দিনাজপুরে এবার শীতকালীন সবজি উৎপাদন ভালো হলেও হরতাল-অবরোধে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বাজারজাত প্রক্রিয়া।
কৃষকদের দাবি, যান চলাচল কম থাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সবজি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে স্থানীয় বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম অনেক কমে গেছে। ফলে লোকসান কৃষককেই গুনতে হচ্ছে।
বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের সনকা গ্রামের সবজিচাষি আব্দুর রাজ্জাক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এ বছর অনেক বেশি জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। গত কয়েক বছর শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাজারে যে দাম ছিল, এবার তার অর্ধেকও নেই। পাইকারি বাজারে বা জমিতে প্রতি কেজি শিম ২০ টাকা, বেগুন ১৫, শসা ১৫, বরবটি ৩০, ফুলকপি ১০ ও বাঁধাকপি ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
চিরিরিরবন্দর উপজেলার আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের সবজিচাষি তবারক আলী, সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের ভাটিনা গ্রামের একরামুল হক, মফিজ উদ্দিন, মাস্তান বাজার এলাকার মিলন সরকার ও দীঘন গ্রামের লোকমান হাকিম জানান, গত বছর গড়ে ৫০ টাকা কেজি দরে কৃষক শিম, বরবটি, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি জমি থেকে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছিল। এবার অবরোধ ও হরতালের কারণে জেলা থেকে সবজি বাইরের জেলাগুলোয় পাঠাতে পারছেন না। ফলে বাজারে সবজির দাম আশঙ্কাজনক কমে গেছে।
জেলার সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারি ও খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি বাজারে বেগুন ১৬ টাকা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম ও ঢেঁড়শ ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা, পালংশাক, নাফা, লাল, লাউ, সরিষা, ডাঁটা প্রতি আঁটি ৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক আবু কালাম, শামসুদ্দিন, উলিপুর গ্রামের কলিমুদ্দিন, ঘুঘুডাঙা গ্রামের আহাদ আলী ও বিরল উপজেলার কামদেবপুর গ্রামের মজিবর রহমান জানান, হরতাল-অবরোধে আন্তঃজেলা বাস চলছে না। মহাসড়কেও বাস, ট্রাক, পিকআপ চলছে না। চাহিদাপূর্ণ জেলাগুলোয় কোথাও সবজি পাঠানো যাচ্ছে না। কৃষক বাঁচাতে হরতাল অবরোধ কর্মসূচি না দিতে অনুরোধ জানান তারা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে দিনাজপুর জেলার ১৩ উপজেলায় ১৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে শিম, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মূলা ও ডাঁটা, শসা, বেগুন, পালংশাক, সরিষা শাক, নাফা শাক, লাল শাক, মেথি শাক ও কলমি শাক। এসব সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। সেখানে চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ১২৫ হেক্টরে। সবজির ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি। হরতাল-অবরোধের কারণে দিনাজপুরের সবজি অন্য জেলায় পাঠানো যাচ্ছে না। এ কারণে কৃষক ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
ভোরের আকাশ/নি