logo
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ২০:০০
শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র, সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় টেন্ডার বাণিজ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক

শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র, সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় টেন্ডার বাণিজ্য

ইমরান খান: সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডার বাণিজ্য করে সরকারের প্রায় ১১ কোটি টাকা ক্ষতি করে নিজেরা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এই চক্রে জড়িত রয়েছে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। সরকারি এসব কর্মচারীদের সহযোগিতায় সন্ত্রাসী কায়দায় টেন্ডার বাণিজ্য করছে চক্রটি। বছরের পর বছর এভাবেই শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন অধিপ্তরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। তার আগে এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।

 

বন অধিদপ্তরে দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর রংপুর সামাজিক বনায়ন বিভাগ প্রায় ২ হাজার ৩০০ লট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে। ১৮ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত দরপত্র গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ১৫ হাজারের অধিক দরপত্র বিক্রি হলেও রহস্যজনকভাবে মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার দরপত্র জমা হয়। কারণ হিসেবে অভিযোগ করা হয়েছে, রংপুরের আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়দানকারী ডিজেল আহমেদ ও তার সহযোগীরা মিলে অন্যান্য দরপত্র ক্রেতাদের ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি দিয়ে দরপত্র জমাদানে বিরত রাখেন। যারা দরপত্র জমা দিয়েছেন তারা ডিজেল আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা করে দরপত্রে অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে যারা দরপত্র পাবেন তারা প্রত্যেকে প্রতিটি লটে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ডিজেল আহমেদকে প্রদান করবেন বলে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।

 

বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে টেন্ডার বাণিজ্য করছেন একসময়ের বিএনপির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা নামধারী ডিজেল আহমেদ। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ করিম, হেডক্লার্ক শাহ আলম ও অফিস সহকারী গোপাল বাবুসহ আরও কয়েক জন এই ডিজেল চক্রের অপকর্মে সহযোগিতা করেন। অন্যান্য দরপত্র ক্রেতারা দরপত্র জমা দিতে গেলে সশস্ত্র ডিজেল বাহিনী তাদের মারধর করে বের করে দেয়। গত ১৬ নভেম্বর এমন ঘটনা ঘটে রংপুর বন বিভাগের অফিসে। বন বিভাগের অফিস থেকেই সিন্ডিকেটের লোকজন ডিজেলকে খবর দেয়। এরপর তার লোকজন ওই সেখানে পৌঁছে সন্ত্রাসী কায়দায় দরপত্র ক্রেতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দরপত্র জমা দিতে দেয়নি।

 

অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও রংপুর বন বিভাগের অফিসে দরপত্রের খোঁজ নিতে গিয়ে হুমকি-ধমকি, অপহরণ ও মারধরের শিকার হয়েছেন একজন দরপত্র ক্রেতারা। এ ঘটনায় রংপুর মেট্টোপলিটনের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ভুক্তভোগী।

 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুন সামাজিক বনায়নের লট বিক্রির জন্য একটি দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রংপুর বন বিভাগ। গত ১১ সেপটেম্বর এ বিষয়ে খোঁজ নিতে রংপুর বন বিভাগে যান মো. শিবলী সাদিক জিম (১৯) ও তার শ্বশুর মো. শাহজাহান আলী (৫০)। তখন বন বিভাগের কর্মচারি গোপালবাবু ও হেডক্লার্ক শাহ আলম তাদের বসিয়ে রেখে খবরটি ডিজেল আহমেদকে জানিয়ে দেন। এ সময় শিবলী সাদিকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করে হুমকি দিয়ে ডিজেল আহমেদ তাদের চলে যেতে বলেন। এ সময় প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে শিবলীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ডিজেল। কিন্তু তারা অফিস ত্যাগ না করায় এর কিছুক্ষণ পরে ডিজেলের লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় বন অফিসে গিয়ে শিবলী সাদিক ও তার শ্বশুর শাহজাহান আলীকে বন বিভাগের কর্মচারী গোপাল বাবু ও শাহ আলমের সামনে থেকে ধরে গণেশপুর ক্লাব মোড়ের মসজিদের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের বেদম মারধর করা হয়। তাদের ফোন কেড়ে নেয়া হয়।

 

উল্লেখ্য গত ১৩ নভেম্বর দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানা সদরের ভবানীপুর বিটের ২৯৭টি লটের উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে সবার উপস্থিতিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দরপত্র প্রদান করা হয়। এতে প্রতি সেফটি কাঠের গড় মূল্য ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত ডাক উঠে। অন্যদিকে, রংপুর সামাজিক বনায়নে প্রতি সেফটিকাঠের গড় মূল্য মাত্র ৩২০ থেকে ৪৩০ টাকায় দরপত্র প্রদান করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে প্রতিটি লটে ২৪০ থেকে ২৬০ সেফটি কাঠ পাওয়া যায়। সেই হিসেবে ২ হাজার ৩০০ লটের গড়ে কাঠের পরিমাণ ৫ লাখ ৭৫ হাজার সেফটি। হিসাব অনুসারে দিনাজপুরের তুলনায় রংপুর সামাজিক বনায়নে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে সরকার প্রায় ১১ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বন অধিদপ্তরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক ড. মো. জগলুল হোসেন বলেন, একটি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য আমাদের সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক (ব্যবস্থাপনা বিভাগ) মাহমুদুল হাসানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তফন্ত শেষ হলে ৩০ নভেম্বর তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

 

ভোরের আকাশ/আসা