সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষে জমি রেজিষ্ট্রি খরচে বাড়ানো হয়েছে উৎসকর। আর রেজিষ্ট্রি খরচ বৃদ্ধির পর থেকেই কমেছে জমি রেজিষ্ট্রি। বৃদ্ধির পরিবর্তে কমেছে রাজস্ব আদায়। বিশেষ প্রয়োজনেও জমি বিক্রয় করতে না পারায় ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ জমি মালিকদের। বিপাকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও।
ক্যালেন্ডোরের পাতায় ১৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার। ঘড়ির কাটায় তখন ১২ টা। দলিলের টিপ কালি, খাতা, কলম, স্টেপলার, বার সুই-সুতা আর রেজিস্ট্রার নোট নিয়ে টেবিলের সামনে বসে আছে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সহকারী, স্থায়ী মোহরার, নকল নবীশ, পিয়ন ও অফিস সহকারীরা। নেই খুব একটা কাজের চাপ। ফাঁকা টেবিল আর অবসরতায় ঘিরে এভাবেই দিন কাটছে তাদের।
রূপগঞ্জ পুর্ব ও রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। সারাদিনে মাত্র সাব কাবলা ১০টি, হেবানামা ১১টি, দানপত্র ৫টি, বিলএওয়াজ হেবা ৬টি, হস্তান্তর ১টি, ২৩ টি ব্যাপক ক্ষমতা সম্পুন্ন আম-মোক্তারনামা ও অন্যান্য রকমারি সহ মোট ৭৭টি দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে।
শুধু মঙ্গলবার নয় জমি রেজিষ্ট্রির খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে প্রায় ছয় মাস ধরে এভাবেই চলছে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম। অথচ যেখানে প্রতিদিনই হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ও আশপাশের এলাকা। তবে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে সাব-কাওলা দলিলের চেয়ে আম-মোক্তারনামা, হেবানামা, দানপত্রসহ অন্যান্য রকমারি দলিল রেজিষ্ট্রি বেশি হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ঢাকার অত্যন্ত নিকটবর্তী এলাকা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, প্রবাসী, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ প্রায় সকল পেশার মানুষই রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় জমি ক্রয় করে থাকেন। তাতে প্রতিদিনই চাপ থাকতো সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে। কাজের চাপের কারণে রেজিস্ট্রি অফিসকে রূপগঞ্জ পুর্ব ও রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্র অফিস নামে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। আর দুটি অফিসে প্রায় ৪’শ দলিল লেখক ও তাদের প্রত্যেকের ৪/৫জন করে সহকারীসহ মোট প্রায় ১২’শ থেকে ১৩’শ লোক কাজ কাজ করতো। অথচ উৎসকর বৃদ্ধির পর থেকে প্রায় সময়ই সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও আশপাশের এলাকা ফাঁকা থাকতে দেখা যায়।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুসারে জমির শ্রেনী অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের নাল জমি রেজিষ্ট্রি করতে সর্বনিম্ন প্রতি কাঠা ১ লক্ষ টাকা উৎস কর ধরে দলিল রেজিস্ট্রি খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। তারপর থেকেই কমেছে দলিল রেজিষ্ট্রি এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের চাপ। সেই সাথে ভূমির খাজনা আদায়ের নামে নামজারীর পত্রে নাল শ্রেণীর জমিকে আবাসিক লেখা হচ্ছে। তাতে জমির খাজনা ও রেজিস্ট্রি করতে উভয় ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
ভোরের আকাশ/ সু