রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে বিভিন্ন মাঠ ছেয়ে গেছে সরিষার হলুদ রঙের ফুলে। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় কৃষকেরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। উপজেলায় গত বছরের চেয়ে এবার ৫৮৭ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এবার ১ হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এবার চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭৫০ হেক্টর জমিতে। গত বছর উপজেলায় সরিষার চাষ হয় ৪৪৫ হেক্টর জমিতে। কয়েক বছর ধরে ভোজ্য তেলের দাম বাড়তে থাকায় এবং বাজারে সরিষার চাহিদা থাকায় চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন এই ফসল চাষে। অনেকেই দো-ফসলি জমিতে সরিষা আবাদ করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বালিয়াকান্দির ইসলামপুর ইউনিয়নে ২৫৬ হেক্টর, বহরপুর ইউনিয়নে ১০০ হেক্টর, নবাবপুর ইউনিয়নে ২০০ হেক্টর, বালিয়াকান্দি ইউনিয়নে ৯০ হেক্টর, নারুয়া ইউনিয়নে ১০০ হেক্টর, জঙ্গল ইউনিয়নে ১১৬ হেক্টর, জামালপুর ইউনিয়নে ১৭০ হেক্টরসহ মোট ১ হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
বালিয়াকান্দির ৭ ইউনিয়নের চাষিদের উন্নত বীজ বপনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন সময় মাঠ দিবস ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং বিভিন্ন উপকরণ কৃষি অফিস থেকে দেওয়া হয় বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। তারা আরও জানান, কৃষকদের সামনে অল্প জমিতে বেশি ফলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রচলিত দেশি জাতের সরিষার চেয়ে বারি ও বিনার উদ্ভাবিত উন্নত জাতের সরিষায় ফলন বেশি। এ কারণে চাষিরাও আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন করাও সম্ভব হচ্ছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার চাষি সোলায়মান খান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এক সময় শুধু একটি ফসল ফলানো সম্ভব হতো। কিন্তু সরকারের আন্তরিকতায় এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমরা বছরে সরিষাসহ তিন ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছি। তারমধ্যে এবার সরিষারও ভালো ফলন হয়েছে।’
আরেক চাষি মো. কামরুল খান বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে সাত মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করা যায়।’
উপজেলার সরিষা চাষি মো. রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘মৌসুমি ফসল হিসেবে উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে এক দিকে যেমন ফলন বেশি হচ্ছে অন্যদিকে অতিরিক্ত ফসল পাওয়ার ফলে আর্থিকভাবে আমরা লাভবান হচ্ছি। আমরা কৃষি অফিসের নির্দেশনায় লাভবান হচ্ছি।’
চাষি মো. ফরহাদ খাঁ বলেন, ‘সরিষা চাষে রোপণ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বাড়তি তেমন কোনো খরচ নেই। শুধুমাত্র জমিতে সার প্রয়োগ করতে হয়। এতে বাড়তি কোনো সেচ দিতে হয় না, যার ফলে সরিষা চাষে আমরা বেশ লাভবান হচ্ছি। নতুন কৃষকেরাও সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।’
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বালিয়াকান্দিতে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষার আবাদ বাড়ার মাধ্যমে তেলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে ব্লক অনুযায়ী প্যাটার্ন ভিত্তিক শস্য বিন্যাসের ফলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছর বালিয়াকান্দিতে সরিষার আবাদ ছিল ৪৪৫ হেক্টর, এ বছর আবাদ বেড়ে ১ হাজার ৩২ হেক্টর হয়েছে।’
রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সরিষার আবাদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৌচাষেও আগ্রহী করে তোলার জন্য নিরলসভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে চলেছে। তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় এ বছর ৯১ জন চাষিকে প্রদর্শনী ও ১০ জন চাষিকে মৌ কলোনিসহ মৌ বাক্স দেওয়া হয়েছে। সরিষার আবাদ বৃদ্ধিসহ মৌ কলোনির মাধ্যমে পরাগায়নের ফলে ফলন বৃদ্ধি ও মধুর উৎপাদনে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।’
ভোরের আকাশ/ সু