মানিক লাল ঘোষ: দেশি বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সারা দেশ জুড়ে এখন নির্বাচনী উৎসব। ৭ জানুয়ারি আসতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকী। । সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে , বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন শুধু মাত্র গণতান্ত্রিক চর্চার ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচনই নয়, জনগণই যে দেশের ক্ষমতা পালাবদলের মুল নিয়ামক শক্তি আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোকে তা জানান দেয়ারও।
ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা সম্ভব আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাও জানান দেয়ার নির্বাচন এটা। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ইতিহাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে অনন্য এক ঐতিহাসিক নির্বাচন। একদিকে গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা অন্যদিকে পরাশক্তির আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষার নির্বাচন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির মহাসড়কে বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যহত রাখতে ইতোমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানে ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরানো, গণমানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যে দলটির নামের সাথে মিশে আছে এদেশের জন্মের ইতিহাস, সকল বৃহৎ অর্জন, মিশে আছে মাটি ও মানুষের শ্রমের ঘ্রাণ। কোটি কোটি তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার গল্প। দেশের জন্য, চেতনার প্রশ্নে আপোষহীন থেকে জীবনদানের ইতিহাস।
আওয়ামী লীগ ঘোষিত ইশতেহারে সরকারের টানা তিন মেয়াদের ১৫ বছরের অর্জন এবং আবারও দেশের জনগণের সেবার দায়িত্ব পেলে দেশের উন্নয়নে তাঁদের যে কর্মপরিকল্পনা তা তুলে ধরা হয়েছে ।
২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনার ধারাবাহিকতাও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত রয়েছে। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ১১টি গূরত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
জনগণের কল্যাণে গণমানুষের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবনায় জনগণই গুরুত্ব পায় এই বিবেচনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহার রয়েছে ---
১. দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো। ৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৭. নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা। ৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা এবং ১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যেই এই ১১ টি বিষয়ে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। আর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে এই ১১ টি বিশেষ বিষয়ের প্রতিটির গূরত্ব অপরিসীম।
কি চায় দেশের জনগণ তা জরিপ করে তাদের ভাবনার প্রতিফলন ঘটায় আওয়ামী লীগ। প্রতিটি নির্বাচনে জনগনের ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে আশাজাগানিয়া শ্লোগান নিয়ে ইশতেহার প্রকাশ করে গণমানুষের সামনে হাজির হয় আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ২০১৮ সালের ইশতেহারের শ্লোগান ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ ।
২০১৮ সালের সেই ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ ব-দ্বীপ গড়ে তোলারও পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল।৷ ইশতেহার এবার তরুণ সমাজকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের কাজে লাগিয়ে তারুণ্য নির্ভর একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নির্বাচনে বহুদলের অংশ গ্রহণ ও ভোটের আগে তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার নিয়ে জনসমর্থন আদায়ে নির্বাচনী ইশতেহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্রদর্শন ও জনভাবনা গণমানুষের কাছে উপস্থাপিত হয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় এদেশে যখনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী দল রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল তখনই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। তাই অতীতের সকল ইশতেহার পর্যালোচনা দেখা যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার মানেই তা জনবান্ধব, তারুণ্যবান্ধব। আওয়ামী লীগের ইশতেহার মানে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মাইল ফলক।। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার মানেই ডিজিটাল বাংলাদেশ,ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানবান্ধব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে কাজে লাগিয়ে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে স্মার্ট নাগরিক সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ অনেক গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে পূর্বের ন্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন নিশ্চিত করার এবং অবকাঠামো উন্নয়ন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার চর্চার প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ঘোষিত ইশতেহার পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আগামী পাঁচ বছরের জন্য জনতার রায় পেলে আগামী সরকারের প্রধান দুটি লক্ষ্য থাকবে জনকল্যাণ ও সুশাসন। গণমানুষের জণ্যই রাজনীতি, সবার ওপরে মানুষ সত্য এই ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য যা যা দরকার তা করবে আওয়ামী লীগ এমন বিশ্বাস রয়েছে এদেশের মানুষের । সুশাসন ইতিবাচকতার পতাকা তুলে ধরে এবং নেতিবাচকতাকে বর্জন ও দমনে আওয়ামী লীগের দৃঢ় অঙ্গীকার ও দুর্নীতিবাজদের অর্থ-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হবে- দলটির সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার এমন সাহসী উচ্চারণ নিঃসন্দেহে প্রশাসন, সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা। এই নীতির বাস্তবায়ন হলে একদিকে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরে দুর্নীতিবাজদের শাস্তিদান নিশ্চিত করা যাবে। অন্যদিকে ছলেবলে কৌশলে অবৈধ উপায়ে গ্রাস করা দেশ ও দেশের মানুষের অর্থ-সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে তা দেশের মানুষেরই কল্যাণে ব্যবহারের দিকটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ননে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
গনতন্ত্র প্রিয় এদেশের মানুষের কাছে নির্বাচন হলো এক মহোৎসব। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই জনসাধারণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকে। ইশতেহার তখনই জনগণের ভালোবাসা ও মর্যাদা লাভ করে যখন তার প্রতিফলন নতুন সরকারের কর্মকান্ডে দেখা যায়। আওয়ামী লীগের টানা তিন নির্বাচনের ইশতেহার এ দেশের মানুষ দেখেছে। কথা দেওয়া ও কথা রাখার মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান থাকে, এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ব্যতিক্রম তা সবার জানা। কারণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মতো একজন সৎ, বিচক্ষণ, সাহসী, দূরদর্শী ও দেশপ্রেমিক জননন্দিত নেতা। যার কথা ও কাজে মিল থাকে। দেশ পরিচালনায় ইশতেহারে ঘোষিত নীতি-আদর্শের প্রতিফলন এবং জনতার কাছে দেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়ন সব সময়েই কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ওপরেই নির্ভর করে দেশবাসীর আস্থা অর্জনের বিষয়টি। যা মোকাবিলা করা শুধু শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। আওয়ামী লীগের ইশতেহার তাই নিঃসন্দেহে জনমানুষের ইশতেহার হয়ে উঠছে। সংগত কারণেই তাই প্রত্যাশা, জাতির স্বপ্নপূরণ ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন।আর এ কারনেই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাতেই বারবার আস্থা এদেশর জনগণের।
ভোরের আকাশ/আসা