উত্তরের জনপদ গাইবান্ধায় মাঘের তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ভুট্টা, মরিচ, আলু, গম, সরিষাসহ, শীতকালীন শাকসবজির আবাদও ঝুঁকিতে আছে। এতে করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
মাঘের এই কয়েক দিনের তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় হাইব্রিড জাতের ৩ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের বীজতলার অধিকাংশ চারাই লালচে-হলুদ হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও লালচে হওয়ার পর আস্তে আস্তে পাতার আগা শুকিয়ে যাচ্ছে এবং অল্প দিনের মধ্যে পাতাগুলো মরে যাচ্ছে।
অন্যদিকে গম-ভুট্টার ফসলকে তেমন ক্ষতি না করতে পারলেও টমেটো, কপি, শিম, আলুসহ নানান জাতের শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে আলুতে মড়ক দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও বীজতলায় বোরো ধানের চারাগুলো ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে রোপণের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া শীতকালীন সবজি লাউ, ফুলকপি, টমেটো, শিম, বেগুন আর গাজরের ফলন কমতে শুরু করছে।
সদর উপজেলার বল্লমঝাড় এলাকার কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ১৫ শতাংশ জমিতে এবার বোরো ধানের বীজ লাগানো হয়েছে। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে বীজের চারাগুলো সাদা বর্ণের হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কি হবে বলা যাচ্ছে না।
সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের বাদল মিয়া বলেন, ‘গত বছর বন্যার পরে চড়া দামে আমনের চারা কিনতে পারিনি বলেই আমনের আবাদ না করে জমি পরিত্যক্ত রেখেছিলাম। এ বছর যদি ঘন কুয়াশায় বোরোর চারা মারা যায়, তাহলে কোনোভাবেই বোরো চাষ সম্ভব হবে না।’
এ বছরের নতুন আলুচাষি ওবায়দুল রহমান বলেন, আমি এই প্রথম আলু চাষ করেছি। এর আগে কখনো আলু চাষ করা হয়নি। প্রথমবার আলু চাষ করেই যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। যে কুয়াশা আর যে শীত, আলু গাছ ঝড়ে যাচ্ছে নষ্ট হচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়েছি।
তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার দেখা পাইনি। আমরা সহযোগীতা পাবো কার কাছ থেকে। এভাবেই তো আমাদের কৃষি খাত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস মিয়া বলেন, এসব বোরো ধানের বীজতলা রক্ষার জন্য ইউরিয়া ও জিপসাম সার প্রয়োগের পাশাপাশি প্রতিদিন বীজতলার কুয়াশা ঝরিয়ে দিতে হবে। চারাগুলোতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।
গাইবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ভুট্টা প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর, আলু ১১ হাজার ১৫১ হেক্টর, সরিষা ১০ হাজার হেক্টর, শীতকালীন শাকসবজি ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর, গম ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম ভোরের আকাশকে বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। প্রায় ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শীতে আক্রান্ত বীজতলা, ভুট্টা, মরিচ, আলু, গম, সরিষা,শাকসবজির বিষয়ে উপ-সহকারী কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে ঘুরে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তারপরও কোনো ধরনের সমস্যা হলে কৃষি অফিসকে জানালে মাঠে গিয়ে ফসল দেখে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
ভোরের আকাশ/ সু