দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনের মাঠ।প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়েও প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন অবিরত। নৌকা আর ঈগল প্রতীকের প্রার্থীরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী নিজে এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা দিনরাত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টার সাঁটানো, মাইকিং, পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা ও ঈগলের মধ্যে। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি আব্দুল মমিন মন্ডল এর সাথে সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী ও ঈগল প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। নির্বাচনে কে হচ্ছেন এই আসনের সংসদ সদস্য তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। সাবেক মন্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সকল হিবাস-নিকাশ পাল্টে যাচ্ছে। কে বিজয়ী হবেন তা কেউ সঠিক বলতে পারছেন না। তবে লড়াই হবে হাড্ডা-হাড্ডি এমনটাই মনে করছেন ভোটাররা। নৌকা-ঈগলের লড়াই জমে উঠেছে। দলীয় নেতাকর্মীরা দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে পদ বঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে ঘিরে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে চলছে প্রচার-প্রচারনা। কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। এছাড়া এই আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। ত্রীমুখী লড়াই হতে পারে এই আসনে। মেজর মামুন চৌহালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাকিয়ে আছেন বিএনপি-জামায়াতের ভোটের দিকে।
সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে এক সময়ে দখলে ছিলো সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের। তিনি এই আসন থেকে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য
নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আব্দুল লতিফ বিশ্বাস মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একক নেতৃত্ব দেন এই আসনে। দলের তৃনমূল নেতাকর্মীর আস্থার প্রতিক হয়ে উঠেন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেও ২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। দলীয় মনোনয়ন পান শিল্পপতি আব্দুল মজিদ মন্ডল। এর পর থেকে এই আসন নিয়ন্ত্রন চলে যায় আব্দুল মজিদ মন্ডলের পরিবারের হাতে। এখান থেকে বিরোধ শুরু হয় লতিফ বিশ্বাস ও আব্দুল মজিদ মন্ডলের পরিবারের মধ্যে।
পরে ২০১৮ সালে এই আসনের মনোনয়ন পান আব্দুল মজিদ মন্ডলের ছেলে আব্দুল মমিন মন্ডল। পরে আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে বানানো হয় সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। বিভক্ত হয়ে পড়ে দলের নেতাকর্মীরা।
২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করেন বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় আব্দুল মমিন মন্ডলকে। আর মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নৌকার গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল বিশ্বাসের ঈগল প্রতিক। এনিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
ভোটাররা বলছেন একজন পুরাতন নেতা আর আরেকজন নৌকা প্রতিক। দলের নেতাকর্মীরাও দ্বিধা বিভক্তিতে পড়েছেন। তবে আব্দুল মমিন মন্ডলের বেশ সুনাম রয়েছে। গত ৫ বছরে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ওঠেনি। তিনি ক্লিন ইমেজের মানুষ। এজন্য দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে ভালো বাসেন। এবং তাকেই সবসময় দলীয় নেতা-কর্মীদের ও সাধারণ মানুষ তাদের পাশে চায়।
এদিকে নৌকা-ঈগলের দ্বন্দ্বে সুবিধা নিতে চান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ এই আসন এই সময় বিএনপি-জামায়াতে ঘাটি ছিলো। বিপুল পরিমান ভোট রয়েছে বিএনপি জামায়াতের।
বিএনপি ও জামায়াতের ভোট নিতে মরিয়া আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি চৌহালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তার বাবা আনছার আলী সিদ্দিকী বিগত বিএনপি সরকারের সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনিও বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সর্বশেষ চৌহালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। তিনিও ভোটের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হাকিম বলেন, দলের উর্ধে কেউ না। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আব্দুল মমিন মন্ডলকে নৌকা প্রতিক দিয়েছেন। দলের কর্মী সমর্থকরা তাকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন। এই আসনে মমিন মন্ডলের বিকল্প নেই। তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। নদী ভাঙন রোধে প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এলাকার মানুষ তার উন্নয়নে খুশি। আগামী ৭ জানুয়ারী নৌকা বিজয়ী হবে।
বেলকুচি উপজেলার পূর্ব দেলুয়া গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখ বলেন, খুব বিপদে পড়েছি। একজন নৌকা নিয়ে এসেছেন আর আরেকজন পুরাতন নেতা। কে ভোটে উঠবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে নৌকা-ঈগলের মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে।
চৌহালী উপজেলার আব্দুল হাই বলেন, তিন জন প্রার্থী শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। আমার তো মনে হয় নৌকা-ঈগল-কেচি মার্কা লড়াই হবে। বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গেলে ভোটের হিসাব পাল্টে যাবে। আর তারা যদি ভোট কেন্দ্রে না যায় তাহলে নৌকা-ঈগলের মধ্যে জোর লড়াই হবে।
ভোরের আকাশ/অ