logo
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৪:৫৫
উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান
এবার স্মার্ট বাংলাদেশ ১১ দফা অগ্রাধিকার
মোতাহার হোসেন

এবার স্মার্ট বাংলাদেশ
১১ দফা অগ্রাধিকার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ বুধবার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ শিরোনামে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ের গ্রান্ড বলরুমে দলের ইশতিহার ঘোষণা করবেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

 


দ্রব্যমূল্য কমানো, আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এবারের নির্বাচনী ইশতেহারটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এবারের ইশতেহারে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন সরকারের বদলে যাওয়া দৃশ্যপট রাখা হয়েছে। থাকছে পাশাপাশি বেশ কয়েকটি অগ্রাধিকারসহ আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো।

 


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে জাতিকে দেওয়া প্রধান অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ লক্ষ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি-কৌশল গ্রহণ করবে। উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হবে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্জিত হবে। আওয়ামী লীগ তরুণ ও যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

 


জানা গেছে, নির্বাচনী ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপরেখার পাশাপাশি সঙ্গে থাকছে শত বছরের পরিকল্পনাও। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমতকে গুরুত্ব দিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বাস্তবতায় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রæতি নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করছে আওয়ামী লীগ। প্রযুক্তিনির্ভর নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখায় তরুণ-যুব সমাজের জন্য চমক থাকছে এবারের ইশতেহারে। আগামী দিনের যুবসমাজের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানটাই হবে এবারের ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য।

 


দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট ১১টি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রব্যমূল্য কমানো ও সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ব্যাংকসহ আর্থিকখাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, লাভজনক কৃষ্টির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা ও যান্ত্রিকীকরণ, নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা, আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িকতা ও সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ রোধ এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।

 


এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে চলমান কর্মকান্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় লক্ষ্য স্থির করেছে। যেমন- ২০২৮ সালের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হবে ৭১ বিলিয়ন ডলার, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে আসবে, ২০২৮ সাল নাগাদ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হবে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশে উন্নীত হবে এবং প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হবে ১৪ শতাংশ। নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের লকেষ- ২০৩১ সালের মধ্যে দেশে হতদরিদ্রের অবসান হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্য নেমে আসবে ৩ শতাংশে। তাছাড়া শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতিতে আগ্রহী করে তোলায়ও মনোযোগ দেবে দলটি।

 


আজ সকাল সাড়ে ১০টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে। প্রথমে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য রাখবেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর গত ১৫ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন কর হবে। সবশেষ সভাপতির বক্তব্য ও নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 


২০০৮ সালে ‘দিন বদলের সনদ’ শিরোনামে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ভুমিধ্বস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালেও ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১০টি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতারোহণ করে দলটি। একইভাবে সবশেষ ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার পরিকল্পনা দেওয়া হয়। আর এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের প্রধান শিরোনাম দেওয়া হয়েছে- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’।

 


এবারই প্রথম তৃণমূল মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে দলের নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন সম্পর্কে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ। তাই আওয়ামী লীগের ইশতেহার কেবলমাত্র একটি দলীয় ইশতেহার নয়, এটি প্রকৃত অর্থে গোটা জাতির ইতিহাস। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আরও কী প্রত্যাশা করে সেটি আওয়ামী লীগের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার প্রতিটি নির্বাচনী ইশতেহারে জাতিকে প্রদত্ত প্রতিটি অঙ্গীকার শতভাগ প্রতিপালন করেছে। তাই এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বাস্তবতায় স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা থাকছে। ভিশন ২০৪১সহ আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা অর্থাৎ ডেল্টা প্লানও স্থান পাবে।

 


জানা গেছে, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ইশতেহারের সঙ্গে এবারের ইশতেহারের যেমন ভিন্নতা থাকবে, তেমনি থাকবে ধারাবাহিকতা। আগামীতে সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগ কী কী নতুন উদ্যোগ নেবে সেটাও থাকছে ইশতেহারে। এবারের ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে- কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ছোট ও বড় শিল্পোৎপাদন খাত, আইনের শাসন বাস্তবায়ন, স্বাধীন গণতন্ত্র ও সুশাসনসহ বেশ কিছু বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও গুরুত্বপাবে ইশতেহারে। বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কৌশল থাকছে এবারের ইশতেহারে। তবে এবারের ইশতেহার হবে স্মার্ট ও সংক্ষিপ্ত আকারে।

 


আওয়ামী লীগের গত দুটি নির্বাচনী ইশতেহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন করে আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাসহ সকল আর্থীক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ব্যবসায়িক কার্যক্রম সকল কিছুই আজ ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পাদন হচ্ছে। সারাদেশের মানুষের হাতে হাতে এখন মোবাইল টেলিফোন, ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড কানেকশন। এতে করে জনগণের ভোগান্তি যেমন কমেছে, একই সঙ্গে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

 


সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ অনুযায়ীও আওয়ামী লীগ সরকার কাজের মাধ্যমে ইশতেহারের পূর্ণতা দিয়েছে। নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ মেগা প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। পাশাপাশি মেট্টোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কর্ণফুলী ট্যানেল, বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ওভারপাস, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ।

 


জানা গেছে, সামষ্টিক অর্থনীতি ঃ উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে একটি অংশে উল্লেখ রয়েছে- আওয়ামী লীগের আর্থসামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা সংবিধান ও বঙ্গবন্ধুর সমাজ উন্নয়ন দর্শনেরই প্রতিফলন। গত দেড় দশকে বাংলাদেশ একটি গতিশীল ও দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মর্যাদা লাভ করেছে। জাতীয় আয়ের মানদন্ডে বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৩তম অর্থনীতির দেশ। এসময়ে দেশের কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 


