logo
আপডেট : ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৯:৫৮
কাজ করতে চায় না কোনো ঠিকাদার, বেহাল সড়ক
কমলগঞ্জ ( মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

কাজ করতে চায় না কোনো ঠিকাদার, বেহাল সড়ক

সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুর সড়কটি সংস্কারের অভাবে বেহালে পরিণত হয়েছে। সড়কটির ৫ কিলোমিটার অংশের বিটুমিন ও খোয়া উঠে গিয়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায়ই স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও যাত্রীবহনকারী ইজিবাইক, সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলে দূর্ভোগসহ হতাহতেরও ঘটনা ঘটছে।

 

তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, সড়কটি মেরামতের জন্য এক বছর আগে ঠিকাদার নিয়োগ হলেও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে ঠিকাদার কাজটি করেননি। ফলে সড়কটি মেরামত না হওয়ায় বেহালে পরিণত হয়েছে।

 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কমলগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে আদমপুর বাজার পর্যন্ত মূল সড়কটির দৈর্ঘ্য ৭ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডির অর্থায়নে কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনী থেকে আদমপুর বাজার পর্যন্ত রাস্তাটির কার্পেটিং করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৬ বছরে রাস্তাটিতে কার্পেটিং উঠে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে ততই গর্তগুলো বিশাল হচ্ছে।

 

রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রাকল্পিক ব্যয় ধরে মৌলভীবাজার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সড়কটি মেরামতের জন্য দরপত্র আহব্বান করেছিল।

 

কিন্তু কাজটি পাওয়ার পর ওই ঠিকাদার বাজারে পাথর ও বিটুমিনের দাম বৃদ্ধিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাজটি না করে সরকারি বিধিমোতাবেক ১০ লাখ টাকা জামানত হারান। ফলে রাস্তাটি মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছে এলজিইডি।

 

সরজমিনে দেখা যায়, এ সড়কে আলেপুর নামক স্থান থেকে আদমপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অসংখ্য স্থানে কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া ও পাথর বেরিয়ে পড়েছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটারিচালিত ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলছে।

 

আদমপুরের ঘোড়ামারা গ্রামের মিলন সিংহ, নইনারপার এলাকার শাব্বীর এলাহী ভোরের আকাশকে বলেন, প্রায় দুবছর আগে থেকেই কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আদমপুর, ইসলামপুর, কমলগঞ্জ সদর ও আলীনগর ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। প্রতিদিন শত শত গাড়ি চলাচল করে থাকে। সর্বশেষ ছয় বছর আগে সড়কটি সংস্কার করা হয়। বর্তমানে সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরগতিতে যানবাহন চলছে।

 

অটোরিকশাচালক ইব্রাহীম আলী ও স্বপন সিংহ বলেন, আমাদের আপনারা বাঁচান। কিছু একটা করুন রাস্তাটার জন্য। রাস্তায় অনেক গর্ত থাকায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ২০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে ৪০-৪৫ মিনিট। গত সপ্তাহে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা উল্টে একজন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।

 

আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, রাস্তাটি মেরামতের জন্য বার বার সংশ্লিষ্টদের কাছে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে সড়কটি।

 

কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কটি সংস্কারের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে টেন্ডার আহব্বান করা হয়।

 

কিন্তু জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্তের ভয়ে ঠিকাদার কাজ করেননি। পরবর্তীতে আবারও রাজস্ব খাত থেকে মেরামতের চেষ্টা করলেও টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় সেটাও সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পে সড়কটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই সড়কটি মেরামত করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি