logo
আপডেট : ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০৯:৪৪
রাজধানীতে উচ্চ প্রযুক্তির সিসি ক্যামেরার জাল
ইমরান খান

রাজধানীতে উচ্চ প্রযুক্তির সিসি ক্যামেরার জাল

ইমরান খান: রাজধানীতে আগুন-সন্ত্রাস ও নাশকতা ঠেকাতে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে পুলিশ। প্রকাশ্য ও গোপনে হাজার হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা বিছানো হয়েছে ঢাকাজুড়ে। পুলিশের সিসিটিভির পাশাপাশি রয়েছে ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও সিসি ক্যামেরা। এসব সিসি ক্যামেরার কল্যাণেই ধরা পড়ছে নাশকতাকারীরা।

 

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতির পর রাজধানীসহ সারাদেশে যে অগ্নিসন্ত্রাস হয় তার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতেই কার্যকর এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। যার কারণে নাশকতাকারীরা সহজেই চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারের আওতায় আসছে।

 

জানা গেছে, ক্যামেরাগুলো উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন। যেমন মোশন ডিটেকশন, ইনফ্রারেড নাইট ভিশন এবং হাই-রেজ্যুলেশন ইমেজিং দিয়ে সজ্জিত। অন্ধকার কিংবা খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও এসব সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ঝঁকঝঁকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের স্থাপনকৃত প্রায় ৩৯ লাখ টাকার সিসি ক্যামেরা ধ্বংস করা হয়।

 

পুলিশ কাকরাইল, পল্টন, দৈনিক বাংলাসহ এর আশপাশের এলাকায় এই ক্যামেরাগুলো স্থাপন করেছিল। কিন্তু সমাবেশ ঘিরে বিএনপি কর্মীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, পুলিশ হত্যা, অগ্নিসংযোগ সবমিলিয়ে তাদের যে তান্ডব তা থেকে সিসি ক্যামেরাগুলো রক্ষা হয়নি।

 

তিনি বলেন, ওই সমাবেশের পর থেকে আমরা লক্ষ্য করলাম তারা যে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন সেই কর্মসূচিকে ঘিরে অগ্নি সন্ত্রাস শুরু হলো। যানবাহনে আগুন দেয়া হচ্ছে। আমরা ওই ক্যামেরাগুলো ধ্বংস হলেও নতুন করে ক্যামেরা স্থাপন করেছি। বিভিন্ন জনবহুল এলাকা থেকে শুরু করে আমাদের টার্গেটে থাকা স্থানগুলোকে ঘিরে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।

 

ডিএমপির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, হয়তো কোথায় ক্যামেরাগুলো দেখা যায় আবার কোথায় দেখা যায় না। আমরা আমাদের সুবিধা অনুযায়ী সেগুলো লাগিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন। এ সিসি ক্যামেরা আমাদের অনেক হেল্প করছে। আগুন সন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত বা যারা আগুন লাগাচ্ছে তাদের আমরা সহজেই চিহ্নিত করছি এবং তাদের গ্রেপ্তারের আওতায় আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অপরাধীর নিজেকে নির্দোষ দাবি করার কোনো সুযোগ থাকছে না।

 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, সিসি ক্যামেরা আমাদের নানাভাবে সহায়তা করছে। মূল অপরাধীকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করছে। গত ২৮ অক্টোবরের হামলা ও নাশকতাসহ পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও নাশকতার সঙ্গে জড়িত সর্বমোট ৬৯০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এর মধ্যে অনেকেই সিসি ক্যামেরায় চিহ্নিত হয়ে ধরা পড়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, এছাড়া গত ২৩ নভেম্বর এক রাতেই রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় বিএনপির সক্রিয় সদস্য আলী কায়সার পিন্টুসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক অগ্নিকান্ডের প্রায় ২৫০টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকা সিটিতে শতাধিক যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মিরপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি।

 

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে লাগাতার হরতাল অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে নাশকতা চালানো হচ্ছে। নাশকতা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে আমরা অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরার আওতায় এনেছি পুরো রাজধানী। বিশেষ করে আগুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা নির্দিষ্ট স্থানে সেগুলো স্থাপন করেছি। এর বাইরেও শত শত সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।

 

তিনি বলেন, রাজধানীর মিন্টো রোড, মগবাজার, কাকরাইল সড়ক, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট হয়ে প্রেসক্লাব, গুলিস্থান, দৈনিক বাংলা থেকে শুরু করে মতিঝিল, টিকাটুলি হয়ে একেবারে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া হয়ে সাইনবোর্ড সড়ক, যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তগোলা, বাবুবাজার, পুরাণ ঢাকার নয়াবাজার, শাহবাগ হয়ে ফার্মগেট, পুরো মিরপুর, মহাখালী, বনানী হয়ে উত্তরা, কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে বসুন্ধরা হয়ে বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক হয়ে রাজারবাগ এবং এপারের কাকরাইল, নয়াপল্টন অর্থাৎ পুরো নগরীজুড়েই অত্যাধুনকি সিসি ক্যামেরার জাল বিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

 

এসব সিসি ক্যামেরা লাগানোর ফলে যারা যানবাহনে আগুন লাগাচ্ছে এদের সহজেই চিহ্নিত করা যাচ্ছে। আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

 

প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবরের বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে লাগাতার হরতাল অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। আজ রোববার থেকে দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি রয়েছে। আর এ কর্মসূচিকে ঘিরে যানবাহনে দেয়া হচ্ছে আগুন। মূলত আগুন সন্ত্রাস রুখতে পুলিশের নানা পদক্ষেপের মধ্যে এটি একটি।

 

ভোরের আকাশ/নি