logo
আপডেট : ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:০৭
চুরি থামছে না কুমিল্লা রেলপথে, পুলিশ দুষছে টোকাইদের
কুমিল্লা প্রতিনিধি

চুরি থামছে না কুমিল্লা রেলপথে, পুলিশ দুষছে টোকাইদের

রেললাইনের নাটবল্টু চুরি হচ্ছে

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার বিভিন্ন স্টেশন এলাকায় একের পর চুরি ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে রেলপথে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রেলে কর্মরতরা। বারবার চুরির ঘটনার পেছনে নাকশকাতা আঁচ করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। যদিও এসব ঘটনায় ‘টনক নড়েছে’ না পুলিশের, মাদক বিক্রেতা ও টোকাইদের দুষছেন তারা।

 

রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লার বিভিন্ন স্টেশন থেকে রেলপথের সিগন্যাল পয়েন্ট মেশিনের মোটর চুরির হিড়িক পড়ে গেছে। এরই মধ্যে প্রায় ‘চার কোটি টাকার’ মোটর চুরি হলেও জড়িতদের কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি। এমনকি উদ্ধার হয়নি চুরি যাওয়া একটি মোটরও।

 

পুলিশ বলছে, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাদকবেসী ও টোকাইরা এসব নাটবল্টু চুরি করে ভাঙারি দোকানে নিয়ে বিক্রি করে দেয়।’

 

ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সম্প্রতি আবার রাতের আঁধারে বিভিন্ন রেলপথের নাটবল্টুসহ নানা ধরনের যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় লাকসাম রেলওয়ে থানায় মামলা হলেও জড়িতরা রয়েছেন ‘ধরাছোঁয়ার বাইরে’।

 

এ বিষয়ে জানতে লাকসাম রেলওয়ে থানার (জিআরপি) ওসি মুরাদুল্লাহর বাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি স্থানে রেললাইনের নাটবল্টুসহ যন্ত্রাংশ খুলে নেয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় এরই মধ্যে থানায় একটি মামলা হয়েছে ও আরও একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। আগের কয়েকটি মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।’

 

চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, সম্প্রতি কুমিল্লার ময়নামতি রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মেইন লাইনের আট সেট স্লাইড চেয়ার প্লেট, লক প্লেট, টি বোল্ট কে ক্লিপ উইথ নাট, ৪৮৮ পিস স্ক্রু স্পাইক খুলে নিয়ে যায়।

 

এ ঘটনায় ওই স্টেশন এলাকায় রেলওয়ের তদারকির দায়িত্বে থাকা ‘কি-ম্যান’ জহিরুল ইসলাম তালুকদার বাদী হয়ে লাকসাম রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেন অজ্ঞাতদের আসামি করে। যদিও এসব ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সর্বশেষ ১৫ ও ১৭ নভেম্বর রাতের আঁধারে ওই স্টেশনসহ আশপাশসহ আরও বিভিন্ন স্টেশন এলাকায় কয়েকশ নাটবল্টু দুর্বৃত্তরা খুলে নিয়ে যায়।

 

এর আগে, গত ২৬ আগস্ট কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকা থেকে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোর টুল ভ্যানের ‘কোটি টাকার’ মালামাল চুরি হয়। দুঘর্টনাকবলিত ট্রেনের বগি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বহন ও সংরক্ষণে এই বিশেষ বগিটি ব্যবহার করা হয়।

 

এ ঘটনায় ওই রাতেই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন লাকসাম রেলওয়ে জংশনের হেড টিএক্সআর জাকির হোসেন।

 

এছাড়া এ বছরের মে মাসের বিভিন্ন সময়ে লাকসাম-আখাউড়া ডাবল রেললাইন প্রকল্পে পাঁচটি স্টেশনের মধ্যে থাকা ৬৭টি পয়েন্ট মেশিনের মধ্যে ২৫টি পয়েন্টের মোটর চুরি হয়। কুমিল্লার লালমাই উপজেলার আলী শহর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা লালমাই ও ময়নামতি, কুমিল্লা সদরের কুমিল্লা এবং বুড়িচংয়ের রাজাপুর স্টেশন এলাকা থেকে ওই ২৫টি সিগন্যাল পয়েন্ট মেশিনের মোটর চুরি হয়।
চুরি হওয়া ওই ২৫টি পয়েন্ট মেশিনের মোটরের দাম ছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা।

 

এসব ঘটনার পরবর্তীতে নতুন করে ওই সব স্থানে মোটর বসানো হয়েছিল। এতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয় রেলওয়ের।

 

এসব বিষয়ে কুমিল্লা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একের পর এক চুরি হয়েই যাচ্ছে। কিন্তু এখনও রেলওয়ে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে বেশির ভাগ নাটবল্টু চুরি হয়েছে মেইন লাইন থেকে। যার কারণে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকির বিষয়টি তো রয়েছেই। এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

 

একের পর এক নাটবল্টুসহ বিভিন্ন মালামাল চুরির পেছনে নাশকতার কোনো চেষ্টা আছে কি-না এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা নাটবল্টু লাগিয়ে ওয়েল্ডিং (ঝালাই) করে দিচ্ছি। বারবার লাইন চেক করা হচ্ছে। এরপরও প্রায়ই চুরি হচ্ছে। এখনই ভালোভাবে তদন্ত করে দেখতে হবে রেলওয়ে পুলিশকে। রাতের বেলায় রেলপথে পুলিশের টহলও বাড়ানো দরকার।

 

লাকসাম ও কুমিল্লা রেলওয়েতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, এসব ঘটনা থেকেই বোঝা যায় রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতোটা দুর্বল। কারণ দুর্গম কোনো এলাকা থেকে এসব চুরির ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি চুরি হয়েছে বিভিন্ন স্টেশন এলাকা থেকে।

 

এদিকে রেলপথে ঘন ঘন চুরি, নাশকতা চেষ্টার অংশ কি-না জানতে চাইলে লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি মুরাদুল্লাহ বাহার বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাদকবেসী ও টোকাইরা এসব নাটবল্টু চুরি করে ভাঙারি দোকানে নিয়ে বিক্রি করে। আমার কাছে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো তেমনই মনে হচ্ছে। আমরা প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করছি। তবে চুরি ঠেকাতে টহল বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে আশ্বস্ত করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। পাশাপাশি দ্রুতই জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি