logo
আপডেট : ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ ১৩:০৭
ঋতু বদলে মানুষ অসুস্থ হয় কেন?
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঋতু বদলে মানুষ অসুস্থ হয় কেন?

বাংলাদেশ ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত। নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে যার অবস্থান । তাই আবহাওয়া খুব একটা চরম উষ্ণ বা শৈত্য নয় । বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ হওয়ার কারনে ঋতু পরিবতনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে আবহাওয়ায়। আর এই কারনে শীত ও গরমের শুরুতেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ছাড়া ও অনেক অসুখ বিসুখ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

 


বিশেষজ্ঞদের মতে কেবলমাত্র মৌসুমভেদে বদলে যাওয়া তাপমাত্রার কারনেই এমনটা হয় না। বরং তাপমাত্রার পরিবর্তনে কয়েক ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে। আর এই কারনেই কয়েকধরনের ভাইরাস কাবু করে ফেলে। প্রকৃতি বদলের সাথে সাথে অসুস্থতার মাত্রাটিও বেড়ে যায়। যেমন এখন ঠান্ডা একটা আবহাওয়া টের পাচ্ছি আমরা। দিনের সময় কিছুটা গরম অনুভূত হলেও সকালে ও রাতে বেশ ভালোই শীত শীত অনুভূত হয়। আর যখনই বেলা বাড়তে থাকে রোদের মাত্রাটাও বাড়ে। কখনও গরম আবার কখনও ঠান্ডা এই কারনেই অনেক বেশী প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরে।

 

ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায়। আর শীত আসলে বাতাসের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে আদ্রতাও কমে যায়। যা আমাদের শ্বাসনালীর স্বাভাবিক কর্মপ্রাক্রয়াকে বাধাগ্রস্ত করে যার কারনে আমাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ গুলো বেড়ে যায়। এজন্য এই সময়টাতে সর্দি, কাশি, টনসিল, ভাইরাল ফিবার, সাইনোসাইটিস, হাঁপানি, অ্যাজমা ও বাচ্চাদের নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডায়রিয়া সহ নানা অসুখের প্রভাব বাড়ে।

 

এছাড়াও এইসময় নাক বন্ধ, নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, দূর্বল লাগা, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
শীতের শুষ্কতায় অনেকের ত্বক ফেটে যায়, এবং সবচেয়ে বিপদে পড়ে চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। কারণ এই সময়টাতে চর্মরোগের সমস্যা হয়ে যায় দ্বিগুণ। শীত খুব তীব্র হলে হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে হৃদযন্ত্রের রক্তনালী সংকুচিত হয়ে।

 

শীতের শুরুতে মশার উপদ্রব বেড়ে যায় তাই মশাবাহিত রোগ থেকে সাবধান।
আর গ্রীষ্মে এ ধরনের অসুস্থতার উদয় হয় গুটি কয়েক কারণে। ওই সময়টাতে পরিবর্তনশীল প্রকৃতি, ঘাস ও বিভিন্ন ফুল ও ফলের পরাগের রেনু বাতাস ও বিভিন্ন কীটপতঙ্গের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যার সংস্পর্শে এলার্জি দেখা দেয় সাথে একাধিক সংক্রামক রোগ। তবে গরমে এসবের প্রকোপ ততটা থাকে না যতটা না শীতে দেখা দেয়।

 

ঋতু পরিবর্তনে মানুষ অসুস্থ হয় যে কয়েকটি কারণে, তার মধ্যে রয়েছে;

# পুষ্টির অভাব: ঋতুজনিত সংক্রামক রোগে তারাই বেশী ভুক্তভোগী যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল বিশেষ করে বাচ্চা ও বয়স্কগণ এই তালিকায় শীর্ষে । ঋতু পরিবর্তনের সাথে মানুষের পুষ্টির চাহিদারও পরিবর্তন ঘটে। আর এই চাহিদা পূরনে ব্যর্থ হলে পুষ্টির অভাব দেখা দেয় যার কারণে দেখা দেয় অসুস্থতা ।

 

# অসংখ্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার: ঠান্ডা আবহাওয়া ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বন্ধুসুলভ পরিবেশ সৃষ্টি করে । যা তাদের বংশবিস্তারে ও অস্তিত্ব ধরে রাখতে সাহায্য করে । আর তাই শীতের মৌসুম তাদের বিস্তারের জন্য উপোযোগী। তাই তো শীত আসার সাথে সাথে রোগ ব্যাধির পরিমান ও বেড়ে যায়। যার প্রথম স্বীকার হয় বাচ্চা ও বয়স্ক। এইসময় শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ, ডায়রিয়া ও নানান অসুখ দেখা যায়।

 

# বাতাসে আদ্রতার পরিবর্তন: ঋতু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর। এসময় বাতাসের আদ্রতার ও পরিবর্তন ঘটে। সাথে ধূলাবালি ও যোগ হয় যা বাতাসের মাধ্যমে মানুষের শ্বাসতন্ত্রে গিয়ে তান্ডব চালায়।
তাই এসময়টা আমাদের একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এবং ঋতুকালীন অসুস্থতা দূর করতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

 

# পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন: প্রচুর পরিমানে পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন । কারণ এতে করে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি ঘটবে। ঋতু পরিবর্তনের সময় শরীর সুস্থ রাখতে বাদাম খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন রয়েছে।তাই সর্দি কাশি দূর করতে ও আপনার রোগ প্রতিরোধ উন্নত করতে বেশ উপকারী। সাথে দুগ্ধ জাতীয় খাবার ও প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকায় রাখতে পারেন।

 

# হাত পরিচ্ছন্ন রাখুন: হাত পরিষ্কার করে ধোয়া ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার ঝুকি কমিয়ে ফেলতে পারে। কারন হাতের মাধ্যমেই জীবানু। একজনের মাধ্যমে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় নাকে মুখে হাত দিলে বা হাত না ধুয়ে খাবার খেলে, বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য জীবানু শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে। ফলে সাধারণ ঠান্ডা থেকে শুরু করে ফ্লু, ডায়রিয়া,আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই হাত পরিষ্কার রাখা অনেক জরুরী।

 

# পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া: আপনার ইমিউনিটি সিস্টেমকে ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া জরুরী। পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

 

# ধুমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা: ধুমপান, অ্যালকোহল ও মাদক সেবনে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও কমিয়ে দিতে পারে। যার দরুন অল্পেেতই আপনি জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন। তাই এর থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয়।

 

ভোরের আকাশ/অ