কুষ্টিয়ায় তিন দিনব্যাপী ওস্তাদ ভাই লাঠি খেলা ও লোকজ ঐতিহ্য মেলা শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে র্যালি, আলোচনা সভা, লাঠি খেলা ও মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর ৯০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সকল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পূর্তি উপলক্ষে প্রথম দিন বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার সময় কুষ্টিয়া টাউন হল (বানী হল) থেকে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর আয়োজনে ঐতিহ্যের ৯০ বছর পূর্তিতে এক র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের এনএস রোডসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। আজ শনিবার এর শেষ আয়োজন উপভোগ করে দর্শনার্থীরা।
এতে অংশগ্রহণ করেন, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মানজিয়ার রহমান চঞ্চল, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু, লাঠিখেলা ও লোকজ উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক সাইফুল আলম চৌধুরী রিংকি, বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিজানুর রহমান সমিন, মুঈদ রহমান, আব্দুল্লাহ আল হাসান রাজু, ডা. শাহানা আক্তার চৌধুরী প্রমুখ।
পরে বিকেল ৩টার সময় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে লাঠি খেলা প্রদর্শন এবং আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করে এবং স্বাগত বক্তব্য দেন, লাঠিখেলা ও লোকজ উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক সাইফুল আলম চৌধুরী রিংকি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিশির কুমার রায়। আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজু, উপদেষ্টা সদস্য জিয়া হাসান চৌধুরী রিপন, এস এম কাদেরী শাকিল, সুব্রত চক্রবর্তী প্রমুখ।
পরে শুরু হয় লাঠি খেলা। খেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৮টি দল অংশগ্রহণ করে তাদের লাঠি খেলার কসরত দেখান। মনজুরীন সাবরিন চৌধুরী রুপন্তী, ওস্তাদ আবুল কাশেমসহ অনেক ওস্তাদ তাদের সঙ্গীদের নিয়ে কসরত প্রদর্শন করেন। হাজার হাজার দর্শক তা উপভোগ করেন। অপরদিকে খেলার এ মাঠেই বসানো হয়েছিল মেলা। সেখানে পসরা সাজিয়ে বসেছিল বিভিন্ন দোকানীরা।
জানা যায়, কুষ্টিয়ায় প্রায় প্রতি বছর আয়োজন হয়ে আসছে এই লাঠিখেলা। গ্রাম বাংলার এই খেলার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন কুষ্টিয়ার প্রয়াত সিরাজুল হক। যিনি চৌধুরী ওস্তাদ ভাই নামে পরিচিত। ৩০ বছর পূর্বে ১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর তিনি চির বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। রেখে গেছেন এই ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা।
গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়-উপজেলায় নবান্ন উৎসবে, আশুরাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদর্শন হয়ে থাকে। সাধারণত এলাকার সংস্কৃতিমনা মানুষেরা এই আয়োজন করে থাকে। সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ঐতিহ্য রক্ষা পেতে পারে। না হলে কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে গ্রামবাংলার লোকজ ঐতিহ্য লাঠিখেলা।
বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজু বলেন, বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী দীর্ঘ ৯০ বছর যাবত এই গ্রামবাংলার লোকজ ঐতিহ্য রক্ষায় লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় পরিচালনা করে আসছে। সরকারের প্রতি আহবান জানাতে চাই এই লোকজ ঐতিহ্য লাঠিখেলা সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারে। ফেব্রুয়ারি মাস ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার মাস। ভাষার জন্য আত্মহুতি দিয়েছিল এ দেশের দামাল ছেলেরা।
বাংলা এখন আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই ভাষা ও সংস্কৃতির মাসে আয়োজন করা হয়েছে ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা উৎসব ও লোকজ মেলা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উপস্থিত ছিল লাঠিয়াল দল এবং খেলোয়াড় বৃন্দ। আশা করি সকলের সহযোগিতায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা হয়ে উঠবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যবাহী খেলা।
ভোরের আকাশ/ সু