ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের শিল্প-কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবেশক তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দাবি, ‘পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে'।
এর আগে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, দেশের মধ্যাঞ্চলের এই জেলাগুলোর শিল্প এলাকায় পোশাক ও বস্ত্র খাতগুলো গত কয়েক মাস ধরে তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছে।
গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল কারখানার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশকে বলেন, 'কারখানাগুলো ভয়াবহ সংকটে আছে।’ তার অভিযোগ, গাজীপুরের বেশিরভাগ কারখানা উৎপাদনের সময়ে পর্যাপ্ত গ্যাস পায় না। অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে গ্যাসের চাপ খুবই কম থাকে। এ কারণে অনেক যন্ত্রপাতি চালানো যায় না। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গ্যাস না থাকায় কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বন্ধের দ্বারপ্রান্তে।’ চলমান গ্যাস সংকটে কারখানার ডাইং সেকশনের জেনারেটর ও ব্রয়লারের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি চালানো হচ্ছে না। উৎপাদনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বিপুল আর্থিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
অপর এক কারখানা মালিক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ভোরের আকাশকে বলেন, 'পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অনেক কারখানা আসন্ন ঈদে বেতন ও বোনাস দিতে পারবে না।' খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈরসহ আশপাশর এলাকায় তিন শতাধিক কারখানা আছে। কারখানাগুলো তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছে। কয়েকটি কারখানা উৎপাদন বন্ধ রেখেছে।
প্রতিটি কারখানায় এক হাজারের বেশি শ্রমিক আছে। গ্যাস সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমাতে হচ্ছে। কেউ কেউ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য বেশি দামে সিএনজি ব্যবহার করছে। ঢাকার মিরপুর, গাজীপুরের টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় একই অবস্থা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
দাম বাড়ালেও সরকার পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না' উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গ্যাসের অভাবে পোশাক কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে অনেক ক্রেতা জাহাজের পরিবর্তে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিছু ক্রেতা দামের ক্ষেত্রে ছাড় চাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে কিছু গ্রাহক বিরক্ত হয়ে অর্ডার বাতিল করেছেন।’
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ'র (বিসিআই) অভিযোগ, গ্যাস সংকটের কারণে দেশের কোনো শিল্পই পূর্ণ সক্ষমতা অনুযায়ী চলতে পারছে না। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের কার্যালয়ে সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল এ অভিযোগ করেন।
শিল্প খাতের এ সংগঠন বলছে, সরকার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করবে এই আশায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ানোর অজুহাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিসিআইয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমার প্রবণতা থাকলেও আবারও বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে বলে শোনা যাচ্ছে।'
এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। 'বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে শিল্প খাতকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দিলে সে অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।’ তিতাস গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক অপর্ণা ইসলাম গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করেছেন। তবে সম্প্রতি গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগের ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
অদূর ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি পেট্রোবাংলার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত এক মাসে দেশে গ্যাসের সরবরাহ বেড়েছে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) বা এর কাছাকাছি। এর ফলে উৎপাদন ও সরবরাহে ঘাটতি আছে প্রায় দেড় হাজার এমএমসিএফডি।
পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, চার হাজার এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে ১৬ ফেব্রুয়ারি আমদানিসহ দুই হাজার ৬৭১ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন হয়েছে। তিতাসের তথ্যে আরও দেখা যায়, গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় ৩০ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ আছে।
ভোরের আকাশ/মি