logo
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৫:৪৪
ত্যাগী নেতাদের দাবি, ঘাটাইল বিএনপিকে বাঁচান
আ. রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল

ত্যাগী নেতাদের দাবি, ঘাটাইল বিএনপিকে বাঁচান

নিস্ক্রিয় ও অযোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠন করায় ঘাটাইলের বিএনপি এখন ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে। সক্রিয় ও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী এজেন্ট দিয়ে ঘাটাইল উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করায় শহীদ জিয়ার আদর্শে প্রাণবন্ত ঘাটাইলের বিএনপি ধ্বংসের দোড় গোড়ায় পৌছেছে বলে অভিযোগ নেতাদের।

 


ত্যাগীনেতাদের ভাষ্য মতে এভাবে চলতে থাকলে ঘাটাইলের বিএনপি দিনদিন ঝিমিয়ে পড়বে। তাই তারা সকল কমিটি পুণর্গঠনের দাবি তুলেছেন। তারা বলেন, বর্তমান কমিটি কেন্দ্র ঘোষিত কোন কর্মসূচি পালন না করাই প্রমাণ করে দল ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রের প্রধান নায়ক ওবায়দুল হক নাছির। জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিকট ত্যাগীদের আকুতি ওবায়দুল হক নাছিরের হাত থেকে ঘাটাইলের বিএনপিকে বাঁচান।

 


২০২২ সালের ১২ মার্চ আহবায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিস্ক্রিয়দের হাতে ঘাটাইল বিএনপির আগামী নেতৃত্ব তুলে দেন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি। এ কমিটি পেয়ে নিষ্ক্রয়রা উল্লাস করলেও রাগে, ক্ষোভে, কষ্টে ও অপমানে ফুসে উঠে ত্যাগী নেতারা। ঘাটাইল উপজেলায় সিরাজুল হক সানাকে আহবায়ক ও আবু বক্কর সিদ্দিকিকে ১ নম্বর যুগ্ন-আহবায়ক এবং আলহাজ মো. বেল্লাল হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়।

 


অপর দিকে ঘাটাইল পৌরসভায় মো. আব্দুল বাছেদ করীমকে আহবায়ক ও মো. আনোয়ার হোসেন হেলালকে সদস্য সচিব করা হয়। ঘোষিত দুটি কমিটিতে নিস্ক্রিয় ও দুঃসময়ে দল এড়িয়ে চলা নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বঞ্চিতরা। ত্যাগী ও নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের বাদ দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ গত এক যুগে দলের সব কর্মসূচি এড়িয়ে চলা নেতাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া ঘাটাইলের বিএনপির ভবিষ্যত পরিণতি নিয়ে আশস্কা করেন অনেকেই।

 


পরবর্তীতে বাছেত করীমের গৃহকনো দায়সারা সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা ও পৌর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়। এ কমিটিতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি করা হয় সিরাজুল হক ছানাকে, সাধারন সম্পাদক করা হয় বেলাল হোসেনকে। পৌর বিএনপির সভাপতি করা হয় আব্দুল বাছেদ করীমকে এবং সাধারন সম্পাদক করা হয় আনোয়ার হোসেন হেলালকে। উক্ত দুটি কমিটির নেতাদের কেন্দ্র ঘোষিত কোন কর্মসূচিতে ঘাটাইলের রাজপথে দেখা যায় না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধে তাদের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। মূলত এ কমিটি দুটি ঘাটাইলের বিএনপি সুসংগঠিত না করে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

 


২০১৪ সালে সাবেক প্রতিমন্ত্রি লুৎফর রহমান খান আজাদকে সভাপতি ও আ.খ.মরেজাউল করীমকে সাধারন সম্পাদক করে ঘাটাইল উপজেলা বিএনপি গঠিত হয়। এক নেতার এক পদ এ নীতি অনুসরণ করে লুৎফর রহমান খান সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করলে সিনিয়নসহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম ভূঞা বুলবুলকে করা হয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। বুলবুল ভূঞার মৃত্যুর পর ২ নম্বরসহ সভাপতি তোফাজ্জল হক সেন্টুর কাঁধে পরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব।

