সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে নাব্যতার সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম। উত্তরবঙ্গের প্রধান এই নৌবন্দরে সরাসরি ভিড়তে পারছে না পণ্যবাহী বড় জাহাজ। বাঘাবাড়ী থেকে প্রায় ৭৫ মাইল দূরে মানিকগঞ্জের বাহাদুরাবাদ নামক স্থানে যমুনা নদীতে জাহাজগুলোকে অবস্থান করতে হচ্ছে। সেখান থেকে ছোট লাইটার জাহাজে করে পণ্য খালাস করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ কারণে বন্দরে মালামাল আনতে বস্তা প্রতি ১৮ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, নদীতে পানির গভীরতার চেয়ে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে আসার কারণে বড় বড় জাহাজ আসতে পারছে না। বন্দরটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হলে এই সমস্যা আর থাকবে না।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, নদীপথে দেশের চট্টগ্রাম, মোংলা ও নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে পণ্য আসে বাঘাবাড়ী বন্দরে। যা পরে চলে যায় উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায়। দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের বিভিন্ন পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে গেছে। এখন সেখানে পানির গভীরতা ৭-৮ ফুট। এ ছাড়া পলি জমে সরু হয়ে গেছে নৌ-চ্যানেল।
বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের লেবার আতিকুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, বাঘাবাড়ী নৌবন্দর জাহাজশূন্য হয়ে পড়ায় এক সপ্তাহ ধরে আমাদের হাতে কাজ নেই। ফলে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি।
নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দর থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে আসা সিমেন্টবাহী জাহাজের সুকানি মোতালেব হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, বাঘাবাড়ি বন্দরের যে নৌ চ্যানেল রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত গভীরতা না থাকায় বড় জাহাজগুলো সরাসরি বন্দরে আনা যাচ্ছে না। যার ফলে ছোট লাইটার জাহাজে করে পণ্য আনতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
বন্দরে কর্মরত লেবার আরিফ, বেলাল, মোমিন, রায়হানসহ কয়েকজন ভোরের আকাশকে বলেন, আগে প্রতিদিন বন্দরে অনেক জাহাজ ভিড়তো। কিন্তু এখন পানি কমে যাওয়ায় জাহাজ ফেরার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। আর কয়েক মাসে জাহাজে আমাদের কোনো কাজ নেই। সব মিলিয়ে এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যস্ততম এই বন্দরের কার্যক্রম। কাজ না থাকায় আমরা বেকার হয়ে বসে আছি।
বাঘাবাড়ী ঘাটের নৌযান লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব মাস্টার ভোরের আকাশকে বলেন, চার মাস ধরে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে মালামাল নিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়তে পারছে না। মানিকগঞ্জের বাহাদুরাবাদে নোঙর করা জাহাজ থেকে মালামাল আনা হচ্ছে বাল্কহেড, নৌকা ও ছোটলাইটার জাহাজে করে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের ইজারাদার আব্দুস সালাম ভোরের আকাশকে জানান, খালি জাহাজ আসতেই ৮-৯ ফুট গভীর পানির দরকার। সেখানে পানির গভীরতা রয়েছে ৭-৮ ফুট। একটি জাহাজ ২০ হাজার বস্তা মালামাল নিয়ে এলে ১০-১২ হাজার বস্তা খালাস করতে হয় ছোট লাইটার জাহাজে করে। এতে প্রতি বস্তায় ১৮ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়।
বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের সহকারী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটি দ্বিতীয় শ্রেণির নৌবন্দর। এই হিসাবে এখানে গড়ে সাড়ে ৭ ফুট পানি থাকা দরকার। বর্তমানে ৯ ফুট গভীর পানি রয়েছে। বড় জাহাজ ঢুকতে হলে অবশ্যই ১২ ফুট পানি থাকতে হবে। সে কারণেই জাহাজগুলো বন্দর পর্যন্ত ভিড়তে পারছে না। বন্দরটি প্রথম শ্রেণির নৌবন্দর হিসেবে উন্নীতকরণের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বড় জাহাজগুলোও ভালোভাবে এই বন্দরে ভিড়তে পারবে। অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে আসার কারণে বড় জাহাজগুলো ভিড়তে পারছে না। বন্দরটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হলে পানির গভীরতা থাকবে ১২ ফুট। তখন আর কোনো সমস্যা হবে না।
ভোরের আকাশ/ সু