অনুকূল আবহাওয়া ও চলতি মৌসুমে আলুর ক্ষেতে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো রোগবালাই দেখা না দেয়ায় এবার জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আলু চাষিরা লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
গত বছরগুলোয় আলুতে আশানুরূপ দাম না পেলেও এবার বাজারে ভালো দাম থাকায় সে ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হবেন এমনটাই আশা কৃষকদের। তবে ভরা মৌসুমে বাজারে আলুর দাম কমে গেলে বা বাড়ন্ত আলুতে রোগ বালাই দেখা দিলে লোকসান গুনতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
এক সময় আমন ধান কাটার পর বোরো রোপণের আগ পর্যন্ত জমিগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকত। এখন সে জমিগুলো সবুজে ভরে গেছে আলু গাছে। এসব জমিতে আলুচাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে কৃষকদের। ধানের পর আলুই এখন এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেতে আগাছা পরিস্কার, আলু বাধা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এবার মাঠে স্টিক, ডায়মন্ড, সানসাইড ও নতুন ১২/১৩ জাতের আলু লাগিয়েছেন তারা । মাঠে এখন চোখ জুড়ানো সবুজে ভরা আলু গাছের বাতাসে দোল খাওয়া মাঠ ।
উপজেলার গোড়না আর্দশ গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ এবার ১ একর জমিতে স্টিক জাতের আলু চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরীসহ প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতি বিঘায় ১শ’ থেকে ১১০মন আলুর ফলন আশা করছেন।
উপজেলার হরেন্দা গ্রামের আলু চাষী হাফিজুর রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না ঘটলে এবং বাজারে দাম স্বাভাবিক থাকলে এবার আলু বিক্রি করে অনেক লাভবান হওয়া যাবে। তিনি বলেন, খরচ বাদে প্রতি বিঘা জমির আলু বিক্রি করে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হবে। আলু রোপনের ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যেই তোলা যায় বলে জানান।
রুনিহালি গ্রামের আলু চাষী শফিকুল ইসলাম শাহিন বলেন, এবার আলু ক্ষেতে তেমন রোগ বালাই নাই। আলুরও বাম্পার ফলন হয়েছে। বিক্রির সময় দাম ভাল থাকলে অনেক লাভবান হবেন । তবে এসিআই কোম্পানির আলু বীজ ক্রয় করে অনেক কৃষক এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৬শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এবার ৪০ হেক্টর জমিতে বেশি চাষাবাদ হযেছে। অপর দিকে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে।
ইতিমধ্যে আগাম জাতের আলু প্রায় শেষের পথে। এবার আগাম জাতের আলু চাষীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে বলে জানা গেছে। বাজারে আগাম জাতের আলু ২ হাজার ৮শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার টাকায় প্রতিমণ আলু বিক্রি হচ্ছে।
পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, এবার অনুকূল আবহাওয়া থাকার কারণে মাঠে আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সার্বক্ষণিক মাঠে নজরদারি ও প্রয়োজনে কৃষদের পরামর্শ প্রদান করছে। ক্ষেতে কোন সমস্যা দেখা দিলে কৃষি অফিসকে অবহিত করার জন্য কৃষকদের অনুরোধ জানান তিনি।
ভোরের আকাশ/ সু