নেত্রকোনায় কৃষকেরা এবার বেশি করে শর্ষে চাষ করছেন। বাজারে শর্ষের তেলের চাহিদা বেশি থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর জেলায় অন্তত ৪ হাজার ৭১৮ হেক্টরের বেশি জমিতে শর্ষের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শর্ষের ফলনও ভালো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শর্ষে গাছে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার ১০টি উপজেলায় ১২ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে শর্ষে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৮১৫ টন। এর বিপরীতে এ পর্যন্ত চাষ হয়েছে ১২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।
কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ বেশি হওয়ায় উৎপাদন বাড়বে। গত বছর রবি মৌসুমে জেলায় শর্ষের আবাদ হয়েছিল ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। এর আগের বছর শর্ষের আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে। জেলায় প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে বারি সরিষা-১৪ ও বিনা-৯ জাতের শর্ষের চাষ বেশি হয়েছে। ১০টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে পূর্বধলা উপজেলায়। ওই উপজেলায় ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়।
এরপর কলমাকান্দায় অন্তত ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মদন উপজেলা। সেখানে আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে। সবচেয়ে কম আটপাড়ায়, ওই উপজেলায় মাত্র ৪০০ হেক্টর জমিতে শর্ষে আবাদ হয়।
কয়েকজন চাষি বলেন, আগে স্থানীয় জাতের শর্ষে চাষ করায় ফলন কম হতো এবং উৎপাদনে সময় বেশি লাগত। এখন কম সময় ও কম খরচের মধ্যে শর্ষে চাষ করা যায়। এ কারণে জেলায় শর্ষের চাষ দিন দিন বাড়ছে। কম জীবনকালের বারি সরিষা-১৪ জাতের শর্ষে ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। শর্ষে কেটে ওই জমিতে আবার বোরো ধান আবাদ করা যায়।
সম্প্রতি কলমাকান্দা ও মদন উপজেলার কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, শর্ষের গাছে ফুল ফুটতে শুরু করছে। কোনো কোনো খেতে ফুলে ভরে আছে। চাষিরা জানান, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যেই শর্ষে মাড়াই করা সম্ভব হবে।
মদনের কাইটাইল গ্রামের চাষি সাদ্দাম হোসেন জানান, ফলন ভালো হয়েছে। আর চার সপ্তাহের মধ্যে খেতের শর্ষে বাড়িতে আনা যাবে।
মদন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিব বলেন, উপজেলায় বারি সরিষা-১৪ জাতের শর্ষে বপন করা হয়েছে। এই শর্ষে মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নেত্রকোনা কার্যালয়ের উপপরিচালক ভোরের আকাশকে মো. নুরুজ্জামান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার অন্তত ৪ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে শর্ষের বেশি চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা খুশি।
ভোরের আকাশ/নি