logo
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:৫২
বারোমাসি তরমুজ, সফল গারো পাহাড়ের চাষিরা
শেরপুর প্রতিনিধি

বারোমাসি তরমুজ, সফল গারো পাহাড়ের চাষিরা

মানিককূড়ায় মালচিং পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক

পাহাড়ি জেলা শেরপুরে ভিয়েতনামের গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাকবেবি জাতের বারোমাসি তরমুজ চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন কৃষক আমিনুল ইসলাম। দেশির চেয়ে এ জাতের তরমুজ খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তাই বাজারে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদাও ব্যাপক। অল্প পরিশ্রম ও কম বিনিয়োগে ফলন এবং দাম বেশি হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন এ উদ্যোক্তা। তার সফলতায় এলাকার অন্য কৃষকরাও বারোমাসি হাইব্রিড তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

 

সরেজমিনে নলকূড়া ইউনিয়নের মানিককূড়া গ্রামের আমিনুল ইসলামের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, মালচিং পদ্ধতিতে কয়েক জাতের রঙিন তরমুজ চাষ করেছেন এ কৃষি উদ্যোক্তা। বাগানের মাচায় হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের তরমুজ শোভা পাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন বাগানে। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও দর্শনার্থীরা।

 

আমিনুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের পাহাড়ি এ এলাকায় ধানের পাশাপাশি অল্প কয়েকজন সবজির চাষ করেন। উপজেলা কৃষি অফিসার হুমায়ুন স্যারের পরামর্শে ১৩ শতাংশ জমিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ করেছি।

 

তিনি ভোরের আকাশকে আরও জানান, জমি তৈরি ও অন্যান্য খাতে তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি মাচায় ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের তরমুজ ধরেছে। পাইকারি দরে প্রতি কেজি তরমুজের বাজারমূল্য ৮০ টাকা। এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এখনও বিক্রয় করার মতো প্রচুর ফল বাগানে আছে। সব খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ টাকার বেশি আয় হবে বলে জানান এ কৃষি উদ্যোক্তা।

 

কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) অনুযায়ী, তরমুজ সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসে ওঠে। এটাই তরমুজের প্রধান মৌসুম। কিন্তু সম্প্রতি এ দেশের বাজারে এ সময় ছাড়া অন্য সময়েও তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে এর নাম দিয়েছেন ‘বারোমাসি তরমুজ’। গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজের ওজন হয় এক থেকে দেড় কেজির মধ্যে আর ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজ দেড় থেকে আড়াই কেজি হয়। তাই মাচায় ঝুলে থাকা ফলগুলো নেটের ব্যাগে বেঁধে রাখতে হয়।

 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, বারোমাসি তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন আমিনুল। সঠিক উপায়ে চাষাবাদ করতে পারলে ভিয়েতনামের কয়েকটি জাতের তরমুজের ফলন ভালো হয়। তরমুজের মৌসুমের পরেও ফলন হয় বলে এটি লাভজনকও বটে। আমিনুলের সফলতায় উপজেলার আরও অনেকেই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাত্তার মন্ডল ভোরের আকাশকে বলেন, ধান আমাদের প্রধান ফসল। কিন্তু বর্তমানে ধান আবাদে কৃষকদের তেমন একটা লাভ থাকে না। অনেক কৃষক এখন ফল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষকরা ফল চাষের জন্য প্রতিটি সম্ভাব্য জায়গা ব্যবহার করছেন। গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফলের বাগান। আমাদের দেশের আবহাওয়া বেশ কিছু বিদেশি ফল চাষের জন্য অনুক‚ল।

 

কৃষিবিদ ড. মোহিত কুমার দে বলেন, শিক্ষিত তরুণরা কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। অনেকেই তরমুজ উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন। হাইব্রিডের মধ্যে হানিডিউ, ব্ল্যাককুইন এবং বাংলালিংকসহ কয়েকটি জাতের তরমুজ এখন বেশি চাষ হচ্ছে। তরমুজের পুষ্টিগুণও দারুণ।

 

এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ তাসলিমা আক্তার উর্মি বলেন, তরমুজে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, এমিনো অ্যাসিড ও অ্যান্টি-অক্সিজেনের মতো নানা উপাদান। তরমুজ শরীরে পানির অপূর্ণতা পূরণেও বেশ সহায়ক। এ ফল ক্যানসারের মতো রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর। তরমুজ ওজন কমাতে সহায়তা করে। তেমনি শরীরের কার্যক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও বেশ সহায়ক। তরমুজের বিটা ক্যারোটিন, ম্যাগানিজ ত্বকের জন্যও বেশ উপকারী।

 

ভোরের আকাশ/নি