logo
আপডেট : ২২ নভেম্বর, ২০২৩ ০৯:২৭
ময়মনসিংহে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে পাওয়া যায়না তথ্য
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে পাওয়া যায়না তথ্য

ময়মনসিংহের ভালুকায় ৭১ নম্বর কাদিগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুপুর আক্তারের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তোলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্য অধিকার আইনের সুফল না পাওয়ায় রহস্যের দানা জট বেঁধেছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারী ওই বিদ্যালয়ের জমি দখল ও বাঁশ কেটে নেয়ার বিষয়ে সাইফুল ইসলাম নামের একজনের বিরুদ্ধে ভালুকা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহনাজ আক্তার। কিন্তু ওই অভিযোগের বিষয়ে কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এরপর গত ২৩ মে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুপুর আক্তারকে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফোনে ডেকে নিয়ে ওই বিষয়ে আরেকটি অভিযোগ নেয়া হয়।

 

পরদিন এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহমেদ সহকারী কমিশনার ভূমিকে ল্যান্ড সার্ভে করার সুপারিশ করেন। এর মধ্যে ওই বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক নির্মাণের জন্য একটি বরাদ্দ আসে। ফলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষ ভেঙ্গে ওয়াশব্লক নির্মাণের জায়গা করে দেন এবং পাশেই কক্ষ ভাঙ্গার ইট মজুত করে রাখেন।


অপরদিকে ওই অভিযোগের বিষয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইফুল ইসলাম তার সহযোগী আবুল কালামকে দিয়ে নুপুর আক্তার ও তার স্বামী পুলিশের উপপরিদর্শক সালেহ ইমরানের নামে বিদ্যালয়ের জমি জবর দখল ও অনুমতি ছাড়া ভবন ভেঙ্গে মালামাল আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া আক্তারকে আহবায়ক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহম্মেদ। কমিটিকে সময় দেয়া হয় সাত কার্যদিবস।

 

গত ১৭ জুলাই ভালুকা প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান পাঠান ও স্থানীয় সাংবাদিক, ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও অভিযোগকারী কালামের উপস্থিতিতে সরেজমিনে তদন্ত করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। ওই দিনই সরকারী সার্ভেয়ার দিয়ে বিদ্যালয়ের জমি মাপঝোঁক করে সীমানা চিহ্নিত করে দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া আক্তার।


এদিকে হঠাৎ করে কোনো ছাড়াই নুপুর আক্তারকে তার পদ থেকে সরিয়ে মাহমুদা পারভীন নামে আরেকজনকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। মাহমুদা দ্বায়িত্ব নিতে না চাইলে জোর করেই দ্বায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়। এতেই বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, অবিভাবকসহ স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন উঠে একটি পক্ষকে খুশি করতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে নুপুরকে পদ থেকে সরিয়ে দেন টিইও এবং এটিও। এর ফলে এটিইও এবং এটিও'র বিরুদ্ধে ঝাড়ু নিয়ে মানববন্ধন ও মিছিল করে এলাকাবাসী।

 

এদিকে আবুল কালামের দেয়া অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনে কি এসেছে তা জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করে পুলিশ কর্মকর্তা সালেহ ইমরান, তার স্রী নুপুর আক্তারসহ একাধিক সাংবাদিক। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় উপজেলা ইউএনও'র কাছে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে পুলিশ কর্মকর্তা সালেহ ইমরান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সুমন ইউএনও তথ্য না দিলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আপিল করা হলেও তথ্য দেওয়া হয়নি!


বিদ্যালয়ের জমিদাতা, পিটিআই কমিটির সভাপতি এবং অভিভাবক মাজিবুল হক রুমি তালুকদার জানান, এখানে পরিত্যক্ত ভবনের একটি রুম ভাঙ্গা হয়েছে। মূলত একটি ওয়াশব্লক করার কারণে এটি ভাঙ্গা হয়েছে। এটা অফিসিয়াল যত ফরমালিটি আছে এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এটিও স্যারসহ সবাই জানে ভাঙ্গা হয়েছে। তবুও হয়রানি করতে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে।

 

পুলিশ কর্মকর্তা সালেহ ইমরান জানান, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে আমার মানহানি করে যাচ্ছে একটি পক্ষ। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার বিরুদ্ধে ইউএনও অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন জানার অধিকার আমার আছে। অথচ ইউএনও অফিস থেকে আমাকে ফোন করে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করার কথা বলা হলেও দুই দুইবার কোন কারণ ছাড়াই তদন্ত প্রতিবেদন দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে।

 

সাইফুলের জামাতা রমিজ খানও খোদ প্রতিবেদকের কাছে টিইও-এটিইওর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। যদিও তিনি স্বীকার করেন, স্কুলের জমিতে থাকা কিছু বাঁশ টিইওকে জানিয়েই তারা কেটে নিয়েছেন। তিনি বলেন, নুপুর আক্তারকে তার পদ থেকে সরানোর জন্য টিওকে আমরা কোনো টাকা দেইনি। তবে আমরা মনে করি, স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক থাকা স্বত্বেও নুপুর আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব দেওয়ায় তার কাছ থেকেই আর্থিক সুবিধা নিয়েছিল টিইও। যদিও এখন নুপুর আক্তারকে এখন পদ থেকে সরানো হয়েছে।

 

সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি চাই বিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো থাকুক। যে ভালোভাবে দ্বায়িত্ব পালন করবে তাকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে বসানো হোক। নুপুর আক্তারের বিষয়ে আর মন্তব্য করতে চাইনা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আমি কাউকে শিখিয়েও দেইনি।

 

ইউএনও কার্যালয়ে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়া আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি জেনে বুঝে অভিযোগ দিয়েছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে এটি করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে কিনা এটি কর্তৃপক্ষের বিষয়।

 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ জানান, আমাকে বার বার সন্দেহ করে বলা হচ্ছে একটি পক্ষকে খুশি করতে নুপুর আক্তারকে তার পদ থেকে সরিয়েছি। আসলে এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন কেন প্রকাশ করা হলোনা তা উর্ধতন কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।

 

ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন ডিসি স্যার কাছেপাঠিয়ে দিয়েছি।

 

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আমার অফিসে রয়েছে। আমি প্রতিবেদন পড়ে দেখবো। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন যেহেতু করেছে, নিশ্চই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি