logo
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২০:১৫
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যা কুপি ‘লেম’
হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যা কুপি ‘লেম’

হোসেনপুরের গ্রামীণ সন্ধ্যা কুপিবাতি

‘সন্ধ্যা কুপি’ খ্যাত এমনি এক বাতির দেখা মিলল হোসেনপুর উপজেলা পুমদী ইউনিয়নের জগদল গ্রামে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া সেই কুপি বাতি এখনো ঘরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জ হোসেনপুরে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ সন্ধ্যা কুপি বাতি লেম। গ্রামীণ সমাজের প্রতিটি ঘরে ঘরে এক সময় আলোর অন্যতম বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হতো সন্ধ্যা কুপি বাতি লেম।


বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের দুই এক বাড়িতে লেম পাওয়া গেলেও দেখা যায় না ব্যবহার। সে গুলোতে ময়লা ও মরিচা পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখন আর কোন ঘরে কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাজার বছরের ঐতিহ্যের বাহন সেই লেম এখন আর চোখে পড়ছে না। অথচ আজ থেকে ১৫/২০ বছর আগে বেশির ভাগ ঘরেই ব্যবহার করা হতো এই লেম। আর ২০ বছর পরে এসে এর রূপ এখন পুরোটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। ২০ বছর আগে সারাদিন কর্মব্যস্ততা সেরে নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন সন্ধ্যায় ঘরের আলো জ্বালানো নিয়ে। কালের বিবর্তনে সারা দেশে ও হোসেনপুর উপজেলার প্রায় জায়গা থেকে হারিয়ে গেছে এই লেম।


বর্তমানে সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রতিটি সমাজ পরিবর্তন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লেম এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিদ্যুতের বাতি, চার্জার ও সৌর বিদ্যুতের নানা ধরনের ব্যবহারের ফলে এখন লেম এর ব্যবহার তেমন দেখা যায় না।


উপজেলার গ্রামাঞ্চলে এখন আর এগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে লেম এর জায়গা দখল করে নিয়েছে সৌর বিদ্যুতের আলো বা চার্জের লাইট।
প্রতি সন্ধ্যায় কেরোসিন তেল ঢেলে শলতার মধ্যে দেশলাইয়ের কাটি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে তা নির্দিষ্ট সীমা রেখায় রেখে ঘরের মাঝে লাগিয়ে রাখতো। রাতে ঘুমানোর সময় সারা রাত লেম জ্বালিয়ে রাখা হতো। তখন এগুলো ছিল কয়েক প্রকার। ছিল পিতল ও সিলভারের। তবে সিলভার, টিন ও মাটির তৈরি জিনিসের ব্যবহার ছিল খুব বেশি। বাতির নলে আগুন জ্বালানোর জন্য ফিতা হিসেবে ব্যবহার করা হতো ছেড়া কাপড়। কাপড়ের টুকরো কিংবা পাটের সুতলি। প্রতিদিন এর কিছু অংশ জ্বলে পুরে যেতো। পরের দিন আবার একটু উপরের দিকে তুলে দেওয়া হতো। এক পর্যায়ে তা পুড়ে গেলে আবার নতুন করে লাগানো হতো। এটা ছিল নারীদের সন্ধ্যা বেলা কাজের বিশেষ একটি অংশ।
এই বাতি দিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতো। এমনকি রাতের রান্না বাড়া, খুঁটির শিল্প, হস্ত শিল্প, ধান মারাসহ সকল চাহিদা মেটানো হতো এই আলো দিয়ে। এখন আর চোখে পড়ে না কুপি বাতি, লেম।


যারা শহর এলাকায় বাস করছেন; বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম তারাতো চোখে দেখেনি লেম বা বাতি। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, কালের আবর্তনে ডিজিটাল যুগে এই কুপি বাতি নামক বস্তুটি কোন এক সময়ে স্মৃতির যাদুঘরে দেখা যাবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু