বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনায় বুকে জেগে ওঠা চরে পেঁয়াজ চাষ করে ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা। উর্বর পলিমাটিযুক্ত জমিতে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। এমন আশার স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলের কৃষক। যমুনার বিস্তীর্ণ চর এলাকায় সরেজমিনে দেখা মিলছে পেঁয়াজের আবাদ।
কৃষকরা বলছেন, আগে চরাঞ্চলে পেঁয়াজের আবাদ কম হতো। কিন্তু এখন বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। তবে এবারে পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশী।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এবার বগুড়া জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫৪ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত জেলায় পেঁয়াজ রোপন করা হয়েছে ৩ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। চারা রোপণ চলমান রয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হবে। এর আগে জেলায় ৮০৫ হেক্টর জমি থেকে আগাম জাতের পেঁয়াজ উত্তোলন হয়েছে।
জানা যায়, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর চর ছেয়ে গেছে সবুজ পেঁয়াজ গাছে। সারিয়াকান্দির চর এলাকা বোহাইল, মাঝিরা, ধারাবারিষা, নিজ বলাইল,আওলাকান্দি গ্রামের শতাধিক কৃষক পেঁয়াজ চাষ করে আর্থিকভাবে সাফল্যের আশা করছেন। যমুনার পানি এবারে আগে নেমে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ রোপণ করা হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজ সংকটের কারণে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী। অনুকুল আবহাওয়া এবং রোগবালাই কম থাকায় এবারে পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চরের কৃষকরা। ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে দেশি পেঁয়াজের গুণগতমান ভালো। তাই দাম বেশি পাওয়ার প্রত্যাশা চাষিদের। ন্যায্য বাজার মূল্যের নিশ্চয়তা পেলে চরে পেঁয়াজ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত নভেম্বর মাস থেকে যমুনা নদীতে পানি কমে যাওয়া শুরু করে। তখন চরে কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষের উপযোগী করে তোলার জন্য কাজে নেমে পড়েন। পৌষ মাস থেকে কৃষকরা চারা রোপণ শুরু করেন। আর চৈত্র মাস থেকে পেঁয়াজ তোলা শুরু করেন। চরে পেঁয়াজ চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ মণ পেঁয়াজ হয়। খরচবাদে প্রতিবিঘায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভের হিসাব গুনছেন কৃষকেরা। দেড় থেকে দুই মাস পরেই পেঁয়াজ ঘরে তুলবেন চাষীরা। স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় পেঁয়াজের পরিচর্যা নিয়ে কর্মব্যস্ত তারা।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চরে এখন হাজার কোটি টাকার ফসলের বাজার সৃষ্টি হয়েছে। বিপুল সংখ্যক ভোক্তা চাহিদাসম্পন্ন অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল হওয়ায় পেঁয়াজ চাষ করে চরের কৃষকরা বছরে অর্থনৈতিক চাহিদা মিটিয়ে থাকেন।
সারিয়াকান্দি চরঘাগুয়া এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, আগে সারা বছর যমুনা নদীতে পানিপ্রবাহ থাকত। এখন শীত মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। বিশাল এলাকায় ধু ধু চর পড়েছে। তীরবর্তী ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষিরা এ চরে চাষাবাদ করেন। সেখানে পেঁয়াজসহ নানা জাতের ফসল চাষ করেন তাঁরা।
তিনি আরও জানান, ভরা বর্ষায় এ চরে অনেক পলি জমে। সেই পলি পেঁয়াজ ক্ষেতে সার হিসেবে কাজ দেয়। পেঁয়াজ চাষে সার বেশি লাগে না। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভালো ফলনের আশাও করছেন। তিনি এবার তিন বিঘা জমিতে দেশী জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। তবে বর্তমান বাজার মূল্য স্থিতিশীল থাকলে লাভবান হবে কৃষক। পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হব। দাম ভাল থাকলে আগামীতেও চাষিরা পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হবেন। এতে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে এবার বগুড়া জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫৪ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত জেলায় পেঁয়াজ রোপন করা হয়েছে ৩ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। চারা রোপণ চলমান রয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হবে। জেলায় স্থানীয়ভাবে ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ পেঁয়াজের চাহিদা পূরুণ হয়ে থাকে। বাকিটা আমদানির উপর নির্ভর করে।
তিনি আরও জানান, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, হাটবাড়ী, ফাজিলপুর, তেলীগাড়ী, গওলাডাঙ্গা, মানিকদাইড়, আউচারপাড়া, সবুজের পাড়া, চকরথিনাথ, দিঘাপাড়া, করমজাপাড়া, বনরপাড়া, কাজলা, ইউনিয়ন পুরোটায় এখন চর। জেগে ওঠা এসব চরে শীতকালীন সবজির পাশাপাশি প্রতি মৌসুমে চলছে ধান, মরিচ ও পাটের আবাদ। গত বছরের তুলনায় এ বছর পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। প্রত্যাশিত উৎপাদন পেলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য এলাকাতেও এই পেঁয়াজ সরবরাহ করা সম্ভব।
ভোরের আকাশ/ সু