সাতক্ষীরায় দিন দিন গলদা চিংড়ি উৎপাদনে ঝুঁকছেন চাষিরা। বাগদার তুলনায় ভাইরাস সংক্রমণ কম হওয়া, দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে গলদার চাহিদা বেশি থাকায় তাঁরা ভালো লাভবানও হচ্ছেন। এখন উৎপাদন বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির স্বপ্ন তাঁদের।
জেলা মৎস্য সমিতির নেতারা বলছেন, সাতক্ষীরায় গলদা প্রক্রিয়াকরণ করে রপ্তানি করার মতো সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে এই খাত।
সাতক্ষীরা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে জেলার ৭টি উপজেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়, যা গত মৌসুমের তুলনায় ২ হাজার হেক্টর বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১২ হাজার টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার টন।
বাণিজ্যিকভাবে জেলার বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি চাষ করা হয়। বাগদা, গলদা, হরিণা, চাকা ও চেমনি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এসবের মধ্যে বিদেশে রপ্তানি হয় বাগদা ও গলদা।
সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের চাষি আমিনউদ্দীন বলেন, ‘আমি ৩০ বিঘা জমির ঘেরে সাদা মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি গলদা চাষ করি। গত মৌসুমে সব খরচ বাদ দিয়ে আমার ৮ লাখ টাকা লাভ হয়েছে।’
রইচপুর গ্রামের আফিল সরদার বলেন, ‘আমি ১০ বিঘা জমির ঘেরে গলদা চাষ করছি। সব খরচ বাদেও গত বছর আমার ৩ লাখ টাকা লাভ হয়। বাগদা চাষে মড়কের ঝুঁকি বেশি থাকে। সেই তুলনায় ঝুঁকি একদম নেই বললেই চলে। তাই বাগদার পরিবর্তে এখন থেকে গলদা চাষ করি।’
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর এলাকার গলদাচাষি আমিনুর রহমান বলেন, ‘গলদার বৃদ্ধি খুব ভালো। একরপ্রতি ৪০০-৫০০ কেজি অনায়াসে পাওয়া যায়। বাজারে দামও ভালো। অন্যান্য সাদা মাছের সঙ্গে এটি চাষ করা যায়।’
সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড়বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, ‘বড় আকারের প্রতি কেজি বাগদার বাজারমূল্য ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। মাঝারি আকারের গলদার কেজি ৮০০-৯০০ টাকা। মধ্যপ্রাচ্যে গলদার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বাবলা বলেন, ‘সাতক্ষীরায় গলদা চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পোনা সংগ্রহে জটিলতা রয়েছে। কারণ নদী বা সুন্দরবনের খাল থেকে পোনা আহরণ নিষিদ্ধ। ভারত থেকে অবৈধ উপায়ে কিছু পোনা আসে। আর কিছু আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। তবে পর্যাপ্ত নয়। এই সংকট কাটাতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’
জেলা মৎস্য চাষি সমিতির সভাপতি আব্দুস সবুর বলেন, ‘জেলার কয়েকটি স্থানে বাগদার প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে। গলদারও প্রক্রিয়াকরণ শুরু হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি চাষিরাও লাভবান হবেন।’
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ‘এখানে গলদা চিংড়ি চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, মিঠাপানির পাশাপাশি লোনাপানিতেও গলদা চাষ করা যায়। গলদায় মড়ক কম বলে চাষিরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ভবিষ্যতে সাতক্ষীরার চাষিরাও গলদা রপ্তানিতে অবদান রাখতে পারবেন বলে আশা করছি।’
ভোরের আকাশ/ সু