logo
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৬:৩৪
চিনিকলের বর্জ্যে দূষিত জয়পুরহাটের চিরি নদ
জয়পুরহাট প্রতিনিধি

চিনিকলের বর্জ্যে দূষিত জয়পুরহাটের চিরি নদ

চিরি নদের পানি কালচে হয়ে গেছে, দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে

এক মাসে আগেও চিরি নদের পানি স্বচ্ছ ছিল। তখন নদের পানি দিয়ে ফসলি জমিতে সেচ দিয়েছেন জুয়েল হোসেন। গত কয়েক দিন আর সেচ দিতে পারছেন না। নদের পানি কালচে হয়েছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জুয়েল হোসেনের অভিযোগ, চিনিকল থেকে পানি ছেড়েছে। এ কারণে নদের পানির এই খারাপ অবস্থা।

 


জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর গ্রামে জুয়েল হোসেনের বাড়ি। এখান দিয়ে বয়ে গেছে চিরি নদ। চিরি নদের পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল মোত্তালেব বলেন, জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্যের পানিতে চিরি নদের পানি কালচে ও দুর্গন্ধ হয়েছে। এই দূষিত পানিতে মাছসহ কোনো পোকামাকড় জলজ প্রাণী বাঁচতে পারছে না।

 


চিনিকল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিনিকলের বর্জ্য নদে ফেলা হয় না। তা ছাড়া এখানে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) রয়েছে। চিনিকলের পানি চিনিকলেই সংরক্ষণ করা হয়।

 


চিরি নদে জয়পুরহাট খঞ্জনপুর ছোট যমুনা নদীর স্লুইসগেট থেকে আক্কেল উপজেলার সোনামুখী সেতুতে গিয়ে তুলসীগঙ্গা নদীতে মিলিত হয়েছে। জয়পুরহাট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি খাল (জয়পুরহাট চিনিকলের খাল বলে পরিচিত) সদর উপজেলার শুকতাহার পুরোনো শ্মশানে এসে চিরি নদে মিলিত হয়েছে।

 


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জয়পুরহাট শহরের খাল দিয়ে শুকতাহার পুরোনো শ্মশানে চিরি নদে চিনিকলের পানি ঢুকছে। জয়পুরহাট বিসিক শিল্পনগরীর পশ্চিম দিকে খালের পানি রং কালচে। চিনিকলের কাছে গিয়ে দেখা যায় বর্জ্য বের হওয়ার নালা বস্তা দিয়ে বন্ধ করা। তবে সেখান থেকে পানি চুইয়ে পড়ছে।

 


শুকতাহার গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই খাল দিয়ে চিনিকলের বর্জ্য পুরোনো শ্মশানের কাছে চিরি নদে পড়ছে। এবারও একইভাবে চিনিকলের বর্জ্য নদের পানিতে মিশে যাচ্ছে। নদে আগে মাছ ছিল। পানি ঢোকার পর নদে মাছ নেই। নদের পানি দিয়ে আর সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।

 


জয়পুরহাট-আক্কেলপুর সড়কের চিরি নদের ওপর জামালগঞ্জ সেতুর অবস্থান। জামালগঞ্জ সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতু উত্তর দিকে চিরি নদের পানি কালচে রং ধারণ করেছে। সেতুর দক্ষিণে দিকেও নদের পানির একই অবস্থা। পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

 


এলাকাবাসী বলেন, ১৫-২০ আগে চিনিকলের বর্জ্য নদে আসার পর পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। এরপর নদের পানি কালচে হয়। জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর এলাকা থেকে আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার নদের পানি কালচে হয়েছে।

 


রুকিন্দীর গ্রামের রহিমা বেগম বলেন, নদের পানি দিয়ে তিনি কাপড় ধোয়ার কাজ করতেন। নদে চিনিকলের বর্জ্য আসায় নদের পানি কালো হয়েছে। দুর্গন্ধও বের হচ্ছে। এখন ওই পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

 


আওয়ালগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা জব্বার হোসেন বলেন, প্রতিবছরই চিনিকলের পানি ছাড়লে চিরি নদ ও তুলসীগঙ্গা নদীর পানি কালচে ও দুর্গন্ধ হয়। চিনিকলে মাড়াই বন্ধের এক থেকে দেড় মাস পর নদের পানি আবার স্বাভাবিক হয়।

 


জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখলাছুর রহমান বলেন, ‘চিরি নদের পানি কালচে ও দুর্গন্ধ বের হওয়ার কথা জেনেছি। তবে চিনিকলের বর্জ্যযুক্ত পানি চিরি নদে ছাড়া হয়নি। চিনিকলে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে। চিনিকলের পানি চিনিকলেই সংরক্ষণ করা হয়।’

 

আখলাছুর রহমান অভিযোগ করেন, জামালগঞ্জ এলাকায় পোলট্রি শিল্প রয়েছে। পোলট্রি শিল্পের বর্জ্যে নদের পানি কালচে ও দুর্গন্ধ হতে পারে।

 


জামালগঞ্জ বাজারের পোলট্রি খামারি ও রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান কবির বলেন, চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কথা সঠিক নয়। পোলট্রিশিল্পের বর্জ্য নদে ফেলা হয় না। চিনিকলের পানিতেই চিরি নদের পানি কালচে ও দুর্গন্ধ হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/ সু