতে পারলে কাজ শেষ হবে। আপনি যদি পরিকল্পনা না করে কোনো কাজ করেন বা আজ না কাল করব বলে ফেলে রাখেন তাহলে দেখবেন আপনার কাজ অল্প অল্প করে জমে যাবে অনেক হয়ে যাবে। তখন আপনার কাজের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হতে শুরু করবে। কেউ আপনাকে যদি কোনো কাজ বা সপ্তাহে কোনো মিটিং এর কথা বলে আপনি বলুন আজই কাজটি সেরা ফেলার জন্য। আমেরিকার মনোবিদ পিটার গলউইটজার এ কৌশলের ওপর ৯৪টি সমীক্ষা পর্যালেচনা করে জানতে পারেন যে, যারা এই কৌশলটি অনুসরণ করে তারা অন্যদের চেয়ে লক্ষ্য অর্জনে ২/৩ গুণ বেশি দূঢ় থাকে। তাই নিজেকে অলস থেকে দুরে রাখার জন্য অগ্রিম পরিকল্পনা চলুন।
নিজেকে চাপমুক্ত রাখুন: কোনো কাজ করার আগে নিজেকে চাপে রাখা বা কাজটি আমার জন্য চাপ হয়ে যাবে ভেবে কাজটিকে দুরে রাখলেই আপনাকে অলসতা আপনাকে হাতসানি দিয়ে ধরবে। তাই নিজেকে চাপমুক্ত রাখতে হবে। যতটা সম্ভব কাজকে সহজভাবে নিত পারেন। আপনি কাজের পরিকল্পনা রাতেই চূড়ান্ত করে রাখতে পারেন অথবা কোথাও লিখে রাখতে পারেন তাহলে দেখবেন কাজটি সহজ মনে হবে। তাহলে আপনি প্রথমেই ধারণা পেয়ে যাবেন আমাকে কি দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
নিজের প্রতি সহমর্মিতা দেখান: নিজের কাজের প্রতি সহমর্মিতা দেখালে অনেকটা ইতিবাচক ধারনা তৈরি হয়। ফলে নিজেকে পরবর্তী কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে নিজের আলসেমি জনিত কারণে নিজের পড়া ঠিকমতো করতে পারেনি এবং নিজেকে ক্ষমা করে দেয় পরবর্তী সময় ভালো করে। তাই আমাদের নিজেদের প্রতি কিছুটা সহমর্মিতা দেখানো উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুমাতে ও বিশ্রাম নিতে হবে: পর্যাপ্ত ঘুমালে ও বিশ্রাম নিলে কাজের সক্ষমতা বাড়ে কাজের অলসতা কমে যায়। ঘুমানোর আগে স্ক্রিন টাইম এড়িয়ে চলা এবং দিনের ঘুম সিমিত করলে অলসতা অনেকটা কমে যায়। পযার্প্ত ঘুমালে আপনার সতেজ বোধ হবে যার মাধ্যমে অলসতা দূরে রাখতে পারবেন।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে: সকল সুখের মুল সাস্থ্য ভালো থাকা। আপনার সাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তাহলে আপনি কোনো কাজ করে আরাম অনুভোব করতে পারবেন না। আর নিজেকে সুসাস্থ্য বজায় রাখতে হলে নিয়মিত ব্যায়েমের বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে আপনার শরীরের শক্তির মাত্রা কয়েকগুণ বাড়াতে পারে, যার মাধ্যমে আপনার মেজাজ, উদ্বেগ ও চাপ কমিয়ে দিতে পারে। অথ্যাৎ ব্যায়াম হলো অলসতা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি নিশ্চিত উপায় হিসেবে ধরতে পারেন। আপনি অলসতাকে দূরে রাখতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন।
প্রেটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে: প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে অনেকটা আলসেমি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। কারণ প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে শরীরের শক্তি বাড়ায় এতে অলসতা ভাব কমে যায়। প্রোটিনযুক্ত খাবার হিসেবে আপনারা খেতে পারেন দই, কাজুবাদাম, ডিম, টুনা মাছ ইত্যাদি।
নিজের সম্পর্কে কথা বলুন: নিজের সম্পর্কে কথা বলুন। আপনার কোথায় সমস্যা আছে সেটা বের করুন এবং সেটাকে কীভাকে সমাধান করা যায় ভাবুন। নিজেকে সময় দিন।
মানসিকতার বিকাশ ঘটান: অনেক কাজ আমরা পিছিয়ে থাকার কারণ মানসিকতার বিকাশ না ঘটানো। কোনো কাজ করার আগে কাজটি করার জন্য আমাদের মানসিকতা তৈরি করা উচিত তাহলে দেখবেন কাজটি আপনার জন্য সহজ হয়ে গেছে। ইতিবাচক মানসিকতা গড়ার চেষ্টা করুন, এক্ষেত্রে শেখার ও কাজের উন্নতিতে ফোকাস দিন। যেকোনো কাজে নিরুৎসাহিত হওয়ার পরিবর্তে, তা সমাধান করার চেষ্টা করুন।
ভোরের আকাশ/নি