logo
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৭:২০
রাঙামাটির ২৯টি ইটভাটা ‘অবৈধ’, থেমে নেই ইট তৈরি
রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটির ২৯টি ইটভাটা ‘অবৈধ’, থেমে নেই ইট তৈরি

ক্যাপশন : অবৈধ ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ

রাঙামাটিতে পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে অবৈধভাবে একের পর এক ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে দুটি নতুন ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তির তৎপরতায় পাহাড় কেটে এসব ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন ও পরিবেশবাদীদের আপত্তির পরও ইটভাটাতে বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

 


সর্বশেষ লংগদু আটারকছড়া ইউনিয়নের তিন ব্রিজ এলাকায় কেবিএম ব্রিকস ও বাঘাইছড়ির মারিশ্যা ইউনিয়নের তুলাবান-মুসলিম ব্লক সীমান্তে ফাইভ স্টার ব্রিকস নামের দুটি ইটভাটা তৈরি হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই ইটভাটার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তবে কোনোটিতেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। ২০ ও ২১ জানুয়ারি এ দুটি ইটভাটায় অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। দুটি ইটভাটার চুল্লি ভেঙে দেওয়া হয়।

 


জানা গেছে, রাঙামাটি জেলায় মোট ২৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে কাউখালী উপজেলায় ১৬টি, লংগদু উপজেলায় ৬টি, বাঘাইছড়িতে ৩টি, রাজস্থলীতে ৩টি ও কাপ্তাই উপজেলায় একটি ইটভাটা রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের তালিকায় আছে ২৫টি। বাকি চারটি তাদের তালিকায় নেই।

 


পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার ভোরের আকাশকে বলেন, রাঙামাটিতে কোনো ইটভাটারই পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। ফলে সব কটিই অবৈধ। গত বছর অভিযান চালিয়ে কাউখালীতে বেশ কিছু ইটভাটা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আরও অভিযান চালানো হবে।

 

মো. ফেরদৌস আনোয়ার জানান, ২০১৩ সালে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আইন হওয়ার আগে বিভিন্নভাবে ইটভাটা তৈরি হয়েছে। তবে আইন হওয়ার পর কোনো ব্যক্তিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।

 


ছাড়পত্র না থাকা ও অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণের বিষয়ে বক্তব্য জানতে কাউখালী ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মুঠোফোনে কল করা হয়। তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি।

 


১৯, ২০ ও ২১ জানুয়ারি এ তিন দিনে জেলার ৯টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এতে ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২১ জানুয়ারি লংগদুর কেবিএম ব্রিকস ও এডিবি ব্রিকসে অভিযান চালিয়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

 


২০ জানুয়ারি কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের জেবিএমকে ২৫ হাজার, বেতবুনিয়া মডেল ইউনিয়নের আমছড়ি গ্রামের মেসার্স কেবিএম ইটভাটাকে ২ লাখ, বাঘাইছড়ি উপজেলার পৌরসভার দুটি ও মারিশ্যা ইউনিয়নের একটি ইটভাটাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ধ্বংস করা হয় ১৫ হাজার ইট ও চুল্লি। এ ছাড়া ১৯ জানুয়ারি রাজস্থলীর দুই ইটভাটায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

 


জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ভোরের আকাশকে বলেন, রাঙামাটিতে ইট প্রস্তুত ও ভাটা নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছেন।

 


লংগদুর আটারকছড়া ইউনিয়নের তিন ব্রিজ এলাকার ইটভাটাটি নির্মিত হয়েছে বিশাল আকারের পাহাড় কেটে। ইটভাটার উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে কাপ্তাই হ্রদ। পশ্চিম দিকে পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে সড়ক। এই ইটভাটায় টিন দিয়ে তৈরি হয়েছে চুলার দুটি চিমনি।

 


সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ। চুল্লির আশপাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে অপরিপক্ব বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নে আমতলা ও কালাগাজী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড় কেটে নির্মিত চারটি ইটভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

 

কালাগাজী এলাকার ২০২ ব্রিকসের মালিক মো. আবদুল শুক্কুর ইটভাটা তৈরিতে অনুমতি না নেওয়ার বিষয়টি ভোরের আকাশের কাছে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সমন্বয় করে ইটভাটা পরিচালনা করে আসছি। ব্যয় কমানোর জন্য স্থানীয় বন থেকে গাছ সংগ্রহ করে ইট পোড়ানো হয়।’

 


প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ২৯টি ইটভাটার ১৭টিই পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছে। আশপাশের পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইট-কয়লা দিয়ে পোড়ানোর কথা থাকলেও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সংরক্ষিত ও গ্রামীণ বনের অপরিপক্ব গাছ। বিভিন্ন ফলদ বাগান থেকেও গাছ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য চরম হুমকি হয়ে উঠছে বলে মনে করে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।

 

ভোরের আকাশ/ সু