logo
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১১:০৮
পানি শূন্যতায় ধুঁকছে কৃষিজমি,বাজারে দেশীয় মাছের আকাল
মো. নাছির উদ্দিন, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)

পানি শূন্যতায় ধুঁকছে কৃষিজমি,বাজারে দেশীয় মাছের আকাল

বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ

সীতাকুণ্ডে মুক্ত জলাশয় বা বিলের বাহারি জাতের মাছ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্ষামৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাছের প্রাকৃতিক উৎপাদন কমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কৃষিতে অধিক ফলনের আশায় মাত্রাতিরিক্ত কিটনাশক প্রয়োগ ও চায়না দোয়ারী জালের দাপটে উজাড় হচ্ছে রেনু পোনা। এতে স্থানীয় হাটবাজারে খুব কমই দেখা মিলছে চিরচেনা দেশীয় প্রজাতির মাছ।


বাজারে হঠাৎ দেখা গেলেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই স্বল্প। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে বিশেষ করে কৈ, শিং, মাগুর, বোয়াল, পাবদা, টেংরা, সর পুঁটি, টাকি, চিতল, আইর, শোল, বাইম ও মলার মতো সুস্বাদু মাছ আগের মতো আর চোখে পড়ে না।


সামুদ্রিক বা পুকুরে চাষ করা হাইব্রিড জাতের মাছে সয়লাব স্থানীয় বাজার। যে সব পুকুরে এক সময় দেশীয় প্রজাতির মাছের চাষ হতো; সে সব পুকুরে এখন বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের মাছের চাষ হচ্ছে। ফলে মিঠা পানির দেশীয় প্রজাতির মাছের স্থান দখল করছে পুকুরে উৎপাদিত হাইব্রিড মাছ।


এক সময় উঁচু জমিতে ফসল আবাদ আর নিচু জমিতে হতো মাছ চাষ। শুস্কমৌসুমে নিচু জমিতে জমানো পানি উঁচু জমির কৃষি কাজে ব্যবহৃত হতো। প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়া আর অপরিকল্পিত নগরায়ন শিল্পায়নের প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদন আর মাছ চাষের উপর। ফলে মুক্ত জলাশয়ে আর মিলছে না সুস্বাদু দেশীয় মাছের দেখা।


সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব বদিউর আলম বলেন, এক সময় বর্ষামৌসুমে এলাকার অধিকাংশ খাল বিল পানিতে তলিয়ে যেতো। তখন ছোট-বড় সব নালা, খাল-বিল পানিতে ভরপুর থাকতো। জলবায়ুর পরিবর্তনে গত বর্ষামৌসুমে চাহিদা মত বৃষ্টিপাত হয় নি। ফলে খাল-বিলগুলোতে আসেনি পর্যাপ্ত পানি। যার প্রভাব কৃষি ছাড়াও পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদনে। ফলে বিলের উপর নির্ভরশীল কৃষি ও মৎস্যজীবিদের সংসার পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।


পরিবেশবাদী লেখক অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, পেশাগত কর্মব্যস্ততার মাঝে সুযোগ ও সময় খুব একটা না থাকলেও অবসরে বাড়ির পুকুরে মাছ শিকার নিয়মিত শখ ও পেশায় পরিণত হয়েছে। দুঃখ হলেও সত্য, আজ বিলুপ্তির পথে বহু সুস্বাদু দেশীয় প্রজাতির মাছ। হাট বাজারগুলোতে এখন বেশি দেখা যাচ্ছে নাইলেটিকা, পাঙ্গাস ও বিভিন্ন কার্প জাতীয় পুকুরে উৎপাদিত মাছ। উপজেলার উপকূলীয় খাল-বিলগুলোর পানি শূন্যতায় বিলুপ্তির পথে দেশীয় মাছ। যদিও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দাবী তিনি দেশীয় মাছ সংরক্ষণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।


বাজারে এখন দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল চলছে। ক্রেতারা হন্য হয় খুঁজেও দেশীয় প্রজাতির মাছ পায় না। বাজারে হঠাৎ চিরচেনা প্রজাতির মাছের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বি।


পৌরসদরস্থ উত্তর বাজার রূপালী মাছের আড়ৎ এর স্বত্বাধিকারী লিয়াকত আলী বলেন, সিলভার কার্প, পাঙ্গাশ ছাড়াও পুকুরে চাষ করা রুই, কাতলা, মৃগেল, মাগুর, মলা, সরপুটি, নাইলোটিকা, শোল, কৈ ও টাকি স্থানীয় মাছ চাষীদের নিকট ক্রয় করে পাইকারী বাজারে বিক্রয় করেন।


উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশীয় প্রজাতির বেশ কিছু মাছ পুকুরে চাষ হয়। তবে পরিমাণ খুবই স্বল্প, দামে বেশী। অপরিকল্পিত নগরায়ন-শিল্পায়ন ও জলাশয় ভরাটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছের বিচরণ ক্ষেত্র। যার প্রভাব পড়ছে উৎপাদনে। উপজেলা মৎস্য অফিস দেশীয় সুস্বাদু মাছ সংরক্ষণে চাষীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/ সু