logo
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৬:৩১
পিঠায় স্বচ্ছলতা আনলেন সংগ্রামী মাজেদা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

পিঠায় স্বচ্ছলতা আনলেন সংগ্রামী মাজেদা

মাজেদা বেগমের পিঠা খেতে ছুটে আসছেন পিঠাপ্রিয় মানুষজন

অভাবের সংসারে ৫ মেয়ে ও দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে কোনরকম দিন যায় তার। স্বচ্ছলতা আনতে ধীরে ধীরে শুরু করেন পিঠা বিক্রি। বাড়তে থাকে এর পরিধি। বলছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মাজেদা বেগমের কথা। তার হাতে তৈরি শতাধিক রকমের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খেতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসছেন পিঠা প্রিয় মানুষজন।

 

প্রতিদিন ৮টি চুলায় ১ হাজারেরও বেশি চিতই পিঠা তৈরি করেন। প্রতিটি চিতই বিক্রি হয় ১০ টাকায়। তবে ডিম ও মসলাসহ স্পেশাল ডিম পিঠা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। পিঠার সঙ্গেই ১০০ পদের ভর্তা ফ্রি দেয়া হয়; যার যতবার খুশি ভর্তা নিয়ে খেতে পারবে।

 

উপজেলার বাহেরচর বাজারের পিঠা দোকানকে কেন্দ্র করে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। মাসে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকার পিঠা বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

মাজেদা বেগমে বয়স প্রায় ৫০। দীর্ঘ ৯বছর যাবৎ স্বামীকে সাথে নিয়ে চিতই পিঠা বানিয়ে সংসার চালান তিনি। ১০০ পদের ভর্তা বানানোর জন্য ১২-১৩ রকমের শুঁটকি, বিভিন্ন রকমের মাছ, কয়েক রকমের ডাল, বাদাম, ধনেপাতা, মরিচ, মৌসুমি সবজি ব্যবহার করেন তিনি। অভিনব কায়দায় কাস্টমারদের পিঠার প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলার জন্য মাজেদা বেগম কাস্টমারদের দিকে পিঠা ছুঁড়ে মারে, সেই পিঠা কাস্টমাররা ক্যাচ নিয়ে সানন্দে বিভিন্ন পদের ভর্তা মিশিয়ে খেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। তার এই চিতই পিঠার দোকানকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ৫০-১০০ জন মানুষের জটলা লেগে থাকে।

 

আড়াইহাজার থেকে পিঠা খেতা আসা মামুন খাঁন নামের একজন বলেন, আমাদের এলাকায় চিতই পিঠা পাওয়া গেলেও ১০০ পদের ভর্তা পাওয়া যায় না। তাই আমরা ভর্তার ভিন্ন স্বাদ নিতেই এখানে আসা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাজেদা আপার পিঠা বানানো দেখে বন্ধুবান্ধবসহ এসেছি।

 

পার্শ্ববর্তী নরসিংদী থেকে পিঠা খেতে আসা একজন বলেন, আমরা পাঁচটি মোটরসাইকেল নিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে এখানে পিঠা খেতে এসেছি। বাঞ্ছারামপুরের ফেসবুক বন্ধুর পোস্টের মাধ্যমে ৯০ থেকে ১০০ পদের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। চিতই পিঠা দিয়ে টাটকা ভর্তার স্বাদ বেশ ভালই লেগেছে।

 

মাজেদা বেগমের স্বামী মো. রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, 'আমার ৫ মেয়ে। নয় বছর যাবত পিঠা বানানোর ব্যবসা করে ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, ৩ মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। আমাদের সংসার ভালই চলছে, আমরা বেশ আনন্দে আছি। অনেক থানার মানুষ আমার এখানে পিঠা খেতে আসে। মানুষ আনন্দ পায় আমরাও বেশ সুখে আছি।

 

মাজেদা বেগম বলেন, আগে পরিবারে অভাব-অনটন ছিল। এখনকার অবস্থা অনেক ভালো। ৩ বছর ধরে তার পিঠার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। তবে ৯ বছর যাবৎ আমি পিঠা বিক্রি করছি। আমি প্রথমে ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে পিঠা বিক্রি শুরু করলেও এখন আমি বেশ ভালো আছি। নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, হোমনা, দাউদকান্দিসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পিঠা খেতে আসে। শুক্রবারে ভিড় থাকে বেশি। শুক্রবার দিন অনেক বেশি পিঠা বিক্রি হয় বলে জানান মাজেদা।

 

ভোরের আকাশ/ সু