logo
আপডেট : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৯:৩৩
বাঁশের চাঁই বেচে জীবিকা
চিলাহাটি (নীলফামারী) প্রতিনিধি

বাঁশের চাঁই বেচে জীবিকা

চাঁইগুলো হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে

দেশী প্রজাতির ছোট মাছ ধরার উপকরণ বাঁশের তৈরি চাঁই (মাছ ধরার ফাঁদ) কেনার ধুম পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে এখন টই-টুম্বুর ফসলের জমি থেকে শুরু করে খাল-বিল ও নদী। এতে দেশি প্রজাতির ছোটজাতের মাছের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাই বিভিন্ন উপায়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।


গ্রামের খাল বিল হাওড়-বাওড় কিংবা নদীতে মাছ ধরার পুরনো পদ্ধতি আর উপকরণের একটি হচ্ছে বাঁশের তৈরী চাঁই। এই চাঁই বুনে এবং সেটা দিয়ে মাছ ধরে নীলফামারীর চিলাহাটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ জীবনযাপন করছে। বর্ষার শুরু থেকে এ অঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় শুরু হয় চাঁই দিয়ে মাছ ধরা।


বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ দিয়ে খালে, বিল-বাওড়ে ১৪-২৫ ফিট ফাঁকে ফাঁকে বসানো হয় একটি করে চাঁই। পানিতে চাঁই বসানো হয় মূলত টাকি ও চিংড়ি মাছ শিকারের জন্য। কিন্তু ধরা পড়ে পুঁটি, বেলে, টেংরাসহ সব প্রকারের ছোট মাছ।


সরেজমিনে চিলাহাটি উপজেলার গ্রামগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, এই গ্রামের ১০ বছর বয়সের শিশু থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই মিলে চাঁই বুনছে। কেউ বাঁশ কাটছে, কেউ শলা তুলছে, কেউ শলা চাঁচছে আবার কেউবা ব্যস্ত চাঁই বোনা ও বাঁধার কাজে। ঘরের বারান্দায়, উঠানে, গাছের ছায়ায় যে যেখানে পারছে সেখানে বসেই করছে চাঁই বানানোর কাজ।


জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চাঁই বোনার কাজ শুরু হয়। চলে আশ্বিন পর্যন্ত। এক মৌসুমে প্রায় ২ লাখ চাঁই বানানো হয়। প্রতি মৌসুমে শ্রমিকরা চাঁই উৎপাদন করে আয় করেন প্রায় ১ কোটি টাকা।


জানা যায়, জেলার বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে শত শত চাঁই বিক্রি হচ্ছে। এখানকার তৈরি চাঁই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গুণগত মান ভালো হওয়ায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন চাঁইশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। নিম্নআয়ের অনেক পরিবার বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে চাঁই তৈরিকে বেছে নিয়েছেন। বাঁশ ও সুতা দিয়ে তৈরি এসব চাঁই ভালো মানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছশিকারিরা হাটবাজার থেকে তা কিনে নিয়ে যান।


বর্ষা মৌসুমে চাহিদা বেশি হওয়ায় চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো দুই-তিন মাসেই প্রায় সারা বছরের আয় করে নেন।


চাঁই তৈরির কারিগররা জানান, চাঁই তৈরিতে প্রকারভেদে খরচ পড়ে ৮০ থেকে ২০০ টাকা। বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আকারে বড় চাঁই তৈরিতে খরচ অনুযায়ী বিক্রির মূল্য নিধারণ করা হয়। চাঁই বিভিন্ন এলাকায় ধন্দি, বানা, খাদন, খালই, বিত্তি, বুড়ং ও ভাইর নামে পরিচিত। ছোট প্রজাতির মাছ ধরার সুতি, কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন উপকরণের দাপটের কারণে বাঁশের তৈরি চাঁই বাজারে বেশ প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে।


ইদানিং বাঁশের কাঠির পরিবর্তে শুধু বাঁশের চটা দিয়ে তৈরী ফ্রেমে জাল দিয়েও চাঁই বানানো হচ্ছে। তবে জালের তৈরী ফাঁদ অনেক সময় ছিঁড়ে বা কাঁকড়া কেটে দিলে মাছ পালিয়ে যায়।

 

ভোরের আকাশ/ সু