বছরের পর বছর ধরে খানাখন্দে ভরা চলাচল অযোগ্য রাস্তায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরবাসী। হাজার হাজার মানুষ সেই রাস্তাটি মেরামতের দাবীতে বার বার আন্দোলন করে আসছিল। একের পর এক মানববন্ধন করার পরও রাস্তাটি সংষ্কারে পৌর কর্তৃপক্ষের কোন ভ্রুক্ষেপ বা উদ্যোগ ছিলনা।
অথচ রেলপথ মন্ত্রীর ক্ষণিকের আগমন উপলক্ষে সেই রাস্তাই তরিঘরি করে থুক পালিশ করা হচ্ছে দিন রাত লেগে থেকে। যদিও অত্যন্ত নিম্নমানের ও পরিত্যক্ত ইটের খোয়া আর বালু দিয়ে কোন রকমে ঢাকা হচ্ছে বড় বড় গর্তগুলো। লোক দেখানো এমন কাজ দেখে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তারা মন্তব্য করছেন, নাগরিকরা নয়- নেতা, এমপি, মন্ত্রীরাই সৈয়দপুর পৌর মেয়রের কাছে অগ্রগণ্য। তাইতো রাতারাতি সংস্কার হচ্ছে। তবে নামকাওয়াস্তে এই কাজ দিয়ে মন্ত্রীর কাছ থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা নেয়াই মেয়রের লক্ষ্য। সেই সাথে খরচ দেখিয়ে পূর্বের মতই পৌরসভার তহবিল থেকে হাতিয়ে নেয়া হবে মোটা অংকের টাকা।
বুধবার বেলা আড়াইটায় সৈয়দপুর শহরের রেলওয়ে হাসপাতালের গার্ডপাড়া মোড়ে দেখা যায় পৌরসভার ট্রাকে করে মানহীন (গুড়িয়া ও সাল্টি) ইটের খোয়া ঢালা হচ্ছে রাস্তায়। পরে সেগুলোর উপর বালি দিয়ে রোলার চালিয়ে সমান করা হয়। এতে সব ধুলো ধুসর হওয়ায় পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই চলছে রাস্তার খানাখন্দ ভরাটের কাজ।
এসময় ওই পথে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক শহরের কাজীপাড়া মহল্লার মেরাজ বলেন, ‘আমরা ভাঙা-চোরা রাস্তায় কষ্ট করে যানবাহন চালাচ্ছি। বছরের পর বছর এই দুর্ভোগ পোহালেও কেউ ফিরে তাকায়নি। অথচ আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারী মন্ত্রী আসবে দেখে মেয়রের মহাব্বত উতলে পড়ছে। তাইতো নামকাওয়াস্তে গর্ত পূরণ করছে।’
মিস্ত্রিপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেক নামের এক পথচারী বলেন, ‘যে নিম্নমানের ইটের খোয়া দেয়া হচ্ছে। তা সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার অযোগ্য। রোলার দিয়ে চাপ দিতেই গুঁড়ো হয়ে ধুলায় পরিণত হচ্ছে। তার উপর বালি দিয়ে ঢেকে থুক পালিশ করা হচ্ছে। মন্ত্রী যেতে না যেতেই এগুলো উঠে চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে। আর যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে কাঁদা হয়ে যাবে। ফলে দুই দিন তকতকে ঝকঝকে দেখালেও কয়েকদিন পরই আরও বেশি ভোগান্তির কারণ হবে।’
সাহেবপাড়ার আবিদ হোসেন সরকার বলেন, ‘এই যে লোক দেখানো কাজ করা হচ্ছে এটা শুধু মন্ত্রীর জন্য। আর এই কাজ দেখিয়ে খরচ বাবদ আমাদের ট্যাক্সের টাকা হাতিয়ে নিতে।’ ঢেলাপীর এলাকার রিকশা চালক মুরাদ বলেন, ‘আমরা যেতে আসতে খানাখন্দে পড়ে আহত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মেয়র ৩ বছরে কিছুই করেননি। অসহনীয় অসুবিধা নিয়ে চলাচলে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু মন্ত্রী আসার খবরে রেল কারখানার ডিএসের এক ঠেলায় চলছে গর্ত ভরাটের কাজ। মেয়রের এধরনের খামখেয়ালি কাজের দরকার নাই। স্থায়ী মেরামত চাই।’
সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারী রেলওয়ে কারখানা পরিদর্শনে আসছেন। তাই আমরা শহরের স্মৃতি অম্লান চত্বর থেকে কারখানা গেট হয়ে মিস্ত্রিপাড়া মোড় পর্যন্ত রাস্তার গর্তগুলো ভরাট করে উঁচুনিচু অবস্থা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য কাজ করছি। এটা অস্থায়ী ভিত্তিতে মেরামত মাত্র। এতে কত টাকা বাজেট করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি নিরব ছিলেন।
পৌর মেয়র রাফিকা আক্তার জাহান বেবী মুঠোফোনে বলেন, মূলত মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ডিএস'র অনুরোধে চলাচল যোগ্য করতে সামান্য মেরামত করা হচ্ছে। এতে কোন বরাদ্দ নেই। পৌর সভার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এটা করা হচ্ছে।
তবে একটি সূত্র মতে, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএসডাব্লিউ) সাদেকুর রহমান পৌর মেয়র কে স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন যে, মন্ত্রী আসার আগে যদি রাস্তার এবড়োখেবড়ো অবস্থা ঠিক করা না হয়, তাহলে পৌর কর দেয়া বন্ধ করে দেয়া হবে। এ কারণে বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি করে এই কাজ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে ডিএস'র মুঠোফোন বার বার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ভোরের আকাশ/মি