logo
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৩:২৬
মাদারীপুরে বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর পালা অনুষ্ঠিত
মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরে বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর পালা অনুষ্ঠিত

ক্যাপশান-সদর উপজেলার ঘটমাঝির মদন সাহার বাড়িতে যাত্রাপালা দেখতে নানা বয়সী মানুষের ভিড়

মাদারীপুরে হয়ে গেল বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর পালা। সাপেকাটা মৃত স্বামীকে ৬ মাস পর জীবিত করে সতীত্বের প্রমাণ দেয়ার অমর কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয় এই পালায়। মনসা-মঙ্গল কাব্যগ্রন্থের এমন অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় করেন হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ। শিল্পীদের রাতভর পরিবেশনায় মুগ্ধ দর্শক-স্রোতারা। মানুষের মাঝে ধর্মের চর্চা বাড়ানোর পাশাপাশি এলাকাবাসীকে আনন্দ দিতেই এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা।

 

জানা যায়, ৬ মাস কলাগাছের বেলায় ভেসে সাপেকাটা স্বামী লক্ষ্মীন্দরকে জীবিত করে ঘরে ফেরেন বেহুলা। প্রমাণ দেন সতিত্বের। সোমবার রাতভর এমন আয়োজন দেখতে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝির মদন সাহার বাড়িতে ভিড় শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষের।

 

হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মতে, তের দশকের ঘটনা। সাপের দেবি হওয়ায় হতো না মনসার পূজা-অর্চণা। মর্তলোকের কেউ মনসার পূজা করলেই মনসার ঠাই হবে স্বর্গে। বাবা শিবের কথায় সমাধান হিসেবে মর্তলোকের চাঁদ সওদাগরের মাধ্যমে পূজা আরম্ভের চেষ্টা করেন মনসা। চম্পকনগরের চাঁদ সওদাগর এতে রাজি না হওয়ায় একে একে ৬ সন্তানকে সাপে কাটলে মারা যায় তারা। এরপর লক্ষিন্দরের সাথে বিয়ে হয় চাঁদ সওদাগরের বন্ধু সতীর্থ সাহার মেয়ে বেহুলার। বাসররাতে সাপে কাটলে মারা যায় লক্ষিন্দর। তখনকার নিয়ম ছিল সাপেকাটা মৃত মানুষকে ভেলায় বাসিয়ে দেয়ার। সেই ভেলাতেই স্বামীর সঙ্গে ৬ মাস জলে ভাসেন বেহুলা। একপর্যায়ে স্বর্গে পৌঁছে পূজার প্রতিশ্রুতিতে মনসার মাধ্যমে মৃত স্বামীকে জীবিত করে ঘরে ফিরিয়ে আনেন। পরে শ^শুর চাঁদ সওদাগরকে রাজি করিয়ে শুরু করেন মা মনসা দেবির পূজা-অর্চণা। পৃথিবীজুড়ে এভাবেই দেবি মনসার পূজার সূচনা হয়। এই বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর পালা দেখে মুগ্ধ দর্শক-স্রোতারা। মানুষকে আনন্দ দেয়ার পাশাপাশি মনুষ্যত্ব জাগ্রত করতে বিভিন্ন জেলায় এমন অনুষ্ঠানে অংশ নেন বলে জানান আগত শিল্পীরা।

 

অনুষ্ঠান দেখতে আসা দুলাল মন্ডল বলেন, হিন্দু ধর্মের স্বামীর প্রতি স্ত্রীর এক ভালোবাসার কাহিনি এই বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর। পালার মাধ্যমে আরো বড় আকারে ধারণা ও জানা যায়। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি।

 

রানী খানম বলেন, এই অনুষ্ঠান হিন্দু-মুুসলিম সব ধর্মের মানুষই দেখতে পারেন। এই পালার মাধ্যমে অনেক কিছুই শেখার আছে। প্রতিবছর এইদিনে এই অনুষ্ঠান দেখতে আসি,ভাল লাগে।

 

বেহুলার চরিত্রে অভিনয় শিল্পী বেদশ্রী রায় বলেন, জনজনম ধরে এই কাহিনি চলে আসছে আমাদের হিন্দু সমাজে। কিন্তু অনেকেই এই কাহিনি জানে না, তাই এই পালার মাধ্যমে মানুষকে এই কাহিনি বোঝানোর চেষ্টা করি।

 

চাঁদ সওদাগরের অভিনয়ে অংশ নেয়া সুকুমার শীল বলেন, বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে এমন পালায় অংশ নেই। এই পালার মাধ্যমে মানুষের মনুষ্যত্ব জাগ্রত হবার পাশাপাশি ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে শেখানোর চেষ্টা করি।

 

আয়োজক মনোতোষ কুমার সাহা জানান, পূর্ব পুরুষের শুরু হওয়ায় এই পালার মাধ্যমে বাড়বে ধর্মের চর্চা। এজন্য ৪৩ বছর ধরে একটানা এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। রাতে বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর পালায় অংশ নেয় সাতক্ষীরা থেকে আগত মা মনসা নাট্য সংস্থার শিল্পীরা।

 

ভোরের আকাশ/মি