বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী যার ব্যাপক পরিচিতি আছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। অন্যান্য আকর্ষণীয় জায়গার পাশাপাশি চট্টগ্রাম দারুণ জনপ্রিয় তার নজরকাড়া সমুদ্র সৈকতের জন্যও।
এর মধ্যে সুপরিচিত হলো পতেঙ্গা, পারকি, গুলিয়াখালী, বাঁশখালী, বাঁশবাড়িয়া ও আকিলপুর সৈকত। চট্টগ্রামে বেড়াতে গেলে এসব সৈকত ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। জেনে নিন এসব সৈকত সম্পর্কে।
পতেঙ্গা সৈকত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা সৈকত খুবই জনপ্রিয় সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্থাপত্য সৌন্দর্যের জন্য। সৈকতটির অবস্থান বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমি ও শাহ আমানত বিমানবন্দরের কাছেই।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ) এই সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সেখানে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছে। বালুকাময় সৈকতের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ওয়াকওয়ের বর্ণিল ইটের ওপর বসে উপভোগ করেন বন্দরে ভেড়ানো ছোট ও বড় জাহাজগুলোর মধ্য দিয়ে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। জায়গাটির সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায় যখন সূর্যাস্তের পর ওয়াকওয়ে ও জাহাজগুলোতে আলো জ্বলে ওঠে। সৈকতটিতে ভ্রমণকালে পর্যটকরা ওয়াকওয়ের বিপরীত দিকে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানগুলোর বাহারি স্ট্রিট ফুডের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম নগরী থেকে পতেঙ্গা সৈকতে যাওয়ার জন্য আপনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিতে পারেন আবার জিইসি ইন্টারসেকশন থেকে ১০ নং বাসেও চড়তে পারেন।
পারকি সৈকত জনপ্রিয়তার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা পারকি সৈকত আনোয়ারা উপজেলা উপকূলে অবস্থিত। বন্দরনগরী থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জায়গটি জনপ্রিয় তার বিস্তৃত বালুকাময় সৈকত ও এর পাশে অবস্থিত ঝোপ-ঝাড়ের জন্য বিশ্বের অন্য যেকোনো বালুকাময় সৈকতের মতো পারকিতেও পর্যটকরা সাগরের পানিতে গোসল করতে পারেন। চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী ব্রিজ এলাকা থেকে পারকিতে যাওয়ার বাস পাওয়া যাবে। যেতে পারবেন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করেও।
গুলিয়াখালী সৈকতগুলিয়াখালী সৈকতের অবস্থান সীতাকুন্ড উপজেলায় ও চট্টগ্রাম নগরী থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। এটি দেশের ব্যতিক্রমী সমুদ্র সৈকতগুলোর একটি। ম্যানগ্রোভ বনভূমি দ্বারা আবৃত ও সবুজ ঘাষে আবৃত সৈকতটিকে মনে হয় যেন শত শত ক্ষুদ্র দ্বীপের সমষ্টি।
ঘাষে ঢাকা সৈকতে সূর্যাস্ত উপভোগের পাশাপাশি পর্যটকরা চাইলে সৈকতের পাশ দিয়ে প্রবাহিত খালের মধ্য দিয়ে সদ্বীপ চ্যানেলে নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন। চট্টগ্রামের বাইরে থেকে কেউ গুলিয়াখালী সৈকত দেখতে চাইলে সীতাকুন্ডের বাস থেকে নেমে যেতে পারেন ও সিএনজি বা অটোরিকশায় করে সহজেই সৈকতে যেতে পারেন।
বাঁশখালী সৈকতবাঁশখালী সৈকত হলো কক্সবাজারের পর দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সৈকত। চট্টগ্রাম নগরী থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই প্রাকৃতিক সৈকত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। উত্তর ও পূর্বদিকে সাঙ্গু নদীর উৎসমুখ থেকে শুরু হয়ে প্রসারিত উঁচু-নিচু পাহাড় বাঁশখালী ও সাতকানিয়া-লোহাগড়ার মধ্যে অবস্থিত।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাঁশখালী সৈকত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সৈকতের অনেকগুলো পয়েন্ট গড়ে উঠেছে যার মধ্যে আছে খানখানাবাদ, কদমরসুল, বাহারছড়া, রতনপুর, কাটারিয়া ও গন্দামারা। এগুলোর মধ্যে খানখানাবাদ, বাহারছড়া ও রতনপুর পয়েন্ট বেশি জনপ্রিয়। বালুকাময় সৈকত, উঁচু ঢেউ, তরতাজা ও নিরিবিলি পরিবেশ ও আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাকে একটি মনে রাখার মতো ভ্রমণ উপহার দেয়ার জন্য সব সময় তৈরি।
বাঁশখালী সৈকতে যেতে হলে আপনাকে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট অথবা শাহ আমানত ব্রিজ থেকে বাসে উঠতে হবে ও বাঁশখালীর গুনাগারি এলাকায় নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে যেতে পারবেন।
বাঁশবাড়িয়া সৈকতসীতাকুন্ড উপজেলার আরেকটি জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হলো বাঁশবাড়িয়া সৈকত। এটি চট্টগ্রাম নগরী থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। প্রাথমিকভাবে জায়গাটি জনপ্রিয় হয়েছিল একটি কাঠের জেটি তৈরির কারণে যেখানে সদ্বীপগামী যাত্রীরা নৌকায় ওঠানামা করতেন।
পরবর্তী সময়ে বালুকাময় সৈকত ও ঝোপঝাড় সারা দেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। চট্টগ্রাম নগরীরর একে খান ইন্টারসেকশনে ৮ অথবা ১৭ নং বাসে উঠে বাঁশবাড়িয়া বাজারে পৌঁছে একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যেতে পারবেন বাঁশবাড়িয়া সৈকতে। আকিলপুর সৈকতআকিলপুর সৈকত চট্টগ্রামের পর্যটনে সর্বশেষ সংযোজনগুলোর একটি। স্থানীয় পর্যটকদের মধ্যে এটির বেশ জনপ্রিয়তা আছে। চট্টগ্রাম নগরী থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ছোট কুমিরা এলাকায় অবস্থান আকিলপুর সৈকতের।
এই সৈকতে বিস্তৃত বালুরাশি তেমন নেইম, তবে বাঁকানো বাঁধ ও কংক্রিটের ব্লক গুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। চট্টগ্রাম নগরীর একেখান ইন্টারসেকশন থেকে ৮ অথবা ১৭ নম্বর বাসে চড়ে ছোট কুমিরায় পৌঁছে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে যেতে পারবেন আকিলপুর সৈকতে।
ভোরের আকাশ/নি