পরিবারের দারিদ্রতা ও অসচ্ছলতা দূর করতে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের আবদুল মালেক। সেখানে বিভিন্ন ফলের বাগানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ৬ বছর পর দেশে ফিরে জমি লিজ নিয়ে গড়ে তোলেন ফলের বাগান।
তিনি বলেন, অভাব-অনটনের সংসারে ধারদেনা করে বিদেশে গিয়েছিলাম। সেখানে বিভিন্ন ফলের বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। ৬ বছরে ধারদেনা পরিশোধ করে আর কিছু টাকা জমিয়ে এ ধরনের বাগান করার চিন্তা নিয়ে ফিরে আসি। এরপর অন্যের জমি লিজ নিয়ে শুরু করি পেয়ারা ও কুলের বাগান। কয়েক বছর যেতে না যেতেই স্বাবলম্বী হয়েছেন আব্দুল মালেক। বাজারে পেয়ারা এবং কুলের চাহিদা প্রচুর।
আবদুল মালেক জানান, পেয়ারা ও কুল বিক্রিতে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। পাইকাররা এসে বাগান থেকেই সংগ্রহ করে, ওজন দিয়ে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ১২ বিঘা জমিতে পেয়ারা ও ৪ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। ফল চাষ কৃষক পর্যায়ে বেশ লাভজনক। কুল ও পেয়ারা চাষে ঝুকছেন বেকার তরুণ চাষীরা। বাংলাদেশে ফলের হেক্টর প্রতি উৎপাদন অন্যান্য প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদনের চেয়ে বেশি হওয়ায় আয়ের পরিমাণও বেশ ভালো। তাই ফলের বাগানের প্রতি ঝুকছে কৃষকরা।
বাজারে বলসুন্দরী, কাশ্মীরি, ভারতসুন্দরী কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কুষ্টিয়া জেলায় ছোট-বড় বাগান গড়ে উঠেছে। অল্প সময়ে কুল চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় কৃষক ও শিক্ষিত বেকার যুবকরা ঝুঁকছেন কুল চাষে। পাশাপাশি থাই জাতের বিভিন্ন ধরনের পেয়ারা চাষেও এগিয়ে আসছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ ও গবেষণা কর্মসূচি জোরদারকরণের মাধ্যমে দেশে বিভিন্ন ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বিদেশি ফল আমদানির পরিমাণ ক্রমেই কমছে। মানুষ আপেল ও আঙ্গুরের পরিবর্তে স্থানীয় পেয়ারা ও কুল (বরই) বেশি কিনছে। ভোক্তারা মনে করেন, কেমিক্যাল ও প্রিজারভেটিভমুক্ত এবং তুলনামূলক স্বল্পমুল্যে পাওয়ায় এসব দেশি ফল কেনা বেশ লাভজনক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা যায়, ফল বাগান গড়ে লাভবান হওয়ায় জেলায় বাগানির সংখ্যা বাড়ছে। আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলার ৬টি উপজেলার ২৫০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা এবং ১২৫ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হতো। পরবর্তী চার অর্থবছরে তা বেড়েছে দ্বিগুণ।
মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কেউপুর গ্রামের যুবক তুহিন আলী। তার বাড়ির পাশের মাঠে ৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কুল ও পেয়ারা চাষ করেছেন। বর্তমানে তার বাগানে ৮৫০টি বলসুন্দরী কুল ও তিন হাজার পেয়ারার গাছ রয়েছে। বর্তমানে তিনি একজন সফল ফল চাষি হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
তুহিন আলী বলেন, আমার ৬ বিঘা জমিতে বলসুন্দরী কুল ও পেয়ারা আবাদ করেছি। এক বছরের মাথায় বাগানে ফল ধরতে শুরু করে। বছর শেষে সব খরচ বাদ দিয়ে কয়েক লাখ টাকা লাভ হয়েছে। কুল ও পেয়ারা চাষে সফলতা দেখে এলাকার লোকজন উৎসাহিত হচ্ছেন। অনেকেই এসব ফল চাষে এগিয়ে আসছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়া জেলার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হায়াত মাহমুদ ভোরের আকাশকে বলেন, মৌসুমী ফলের মধ্যে পেয়ারা ও কুল বেশ পুষ্টিকর ফল। পেয়ারা ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল। লাভজনক হওয়ায় পেয়ারা এবং কুলের আবাদ প্রতি বছরই বাড়ছে। বাজারে এখন দামও ভালো। তাই পেয়ারার চাষ বাড়াতে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ডিএই’র তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যেখানে জেলার ৬টি উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা এবং ১৫০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৭০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা এবং ১২৫ হেক্টর জমিতে কুল, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২৯৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা এবং ১৭৫ হেক্টর জমিতে কুল, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা এবং ২০৫ হেক্টর জমিতে কুল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৫৪ হেক্টর জমিতে পেয়ারা এবং ২১৭ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে।
তিনি বলেন, আবহাওয়া এবং মাটির গুণাগুণ অনুকূলে থাকায় কুষ্টিয়া জেলায় পেয়ারা এবং কুলের আবাদ প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। গত চার বছরে এসব ফলের চাষ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি