সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নদী খননের সময় একটি কালভার্ট ভেঙ্গে ফেলা হয়। গত দুই বছরে কালভার্টটি পুন:নির্মান না করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন উল্লাপাড়া পৌরবাসী। এই কালভার্ট দিয়ে নদীর দু-পাড়ের সাধারন মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা যাতায়াত করতো এবং বাজারে মালামালা নিয়ে আসতো ব্যবসায়ীরা।
উল্লাপাড়া পৌর শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফুলজোড় নদীটির খনন কাজ শেষ হলেও পরবর্তীতে কালভার্টটি পুন:নির্মান না করায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে ভোগান্তিতে পড়েছেন নদীর দু-পাড়ের হাজারো মানুষ। কালভার্ট দুটি না থাকায় কৃষকের উৎপাদিত কৃষি পন্য নিয়ে সরাসরি বাজারে আসতে পারছেনা। এ কারণে নদী খননের কোনো সুফল ভোগ করতে পারছেন না নদীর তীরবর্তী সাধারণ মানুষ ও পৌর এলাকাবাসী।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও উল্লাপাড়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, উল্লাপাড়া পৌর শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফুলজোড় নদীর প্রাণ ফেরাতে ২০২১ সালে নদীটি খননের উদ্যেগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। উল্লাপাড়া থেকে শাহজাদপুর উপজেলার চর আঙ্গারু পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার নদী পুন:খননের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ১৫.০২ কোটি টাকা। নদীটি উল্লাপাড়া পৌর শহরের মধ্য দিয়ে খালিয়াপাড়া, ভট্র কাওয়াক, বজ্রাপুর, চাঁদপুর, ভৈরব হয়ে শাহজাদপুর উপজেলার চর আঙ্গারু দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইতিমধ্যে খনন কাজও শেষ হয়েছে।
তবে নদী খননের সময় উল্লাপাড়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড এলাকায় একটি কালভার্ট ভেঙ্গে দেয়া হয়। এর পর থেকে এখান দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। নদী খনন কাজ শেষ হলেও কালভার্টটি পুন:নির্মান না করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। যাতায়াতের সুবিধার্থে দ্রুত নদীর উপর কালভার্টটি পুন:নির্মান এবং নদীর দুপাশে চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মানের দাবী জানিয়েছেন উল্লাপাড়া শহরবাসী।
শ্রমিক নেতা নুর ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, এখানে একটি ব্রীজ ছিলো। ব্রীজটি নদী খননেন সময় ভেঙ্গে দেয়া হয়। ব্রীজটি খুব দরকার। প্রায় ৩ বছর হয়ে গেল পৌরসভা ব্রীজটি নির্মানে উদ্বোগ নিচ্ছে না। সহজেই মানুষ হাট-বাজারে আসতে পারছে না। এতে পরিবহন ব্যায় বেড়েছে। এপাড় থেকে ওপাড়ে মালামাল নিয়ে যেতে অনেক দুর্ভোগে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
উল্লাপাড়া কামিল অনার্স এম.এ মাদ্রসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজ, সরকারী আকবর আলী কলেজ, উল্লাপাড়া কামিল অনার্স এম.এ মাদ্রসার সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা এই কালভার্ট দিয়ে চলাচল করতো। কিন্তু নদী খননের সময় কালভার্টটি ভেঙ্গে ফেলায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্য সৃষ্টি হচ্ছে। আগে সহজেই যাতায়াত করা যেতো। এখন অনেক ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে সময় লাগছে বেশি। কালভার্টটি দ্রুত পুন:নির্মান করা হলে শিক্ষার্থীরা ও এই এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম ভোরের আকাশকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব ছিলো নদী খনন কাজ। ইতিমধ্যে কাজ শেষ হয়েছে। খননের সময় যে কালভার্ট ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তা পুন:নির্মান করবে উল্লাপাড়া পৌরসভা। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের আর কাজ নেই।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, ফুলজোড় নদী করতোয়া নদীর শাখা। পাকিস্তান ও ব্রিটিশ আমলে ব্যবসায়ীরা মালামাল নিয়ে নৌকা করে উল্লাপাড়ায় নিয়ে আসতো। নদীটি মৃত প্রায় ছিলো। অনেকে নদীর বিভিন্ন জায়গা দখল করে নিয়েছিলো। আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নদীটি উদ্ধারে চেষ্টা করেছি। রাজনৈতিক কারনে আমি পুরোপুরি সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে পারিনি।
তবে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে খালের দুপাড়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করেছি। নদী সংস্কার করতে গিয়ে কালভার্ট ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আমরা একটি প্রজেক্ট পেয়েছি। এই প্রজেক্টোর মাধ্যমে দ্রুত সময়ে টেন্ডার আহবান করে নদীর দু-পাশে দুটি ব্রীজ নির্মান কাজ শুরু করবো। আপাতত মানুষের চলাচলের জন্য দুটি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
ভোরের আকাশ/ সু