এ বিষয়ে ইশতেহারে আরও উল্লেখ থাকছে, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি বৃহৎ অভ্যন্তরীণ ভোক্তবাজার সৃষ্টি হয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। মুলত সরকারের ধারাবাহিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুত, জ্বালানী ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে।

 


মূল্যস্ফীতি হ্রাসে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ থাকছে, বাজার ও আয়ের মধ্যে সংগতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। যেসব পণ্যের বাজার দেশিয় উৎপাদন ও সরবরাহকারীর উপর নির্ভর করছে, সেগুলোর ন্যায্যমূল্য প্রতিষ্ঠা করা এবং ন্যায্যমূল্যে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর সর্বোচ্চ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। পণ্যমূল্য কমাতে উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তির লভ্যতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা উৎসাহিত করার ধারাও অব্যাহত থাকবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ফলে দ্রব্যমূল্য নিম্নমুখী হবে এবং সকলের ক্রয় কমতার মধ্যে আসবে।

 


দলীয় সূত্রে নির্শ্চিত হওয়া গেছে, এবারের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশের রফতানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩ গুন বেড়ে হয়েছে ৫৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিগত ১৫ বছরে রফতানি আয় গড়ে ১৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। একই সময়কালে আমদানি ব্যয় প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পায়।

 


এ বিষয়ে ইশতেহারে আরও উল্লেখ থাকছে, আমদানি ও রফতানির নিবন্ধনের মেয়াদ এক বছর হতে পাঁচ বছরে উন্নীত করা হয়েছে এবং নিবন্ধন কার্যক্রম ডিটিজাল পদ্ধতিতে সম্পাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রফতানি উৎসাহিত ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যৌথ মুলধনী কোম্পানীর নামের ছাড়পত্র ও এনটিটি প্রোফাইল ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে সম্পাদন করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে; ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত সমস্যাবলী সমাধানের জন্য সফটওয়ার চালু করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, শিল্প কারখানার পরিবেশ, শ্রম অধিকার, সুশাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা সংক্রান্ত ৩২টি আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেনশন স্বাক্ষর/অনু স্বাক্ষর করা হয়েছে।

 


বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স অধিকারহারে আনতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা ইশতেহারে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং রেমিট্যান্স প্রণোদনা প্রদান ইত্যাদির ফলে বার্ষিক রেমিট্যান্স ২০০৭-০৬ সালের তুলনায় প্রায় সাড়ে চার গুণ বৃদ্ধি পায়। রফতানি ও রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক উচ্চপ্রবাহের কারণে বর্তমান সরকারের সময দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ অর্থবছর ২০০৫-০৬ এর ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে অর্থবছর ২০২০-২১ শেষে সর্বোচ্চ ৪৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। চরমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে অর্থবছর ২০২২-২৩ শেষে ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয় এবং অক্টোবর ২০২৩ শেষে ২৬ দমমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়, যা দিয়ে প্রায় ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

 


আরও বলা হয়েছে, বর্তমান দেশে মাথাপিছু আয় উন্নীত হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলারে, যা ২০০৫-০৬ সালে ছিল মাত্র ৪২৭ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি হয়েছে প্রায় ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা, যা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় জিডিপি এখন প্রায় ১০ গুণ। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজাটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে তা ছিল মাত্র ৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। এ সময়ে বাজাটের আকার বড় হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ গুণ। বাজেট ঘাটতি আশানুরূপভাবে জিডিটির ৫ শতাংশে সীমিত রাখা হয়েছে গত ১০ বছরে।

 


মুদ্রা সরবরাহ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে- মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়-উপকরণ (ইনস্ট্রুমেন্ট) হবে নীতি সুদহার ব্যবহার। কর্মোপযোগী প্রশিক্ষিত যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সরবরাহ সম্প্রসারণ করা হবে। ক্ষুদ্র কুটির ও মাঝারি শিল্প এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সহজলভ্য করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিকল্পনা মাফিক পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি (রিজার্ভ) রাখা হবে এবং প্রকৃত কার্যকর বিনিময় হার (রিয়াল ইফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট) ও অভিহিত বিনিময় হার (নমিনালি এক্সচেঞ্জ রেট) সংগতিপূর্ণ করা হবে। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে অনিশ্চয়তা লাঘব করবে। অর্থনীতিবিদ, ব্যাংক ও আর্থিকখাত পরিচালনায় অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ গ্রহণ ও সম্পৃক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ব্যাংকসেবার দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। ঋণ অনুমোদন ও বিতরণে দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইন প্রয়োগের ধারা অব্যাহত থাকবে। খেলাপী ঋণ আদায়ের জন্য আইন প্রয়োগ এবং ব্যাংকে বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি রাখার বাধ্যবাদকতা অব্যাহত থাকবে।

 


ইশেতেহার প্রণয়ন কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ইশতেহারে প্রথমে পটভূমি থাকবে বাংলাদেশের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি, বিদেশি শক্তি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং দেশের মধ্যে যারা বিদেশিদের পা চাটা এদের বিষয়ে কী কর্মসূচি নেবো, কী কৌশল অবলম্বন করবো, কীভাবে মোকাবিলা করবো- এগুলোও থাকবে এবারের ইশতেহারে। ইশতেহারে কৃষি, তরুণ, মাদকসহ বিভিন্ন বিষয়ে আওয়ামী লীগের সুস্পষ্ট কর্মসূচি ও প্রতিশ্রæতি থাকছে। এবারের ইশতেহারে যুব ও নারীদের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে। দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নানা পরিকল্পনা- যেমন কর্মসংস্থান, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ শিল্পায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/অ