logo
আপডেট : ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ ১৪:৩০
কর্মস্থলে না এসে কিন্ডারগার্টেন চালান স্বাস্থ্য সহকারী
রয়েছে অর্থ আত্মসাতের মামলা
আশরাফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

কর্মস্থলে না এসে কিন্ডারগার্টেন চালান স্বাস্থ্য সহকারী

ইনসার্টে স্বাস্থ্য সহকারী মাসুকুর রহমান, বুল্লা কমিউনিটি ক্লিনিক ও শাহ আলম শিশু একাডেমী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড বুল্লা গ্রামের মাসুকুর রহমান (৩৫) নামের এক স্বাস্থ্য সহকারীর বিরুদ্ধে ঠিকমতো কর্মস্থলে না এসে কিন্ডারগার্টেন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে 'শাহ আলম শিশু একাডেমী' কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন মামলা (মোকাদ্দমা ধারা: ৪০৬/৪২০ দণ্ডবিধি ১৮৬০)।

 


মামলার কাগজপত্র ও বাদী সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সাল হতে স্কুলের পরিচালকগণ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্য সহকারী মাসুকুর রহমানের কাছে আর্থিক বিষয়াবলীর দায়িত্ব প্রদান করেন। ২০২৩ সনের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৬ মাসে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন ও অন্যান্য ফি বাবদ ২ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা এবং স্কুল ফান্ডে থাকা ৭০ হাজার টাকাসহ মোট ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা তার কাছে জমা আছে। স্কুলটিতে প্রায় ৩০০ এর কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।

 


সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় মামলার বাদী মো. জাবেদ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, '২০১২ সালে স্কুল শুরু থেকেই তার (মাসুক) কাছে টাকা-পয়সার দায়িত্ব ছিল। ২০২২ সাল পর্যন্ত আমাদেরকে যেভাবে বুঝ দিয়েছে সেভাবে বুঝেছি। ২০২৩ সালে এসে জুন পর্যন্ত ৬ মাসের হিসাব দেয়ার কথা বলে ঘুরাতে থাকে। আমাদের কাছে সাক্ষী, কাগজপত্রসহ সবকিছুর প্রমাণ রয়েছে।’

 


এদিকে শাহ আলম শিশু একাডেমীর প্রধান শিক্ষক শিরিনা আক্তার বলেন, 'তিনি আমার সই জাল করে অনেক কাজ করেছেন। আমি প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন আমার সই কোনোভাবেই তিনি দিতে পারে না। এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব দুর্নীতির ডকুমেন্ট রয়েছে।'

 


মামলার অন্যতম সাক্ষী রাফিয়া আক্তার ও বকুল জানান, টাকা-পয়সার বিষয়ে দুইবার মিটিং ডাকা হলেও তিনি মিটিংয়ে উপস্থিত হননি।

 


অত্র কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থী সামিয়া, আরিফুল, সবুজ দাস, পূজা রাণী দাসসহ বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, উপজেলায় তারা বৃত্তি পেয়েও কোনো অর্থ এবং সম্মাননা সনদ পায়নি তারা।

 


বৃত্তির অর্থ না পাওয়ার ব্যাপারে বিজয়নগর কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম ভোরের আকাশকে জানান, 'শিক্ষক মাসুকুর রহমানের কাছে ওই বিদ্যালয়ের বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের অর্থ এবং সনদ আমি নিজ হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি।'

 


অপরদিকে বুল্লা কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে কমপক্ষে ২/৩ দিন দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও এলাকাবাসী জানান, তাকে খুব একটা দেখা যায় না। বুল্লা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকগজ পিছনেই কমিউনিটি ক্লিনিকটির অবস্থান।

 


এই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. উসমান গনি ভোরের আকাশের প্রতিবেদককে জানান, 'আপনি তো আজ (২৮নভেম্বর) সরেজমিনে এসে দেখলেন; সে নেই। কমই দেখা যায় তাকে। এখানকার মানুষ এতোটা সচেতন না। সরকারি চাকরি করে কিভাবে এতোদিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পাঠ দিচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। আবার শুনলাম কিন্ডারগার্টেন থেকেও নাকি টাকা-পয়সা মেরে দিয়েছে।'

 


কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিদাতা মন্টু পালের বংশধর গোপাল চন্দ্র পাল বলেন, 'আমার জেঠামশাই এই জায়গা দান করেছে। শেখ হাসিনা খুব সখ কইরা কমিউনিটি ক্লিনিক বানাইছে। ক্লিনিকের কাছাকাছি আমি সারাদিন থাকি, মাসুকরে দেখি না। মাসে, দুই মাসে আতকা চিতকা (মাঝেমধ্যে) দেখা যায়।'

 


স্বাস্থ্য সহকারী মাসুকুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, 'আমি নিয়মিত ডিউটি করি। টিকাসহ অন্য দায়িত্বও পালন করতে হয়।'

 


সরকারি চাকুরি করে কিন্ডারগার্টেন চালানো, কোচিং বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি আগে কিন্ডারগার্টেনে ক্লাশ নিতাম, এখন নেই না। কোচিং দিনের বেলায় নয়, রাতে করাই। আর্থিক বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করছি। সম্মান নষ্ট করার জন্য কিছু মানুষ আমার নামে মিথ্যা কথা ছড়াচ্ছে।'

 


হরষপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার কাউসার আহমেদ বলেন, 'আমি বর্তমান মেম্বার, আগেও ৫ বছর মেম্বার ছিলাম বিগত ১০ বছরে প্রায়ই কমিউনিটি ক্লিনিকে ভিজিট করেছি। তাকে একদিনও দেখিনি।'

 


এই কমিউনিটি ক্লিনিকের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেম্বার জয়নাল মিয়া বলেন, 'মানুষজন আমার কাছে বলে, এখানে স্বাস্থ্য সহকারী আসে না বললেই চলে।'

 


ক্লিনিকে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করা, সরকারি চাকুরি করা একজন স্বাস্থ্য সহকারী কিভাবে দিব্যি বছরের পর বছর কিন্ডারগার্টেনে পাঠদান করেছেন এ ব্যাপারে বিজয়নগর ইউএনও এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, 'এটি সাধারণত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেখভাল করে থাকেন। আমার জানা ছিল না, বিষয়টি আমি দেখব।'

 


এদিকে বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুম জানান, 'খোলার দিনগুলোতে ডিউটি চলাকালীন সময়ে কোনোভাবেই চাকুরীর বাইরে অন্য কোনো পেশা কিংবা কাজে জড়িত হবার সুযোগ নেই। দায়িত্বে অবহেলা থাকলে অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

 

ভোরের আকাশ/ সু