 


অপরদিকে মঞ্জুরুল হক মঞ্জুকে সভাপতি ও ফারুক হোসেন ধলাকে সাধারন সম্পাদক করে গঠিত হয় ঘাটাইল পৌর বিএনপির কমিটি। গত প্রায় এক যুগে দুই দফা সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ দলের কর্মসুচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এ দুই কমটির অনেক নেতা মামলা-হামলা এবং জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন।অথচ তাদের ঠাঁই হয়নি নতুন উপজেলা ও পৌর কমিটিতে। বিশেষ করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল হক ছানা দীর্ঘ দিন দলীয় কর্মসুচিতে অনুপস্থিত রয়েছেন।

 

অন্য দিকে পৌর বিএনপির সভাপতি বাছেদ করিম তেমন একটা দলের পাশে থেকে হাঁটেননি। কোনো মামলাও নেই তার নামে। উপজেলা কমিটির ১ নং সদস্য ওবায়দুল হক নাছির কেন্দ্রীয় ছাত্র দলের সাবেক নেতা হলেও ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। উপজেলা বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়নি। বাসাইল উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা এ নেতার ঘাটাইলের বিএনপির সাধারন নেতাকমীদের সাথে কোনো পরিচিতি নেই। এই নামের কাউকে চিনেনা তৃর্ণমূলের কর্মীরা। ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক বারবার কারা নির্যাতিত নেতা আ.খ.ম রেজাউল করিমকে উপেক্ষা করায় বর্তমান কমিটির অনেক নেতাও বিস্মিত হয়েছেন।

 


ঘাটাইল পৌরবিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মুঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, দুঃসময়ে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন তাদের অবজ্ঞা করে ওই সময়ে যারা নিস্ক্রিয় ছিলেন এবং দল এড়িয়ে চলেছেন তাদের হাতে নতুন নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দলের কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন না করেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার রেওয়াজ চালু হলো। এটা ঘাটাইলের বিএনপির জন্য শুভকর নয়।

 


উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক আ.খ.ম.রেজাউল করিম বলেন, জেলা বিএনপির উচিত ছিলো ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের দিয়ে কমিটি করা। দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে যারা পদ পেয়েছেন, তারা বেশি বারাবারি করবেন না। অচিরেই আপনাদের বিদায় ঘন্টা বাজবে। আপনাদের নেতা বাসাইলের নাছিরকে শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিকেরা ঘাটাইল থেকে বিতারিত করবে।

 


টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাবেক অর্থসম্পাদক মাইনুল ইসলাম বলেন,১৮ সালের জাতীয়নির্বাচনের সময় যারা আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে নৌকায় ভোটপ্রাথনা করেছে তাদের বর্তমান উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।ঘাটাইলের বিএনপিকে সংগঠিত করতে হলে এ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি করতে হবে।মূলত ওবায়দুল হক নাছিরের হাত থেকে ঘাটাইলের বিএনপিকে বাঁচাতে হবে।

 


ঘাটাইলের পৌর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ফারুক হোসেন ধলা বলেন, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে যারা বীভৎসহাসি হাসছেন তাদের বলি রাগে, ক্ষোভে, কষ্টে ফুঁসে উঠা নেতা-কর্মীরা আপনাদের ধাওয়া করলে পালাবার জায়গা পাবেন না। এখনও সময় আছে পকেট কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি করুন। ত্যাগীদের জায়গা করে দেন। আর একটা কথা মনে রাখবেন ঘাটাইলের বিএনপিকে সুসংগঠিত রাখতে লুৎফর রহমান খান আজাদের বিকল্প নেই।

 


ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম খান দুলাল বলেন, কয়েকজন টাউট ঘাটাইলের বিএনপিকে ধ্বংস করতে আওয়ামীলীগের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। তদন্ত সাপেক্ষে ঘোষিত কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও যোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা না করা হলে ঘাটাইলের বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে।

 


এ ব্যাপারে কথা বলতে ওবায়দুল হক নাছিরের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

ভোরের আকাশ/ সু