হাসপাতালের ৩৫জন চিকিৎসক এবং তাদের পরিবার-পরিজন সরকারি অফিস খোলার দিন চিকিৎসা কার্যক্রম অনেকটা অচল করে পিকনিকের জন্য হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি পাহাড়ে পাঁচতারকা মানের দ্যা প্যালেস রিসোর্টে যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের আকস্মিক মৃত্যুর ২দিন না পেরোতেই অফিস চলাকালীন সময়ে চিকিৎসকরা হাসপাতালের কার্যক্রম অনেকটা অচল করে এ আনন্দ ফুর্তির পিকনিকের আয়োজন করায় মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের তত্ত্বাবধায়ক স্যারের মৃত্যুর ২ দিন না পেরোতেই চিকিৎসকদের এ ধরণের পিকনিক আয়োজন কোন অবস্থাতেই ঠিক হয়নি। এতে মানবতা আর কোথায় রইল?’
তিনি আরও বলেন, ‘সদর হাসপাতাল খোলার দিন ২৫ সদস্যের চিকিৎসকদের একটি দল তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মঙ্গলবার সকালে পিকনিকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় এবং বিকেলে আরো ১০জন চিকিৎসক সেখানে পরে অংশ নেয়; সব মিলিয়ে তাদের পরিবার-পরিজনসহ প্রায় ২ শতাধিক লোক পিকনিকে অংশ নেয় এবং সেখানে খাবার-দাবার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সবকিছুর আয়োজন করা হয়েছে।’
পরদিন যেহেতু ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন, অনেকটা নিরবেই পিকনিকে চলে যান ডাক্তাররা।
এদিকে হাসপাতালের একজন স্টাফ জানান, অন্যবার এ ধরণের পিকনিক আয়োজন করা হলে আমরা জানতাম। কিন্তু এবার অনেকটা লুকোচুরি করে পিকনিকে চলে যান চিকিৎসকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, তত্ত্বাবধায়ক স্যার যেদিন মারা যান সেদিনও ওই চিকিৎসকরা স্যারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝামেলা করেন। কিন্তু তিনি নীতিতে অটল ছিলেন। কোনোরকম আপোষ করেননি। তার মতো একজন নীতিবান চিকিৎসকের চিরবিদায় শুধুমাত্র চিকিৎসক সমাজে নয়, দেশেরও অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি এ হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে কখনো ছাড় দেননি। এ কারণেই কিছু সংখ্যক চিকিৎসক তা মেনে নিতে পারেননি।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানরত হাসপাতালের আরএমও রানা নূরুস সামস ও ডাক্তার ফায়েজুর রহমানকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের আরএমও ফাইজুর রহমান বলেন, ‘আমি ও ডা.নূরুস সামস বদলির আদেশ পেয়েছি। আমরা এখন ঢাকায় আছি। পিকনিকের বিষয়টি আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, অফিস খোলার দিন এতো চিকিৎসক পিকনিকে যাওয়ায় রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে না উঠতেই মাত্র ২ দিনের মাথায় এমন পিকনিকের আয়োজন অমানবিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়! এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে বাহুবল উপজেলা পুটিজুরি পাহাড়ে ফাইভ স্টার মানের ‘দ্যা প্যালেস রিসোর্ট’ এর সুপারভাইজারের সাথে গণমাধ্যমকর্মীরা যোগাযোগ করলে মুঠোফোনে তিনি জানান, হোটেলটি কর্তৃপক্ষের ৩ বেলা খাবারসহ ১ দিনের ভাড়া ২১ হাজার টাকা। বুকিং দিতে হলে আগেই দিতে হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিকিৎসকদের পিকনিকের জন্য এ হোটেলে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। তবে হোটেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বিস্তারিত জানাতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।
ভোরের আকাশ/ সু