logo
আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৬:৪২
সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পণ্য সরবরাহের বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সচিবদের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় অর্থ ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ না করা, নতুন শিক্ষাক্রমে ভুল থাকলে সংশোধন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা, দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

নতুন সরকারের প্রথম সচিব সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় নির্ধারিত কোনো আলোচ্য বিষয় থাকে না। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আজকের বৈঠকে ১৫-১৬ জন সচিব বক্তব্য দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান বিপিএএ, জননিরাপত্তা সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিপিএএ, অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, শিক্ষা সচিব সোলেমান খান, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার প্রমুখ। সচিবদের বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি, কৃষি উৎপাদন, সার ব্যবস্থাপনা, কর্মমুখী শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, নতুন পাঠ্যক্রম, বিদ্যুৎ সরবরাহ, জ্বালানি নিরাপত্তা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়ে এবং দুর্নীতি দমনে ব্যবস্থা নেওয়াসহ নানা নির্দেশনা দেন।

 

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সচিব এই প্রতিবেদককে বলেন, সভার শুরুতে সচিবদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর সচিবরা স্ব-স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী সচিবদের প্রতিবেদন ও বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা আহত সীমান্তরক্ষীদের যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে দেশটিতে ফিরিয়ে দেওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নজরদারি করতে বলেছেন। নজরদারি করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রের কথাও তিনি বলেছেন। অনেক সময় দ্রব্যমূল্যের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ আসে। সংবাদ প্রকাশিত হয়। এক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এটি যাতে কোথাও না হয়। এজন্য সংশ্লিষ্টদের তিনি খুবই শক্তভাবে মাঠে থাকতে বলেছেন। দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ শুধু দুদকের দায়িত্ব নয় সচিবদেরও কাজ করতে হবে

 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের নিজ নিজ জায়গা থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। সরকারি দপ্তরে অনেকে ধারণা করেন যে, দুর্নীতি দমন শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ। এভাবে ভাবলে হবে না। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের নিজ নিজ জায়গা থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সভায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন।

 

ইশতেহারকে ভিত্তি ধরে পরিকল্পনা সাজানোর নির্দেশ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেওয়া ইশতেহারকে ভিত্তি ধরে আগামী পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা সাজাতে সচিব সভায় নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাহবুব হোসেন বলেন, সদ্যসমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সচিব এবং জনপ্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সমুন্নত হয়েছে। যে কথাটি সচিবদের জন্য সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে বলেছেন সেটা হচ্ছে, দায়িত্ব পালনে আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বজায় রেখে কাজ করতে হবে। পরিকল্পনা সাজানোর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ এসেছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে একটা ধারাবাহিকতা আছে। তিনি ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ করতে চাচ্ছেন, তার একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে এই ইশতেহারে। যেহেতু জনগণ রায় দিয়েছে, তাই এই নির্বাচনী ইশতেহারটা হবে আগামী পাঁচ বছরের সরকার পরিচালনার মূলনীতি। এই দলিল বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

এর বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সমন্বয়ের কাজ করবে জানিয়ে সচিব বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি অগ্রাধিকার কাজ ও ৩০০-এর অধিক অঙ্গীকার রয়েছে। এখন সেটাকে ম্যাপিং করা হবে। কোন মন্ত্রণালয়ের কী কাজ, সেটাকে চিহ্নিত করা হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ ভাগ করা হবে।

 

নতুন শিক্ষাক্রমে ভুল থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন যে শিক্ষাক্রম নেওয়া হয়েছে, তা প্রচলিত শিক্ষাক্রম নয়। তা থেকে ভিন্ন একটা। এ বাস্তবতা আমাদের মানতে হবে। আমরা যারা বিশেষজ্ঞ- তারা প্রচলিত পাঠ্যক্রমে শিক্ষা পেয়েছি। নতুন যে পাঠ্যক্রম রচনা করতে হবে, সে ব্যাপারে প্রশিক্ষিত লোক খুব বেশি আছেÑ তা কিন্তু নয়। যারা আছেন, তাদের কাজের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যদি কোনো ভুলভ্রান্তি, যদি কোনো তথ্যগত বা কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তাহলে দ্রুত যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

 

শুধু জনগণের কল্যাণে নিতে হবে নতুন প্রকল্প প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা ও বাছাইয়ের কথা বলেছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যে প্রকল্পগুলো জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে, জনগণ উপকার পাবে, সেদিকে প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মূললক্ষ্য হলো মানুষের অবস্থার উন্নতি। এরকম নয় যে মানুষকে দেখানো। জনমানুষের কল্যাণ হচ্ছে কি না, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে কিনাÑ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করবেন, জানতে চাইবেন যে, কীভাবে এটি জনগণের কল্যাণ দেবে। সেভাবে যেন প্রকল্পগুলো বাছাই করি। চলমান যে প্রকল্পগুলো আছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

বাড়াতে হবে রপ্তানি ও রাজস্ব আয় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন মুদ্রাস্ফীতি আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিচে থাকতে হবে। সেটি করার জন্য কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এখনও বিরাট সংখ্যক ব্যক্তি যাদের আয়কর দেওয়ার কথা তারা আয়করের আওতায় আসেনি। তাদের যেন আয়করের আওতায় আনা হয় সেজন্য জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো কারণে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হলে প্রধানমন্ত্রী সেটা ভালোভাবে নেবেন না। প্রধানমন্ত্রী সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, গার্মেন্টসের যে সুযোগ-সুবিধা; তেমনি কৃষিজাত পণ্য, চামড়া এবং পাটজাত পণ্যেও একই রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এবং কাজ করতে বলেছেন। গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে একটা বড় অংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। একটা বড় অংশ চলে যায় আমদানি ক্ষেত্রে। এই তিন পণ্যে আমাদের স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল আছে। সুতরাং এখানে ভ্যালু অ্যাড অনেক বেশি হবে। তিনি বলেন, রপ্তানি বাজারের ক্ষেত্রে নতুন বাজার বিশেষ করে কয়েকটি বাজার খুঁজতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকায় যেন বাজার খুঁজি বিশেষ করে ওষুধ, পোশাক, খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, পাটজাতপণ্য। এক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে যেন সহায়তা দেওয়া হয়।

 

নজর দিতে হবে আইনশৃঙ্খলায় প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে বলেছেন জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, বিশেষ করে ছিনতাই, কিশোর গ্যাং বা এ রকম যেসব অপরাধ হচ্ছে সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নজর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

বইমেলা উপজেলা পর্যায়েও নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শূন্য পদ পূরণের জন্য উদ্যোগ নিতে বলেছেন এবং সময়মতো পদোন্নতির জন্য বলেছেন। এ ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা আছেন প্রয়োজনে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

 

ভোরের আকাশ/মি