logo
আপডেট : ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৮:০৩
ফেলানী হত্যার ১৩ বছর পার,এখনও বিচারের অপেক্ষায় পরিবার
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

ফেলানী হত্যার ১৩ বছর পার,এখনও বিচারের অপেক্ষায় পরিবার

ফেলানী স্মৃতি স্তম্ভ

সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ রোববার। ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফর গুলিতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর নিথর দেহ। আর এ ঘটনা সে সময় নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা জাতিকে।

 


ফেলানী হত্যাকাণ্ডের কারণে গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফের বিশেষ কোর্ট দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে। এ রায় প্রত্যাক্ষ্যাণ করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহযাগিতায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পার হয়ে ১৩ বছরে পড়লেও এখনো ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় ফেলানীর পরিবার।

 


মূলত জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামের দরিদ্র নূরুল ইসলাম পেটের তাগিদে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন ভারতে। পরিবার নিয়ে তিনি থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। নূরুল ইসলামের বড় মেয়ে নিহত ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। বিয়ের উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে নিজ দেশে আসার জন্য ওই বছরের ৭ জানুয়ারি ভোর ৬টার দিকে ভারতের কাঁটাতার বেয়ে আসতে থাকে সে। দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার টপকে পার হয় ফেলানীর বাবা।

 

পরে ফেলানী কাঁটাতার পার হওয়ার সময় বিএসএফর গুলিতে বিদ্ধ হয় সে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আধা ঘণ্টা ধরে কাঁটাতারের ওপরই ছটফট করতে থাকে সে। পরে সেখানে ঝুলন্ত অবস্থাতেই নির্মমভাবে মৃত্যু হয় কিশোরী ফেলানীর। এরপর সকাল পৌনে ৭টা থেকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা ফেলানীর নিথর দেহ কাঁটাতারে ঝুলে থাকে।

 

এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালর ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহার জেনারেল সিকিউরিটি ফার্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফের এ কোর্টে স্বাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ।

 


ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাক্ষাণ করে ফের বিচারের দাবি জানায় ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আবারও বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

 


২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানির তালিকা ভুক্ত হয়।

 

কিন্তু ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালর ১৮ মার্চ করোনা মহামারি শুরুর আগে শুনানির জন্য দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি আজ পর্যন্ত।

 


এদিকে, মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম। ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, ফেলানী হত্যার ১৩ বছর গেলেও বিচার পাইনি। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে বিচারটা নিয়ে গেলাম, কয়েকবার শুনানির তারিখ দিলেও তা পিছিয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে শুনলাম শুনানি হবে। তবে কবে হবে এর কোনো তারিখ পাইনি। অন্তত মৃত্যুর আগে ফেলানীর হত্যাকারীদের বিচার নিজ চোখে দেখে যেতে চান তার বাবা।

 


এনিয়ে কুড়িগ্রামর পাবলিক প্রসিকউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতের মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার রিট তালিকাভুক্ত হয়েছে। সেটি যত দ্রুত শুনানি হবে, ততই মামলাটির অগ্রগতি হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু