মাছ ও পাখির একটি অভয়াশ্রম মৌলভীবাজারের হাইল হাওরের বাইক্কা বিল। শীত মৌসুমে এখানে হাজারো পাখির মেলা বসে। শীতের শুরু থেকেই পাখিরা আসতে শুরু করে। পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে এলাকা। এবারও শীতের শুরু থেকেই এসেছে নানা জাতের পাখি। দিন যত বাড়ছে, বাইক্কা বিলে পাখির কলরবও বাড়ছে।
হাইল হাওরের একটি অংশে বাইক্কা বিলে মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। এই অভয়াশ্রম গড়ে তোলার পর থেকে বিলুপ্তপ্রায় পাখিরা ফিরে আসতে থাকে। বছরের কোনো না কোনো সময় তারা বাইক্কা বিলে কাটিয়ে থাকে।
সম্প্রতি বাইক্কা বিলে গিয়ে দেখা গেছে, বাইক্কা বিলের বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড হয়ে পাখির ঝাঁক বসে আছে। দল বেঁধে পানির ওপর ভাসছে। চিল বা অন্য কোনো শিকারি পাখি ঝাপটা দিলে পাখির ঝাঁক উড়াল দিয়ে বাইক্কা বিলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে। কখনো বিলের ওপর মালার মতো ঘুরে ঘুরে উড়ছে, ডাকাডাকি করছে। কখনো শাপলা ফুলের কাছে দল বেঁধে নামছে। এই পাখির মধ্যে সরালি জাতের হাঁসই বেশি। সঙ্গে আছে বেগুনি কালেম। এবার বিলে এখনো অনেক পানি আছে। পানির ওপর শাপলা-শালুক ঘন হয়ে আছে। এতে পাখিদের বসতে সুবিধা হচ্ছে। তাদের খাবারও মিলছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, নভেম্বর মাস থেকেই বাইক্কা বিলে পাখিরা আসতে থাকে। এবার নভেম্বরে তেমন পাখি আসেনি। ডিসেম্বরের শুরু থেকে পাখি আসা শুরু হয়েছে। তবে গত চার-পাঁচ দিনে পাখির সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এবার অনেক পাখি আসতে পারে। সকালবেলা পাখিগুলো বাইক্কা বিলের পাড়ের কাছাকাছি থাকে। রোদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা পাড়ের কাছ থেকে দূরের দিকে সরে যায়। তখন তারা শাপলা-শালুকের ঘন অংশে বসে থাকে। এ বছর আসা পাখির মধ্যে সরালি, রাজসরালি, বেগুনি কালেম, ভুঁতিহাঁস, বালিহাঁসসহ আরও কিছু জাতের পাখি আছে।
বাইক্কা বিলের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী বলেন, ‘এবার পানির মধ্যে শেওলা আছে। পাখির খাদ্য আছে। আমরা পাহারা দিচ্ছি, কেউ যাতে পাখি ধরতে না পারে।’
বাইক্কা বিলে কেউ পাখি শিকার করতে পারছেন না বলে দাবি বিলের পাহারাদার খেজুর মিয়ার।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও সদর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত হাইল হাওর। এখানকার হারানো পরিবেশ-প্রতিবেশ ফিরিয়ে আনতে ২০০৩ সালে সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় প্রায় ২৫০ একর জায়গা নিয়ে বাইক্কা বিলকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। তখন থেকে বাইক্কা বিলে মাছ ধরা ও জলজ উদ্ভিদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। বাইক্কা বিলে পরিবেশ ফিরে আসতে থাকলে দেশি পাখির সঙ্গে পরিযায়ী পাখিরাও আসা শুরু করে। বাইক্কা বিল পাখির অভয়াশ্রম হয়ে ওঠে।
ইউএসএআইডির প্রতিবেশ প্রকল্পের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও হাইল হাওরের সাইট অফিসার মো. মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখনো যেভাবে শীত পড়ার কথা, সেভাবে শীত শুরু হয়নি। যে কারণে পাখি আসতে দেরি করছে। অন্যান্য বছর নভেম্বরেই বাইক্কা বিলে পরিযায়ী পাখিরা চলে আসে। তবে পাখি আসা শুরু হয়েছে। আরও পাখি আসবে মনে হচ্ছে।’
ভোরের আকাশ/ সু