দেশের উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের সঙ্গী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বরগুনার খরস্রোতা পায়রা, বিষখালী-বলেশ্বর নদীর তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে কয়েকশ একর জমি। সদর উপজেলার পালের বালিয়াতলী এলাকায় দেড় কিলোমিটার এবং তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায় আড়াই কিলোমিটারসহ জেলার ৭৩ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যক্রম থাকলেও তা যেন কাজে আসছে না। টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বাইরে যেসব জায়গায় সংস্কার করা হচ্ছে, তাও নদী ভাঙন অথবা ছোটখাটো দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারছে না। তাই টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি উপকূলের মানুষের।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পালের বালিয়াতলী এলাকার গত দুই বছরের ব্যবধানে বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অন্তত ২০০ পরিবার। বিলীন হয়েছে বাজার, মসজিদ, কবরস্থানসহ একাধিক স্থাপনা। আর এ ভাঙন মোকাবিলায় পাউবোর জরুরি সংস্কারের নামে গা-ছাড়া কাজ শুধুই সাময়িকের। জান-মাল রক্ষায় এসব কাজে কিছুই হয় না বলে দাবি স্থানীয়দের।
সদর উপজেলার লতাকাটা এলাকার মো. ইয়াসিন বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর আগে থেকে বেড়িবাঁধ রক্ষায় মানববন্ধনসহ বিভিন্নভাবে পাউবোর কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু তারা কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে বেড়িবাঁধটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’
সদর উপজেলার বালিয়াতলীর ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম নাসির বলেন, ‘পালের বালিয়াতলীর বেড়িবাঁধ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু ১ বছর যেতে না যেতেই তা আবার নদীগর্ভে চলে যায়। তবে জিওব্যাগ অথবা ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করলে টেকসই হবে। তা না হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বসতবাড়ি এবং ফসলি জমিসহ জীবনহানির আশঙ্কা থাকবে।’
অপরদিকে জরুরি মেরামতের নামে একাধিকবার জেলার তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ও জয়ালভাঙ্গা এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই মাটি দিয়ে নির্মাণ বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়তই জীবন ঝুঁকিতে বসবাস করছে উপকূলীয় এ এলাকার মানুষ। একই চিত্র পাথরঘাটা উপজেলার জ্বীনতলা, পদ্মা, কালমেঘা, কাকচিড়ায়। বামনা উপজেলার রামনা এবং বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ীসহ একাধিক পয়েন্টের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। সব মিলিয়ে প্রায় ৭৩ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২২টি পোল্ডারের আওতায় ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ কিলোমিটার বাঁধের তীর সংরক্ষণ, ৯ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ এবং ৫১ কিলোমিটারের মেরামতের কার্যক্রম চলমান আছে। এ ছাড়া আরও ৬৯ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, মেরামত এবং নদী সংরক্ষণের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ২টি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বরগুনার পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, ‘বরগুনার দুটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে এবং আরও ২টি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ অনেকটা সংস্কার হয়ে যাবে। এর মধ্যে কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তা জরুরি মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।’
ভোরের আকাশ/ সু