logo
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৪:৪৫
অস্তিত্ব সংকটে খেজুর গাছ, রস সংগ্রহ যেন সোনার হরিণ
মশিউর রহমান সেলিম, কুমিল্লা

অস্তিত্ব সংকটে খেজুর গাছ, রস সংগ্রহ যেন সোনার হরিণ

খেঁজুরের গাছ তৈরির কাজ করছেন গাছি

বছরের এই সময়ে অর্থাৎ পৌষ মাস হলো শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে খেঁজুর রস সংগ্রহের জন্য আদর্শ সময়। কিন্তু কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চলের সবক’টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে এই খেজুর গাছ। সেই সাথে রস সংগ্রহ করা যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

উপজেলাগুলোর সর্বত্রই খেঁজুরের গাছ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। শীতও পড়তে শুরু করেছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে কোনো কোনো গাছ থেকে রসও সংগ্রহ করা যাবে। এ অঞ্চলের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধু বৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসব মুখর পরিবেশ। কিন্তু খেঁজুর গাছের সংকটে গাছিরা পড়েছেন বিপাকে। ২/৪-১০ গ্রাম ঘুরেও খেঁজুর গাছের সন্ধান পাওয়া যায় না এবং রস সংগ্রহ আগের মত হয় না।

 


জেলা দক্ষিনাঞ্চলের স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শরৎ, হেমন্ত কাল শেষে চলছে শীতকাল। এ সময় মনে পড়ে মধুবৃক্ষ নামে খ্যাত খেঁজুর গাছের কথা। অথচ সেই খেঁজুর গাছ রক্ষায় স্থানীয় বনবিভাগ কর্তৃপক্ষের তেমন কোন মাথা ব্যাথা না থাকায় আগামী নতুন প্রজন্মের কাছে খেঁজুর গাছ ও তার সুস্বাদু রস আরব্য উপন্যাস ও ঠাকুর মার ঝুলির গল্পের মতো সোনার হরিণে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

 


গত কয়েকদিনে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা দক্ষিণের উপজেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের খেঁজুর গাছের তোলা কাটা শেষ করেছেন গাছিরা। কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছ ঝুলে ঝুলে রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। পেশাদার গাছিদের তেমন কোন সমস্যা না হলেও রস সংগ্রহের জন্য স্থানীয় এক শ্রেণীর উৎসুক মানুষও পিছিয়ে নেই। তারা দুঃসাহসিকতা নিয়ে গাছে উঠা-নামা করছে রস সংগ্রহের জন্য। আশ্বিনের শুরুতেই গাছের তোলা ও পরিচর্যা করা শুরু করেছেন গাছিরা। শীত তেমন না পড়ায় পৌষ মাসে রস সংগ্রহ করতে পারছেন না তারা। তবে মাঘের শুরুতে খেঁজুরের রস সংগ্রহে কিছুটা আশাবাদী গাছিরা। যদিও উপজেলাগুলোতে খেঁজুর গাছের সংকট রয়েছে, তারপরও পৈত্রিক পেশা হিসাবে গাছিরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে এ কাজ করছেন।

 


সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলার দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় গ্রাম্য মাঠে এবং সড়কের পাশে পথের ধারে রয়েছে প্রচুর খেঁজুর গাছ। এছাড়া মাঠের বিভিন্ন আইলে এবং ক্ষেতের মাঝে ও খেঁজুর গাছ দেখা যায়। খেঁজুর রস সংগ্রহ করে (আমন ধান) নতুন ধানের পিঠা, পুলি ও পায়েশ তৈরীর ধুম পড়বে গ্রামে গ্রামে। সর্বস্তরের মানুষের কাছে শীতের মৌসুমে এ রস দিয়ে হরেক রকম খাবার অতি প্রিয় হয়ে উঠে। গাছিরা ওইসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে এ অঞ্চলের অলিগলিতে প্রতি কলস ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি করবেন বলে জানান গাছিরা।

 


উপজেলাগুলোর বিভিন্ন গ্রামের গাছি সেলিম মিয়া, জামাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম, সামছুল ইসলাম ও গনি মিয়া জানান, গাছ কাটার কাজ কষ্টের হলেও রস সংগ্রহে মজা রয়েছে। আমরা রস বিক্রি করে পোলাপাইন নিয়া গত কয়েক বছর ধরে মোটামুটি ভালোই আছি। তবে শীতের তীব্রতা বাড়লে খেঁজুর রস আরও বেশি মিষ্টি হবে ও রস বেশি পাওয়া যাবে।

 


স্থানীয় পরিবেশবীদদের একাধিক সুত্র জানায়, স্থানীয় বনবিভাগ কর্তৃপক্ষের পকেট বানিজ্য ও নানান ভ্রান্ত নীতির স্বীকার হয়ে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সড়কে কাটা পড়েছে পরিবেশ বান্ধব হরেক রকম গাছ। নানান ভাবে মরে যাওয়া, দাঁড়িয়ে থাকা হাজার-হাজার পরিবেশ বান্ধব গাছগুলো দেখলে বুঝা যায় ওই বিভাগের খেঁজুর গাছগুলোর অস্তিত্ব আজ কত বড় মারত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে এলকার গাছগুলো কাটার দায় নিতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। তাদের দায়িত্বহীনতা যেন নোংরা রাজনীতির চেয়ে আরো নোংরা।

 


এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তর কর্মকর্তাদের মুঠো ফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

ভোরের আকাশ/ সু