logo
আপডেট : ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৬:৫৪
ভয়ংকর ক্ষুধা সংকটের মুখে গাজা
সংঘাত শেষ হতে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগবে: মার্কিন কর্মকর্তারা

সংঘাত শেষ হতে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগবে: মার্কিন কর্মকর্তারা

গাজা ভয়ংকর ক্ষুধা সংকটে পড়বে বলে জানাল জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। উপত্যকাটিতে সাতদিন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ছিল। তখন কিছু ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ করে। তা কিছু মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। তবে ডব্লিউএফপি বলছে, দুঃখের বিষয় হল, এই বিষয়ে যতটা এগোনো জরুরি ছিল, তা হয়নি।

 

সংস্থাটি বলছে, নতুন করে লড়াই শুরু হওয়ায় ত্রাণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে কর্মীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এর ফলে বেসামরিকরা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। গাজায় ২০ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার সম্বল হলো ত্রাণের এ খাদ্যশস্য।

 

ডব্লিউএফপি বলেছে, আমাদের কর্মীদের জন্য গাজা ভূখন্ডের নিরাপদ, বাধাহীন ও দীর্ঘকালীন যাতায়াতের ব্যবস্থা চাই। তাহলেই তারা মানুষের কাছে জীবনদায়ী ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারবে। এটি আরও বলছে, একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী শান্তি হলেই এ মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। ডব্লিউএফপি তাই দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি চায় এবং সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান চায়।

 

এদিকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

 

তারা বলেন, যুদ্ধবিরতির পর দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েল নতুন করে যে আগ্রাসন শুরু করেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে এ সংঘাত শেষ হতে হতে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।

 

যুদ্ধবিরতির পর গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলি সেনারা যেভাবে হামলা চালাচ্ছে সে বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। গাজায় চালানো আগ্রাসন নিয়ে এর আগেও বারবার ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে মার্কিন প্রশাসন।

 

তারা বলছে, ইসরায়েল যেভাবে গাজার উত্তরে হামলা চালিয়েছে দক্ষিণেও সেই একই ধারা বজায় রাখতে পারে না। এই হামলা অবশ্যই সীমিত করতে হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েল অনবরত যে হামলা চালাচ্ছে তা বৈশ্বিক মতের পুরোপুরি বিরুদ্ধে। চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছেন। এতে করে আন্তর্জাতিক সমর্থন দ্রুত হারাচ্ছে ইসরায়েল।

 

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পেন্টাগন প্রধান লয়েড অস্টিন বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কেবলমাত্র হামাসের বিরুদ্ধে শহুরে যুদ্ধে বিজয়ী হবে। কিন্তু হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বিজয় একটি ‘কৌশলগত পরাজয়’ হয়ে উঠবে যদি দেশটি গাজায় সামরিক অভিযানের সময় বেসামরিক হতাহতের ঘটনা রোধ করতে না পারে।

 

রিগান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোরামে এক বক্তৃতায় লয়েড অস্টিন বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে এবং গাজায় মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করতে ইসরায়েলকে চাপ দিতে থাকবে ওয়াশিংটন। ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনি মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে।

 

একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের বিশ্বাস, তারা কয়েক হাজার হামাস জঙ্গিকে হত্যা করেছে। এদিকে বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইসরায়েলকে প্রকাশ্যে বারবার বেসামরিকদের মৃত্যু কমিয়ে আনার বিষয়ে তাগাদা দিয়েছেন।

 

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলকে সবার সামনে পরামর্শ দেওয়ার পরিবর্তে পর্দার আড়ালে দেওয়া ভালো।

 

অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনারা প্রথম থেকেই বলে আসছে, তাদের লক্ষ্য হামাসকে এতটাই দুর্বল করা যে তারা যেনো ৭ অক্টোবরের হামলার পুনরাবৃত্তি না করতে পারে। একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, চলতি বছরের শেষে সংঘাত শেষের সম্ভাবনা কম। মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরায়েলি এই আগ্রাসনকে দীর্ঘমেয়াদি প্রচারণা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

 

এদিকে জনৈক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলছেন, আগামী বছর পরিবর্তন আসতে পারে। আমরা যে কঠোর অপারেশন চালু রেখেছি তা ধীরগতিতে রুপ নেবে দ্রুত। এর জের ধরেই মার্কিন কর্মকর্তারা আশাবাদী।

 

তারা বলছেন, ইসরায়েল জানুয়ারির মধ্যে আরও লক্ষ্যবস্তু কৌশলে চলে যাবে, ইরাক ও আফগানিস্তানের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা রেখেছিলো। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ইসরায়েলকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহব্বান জানানোর পরে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার একটি অনলাইন মানচিত্র উন্মোচন করেছে যা ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত।

 

কিন্তু মানচিত্রটি দেখার জন্য বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন, যার কিছুই গাজায় এখন নেই।

 

ভোরের আকাশ/নি