logo
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৫:১৯
সীতাকুণ্ডে ভূ-গর্ভস্থ পানিতে অশনিসংকেত
বাড়ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকি
মো. নাছির উদ্দিন, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)

সীতাকুণ্ডে ভূ-গর্ভস্থ পানিতে অশনিসংকেত

সেচযন্ত্র দিয়ে পানি উত্তোলনের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে

পানির প্রাথমিক ও সহজলভ্য মূল্যবান উৎস হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানি। আর ভূ-গর্ভস্থ পানি হচ্ছে ‘অদৃশ্য সম্পদ, দৃশ্যমান প্রভাব।’ সীতাকুণ্ডে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা। মূলত নাগরিক চাহিদা পূরণ ও সেচ প্রকল্পে গভীর-অগভীর নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারনে নিচে নামছে পানির এ স্তর।

 

জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯ সহ সরকারের অন্যান্য নীতিমালা উপেক্ষা করে অপরিকল্পিত নগরায়ন শিল্পায়নের প্রভাব আর ভূ-উপরিভাগের নদ-নদী, খাল-বিল ও পুকুর ভরাট সহ পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ভূ- গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। পৌরএলাকায় হস্তচালিত নলকূপ প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। আর গভীর নলকূপগুলোতে উঠছেনা পর্যাপ্ত পানি। এমতাবস্থায় এবার উপজেলায় আগে ভাগেই খরা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

 

উপজেলার ১নং সৈয়দপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, সীতাকুণ্ডে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে।

 

ফলে অনেক এলাকায় চাষাবাদে ভূ-উপরিভাগের পর্যাপ্ত স্বাভাবিক পানি মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের উপর নির্ভরতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানির স্তর ইতোমধ্যে ৪ থেকে ১০ ফুট নিচে নেমে গেছে। তিনি প্রাকৃতিক পানির সংরক্ষণ‘সহ পুকুর-দিঘীগুলোর পানি জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করেন। ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুদ্দৌজা বলেন, এমনিতেই ভূ- গর্ভস্থ পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে নলকূপে চাহিদা মতো পানি উঠে না। এবার পানির স্তর কিছু এলাকায় এখন ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। তাতে দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক দূর্যোগের শঙ্কা।

 

সূত্র জানায়, ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বর্তমানে চলছে বোরো মৌসুম। বোরো আবাদ পুরোটাই সেচনির্ভর। নদী-নালা ও খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাওয়ার পাম্পে নদী-নালার পানিতে সেচ এখন নেই বললেই চলে। ফলে নদী-নালা ও খাল-বিলের পাড়েও বসেছে গভীর নলকূপ। খাবার পানিও উঠছে গভীর নলকূপে। সেচযন্ত্র দিয়ে পানি উত্তোলনের ফলে মাটির নিচের পানির স্তরে মারাত্মক চাপ পড়ছে। ফলে সুপেয় পানির উৎস যেমন কমছে, তেমনি বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে কৃষিখাত।

 

ভূ-গর্ভস্থ পানিতে অশনিসংকেত দেখছেন গবেষকরা। এমন এক শঙ্কা আর উদ্বেগের মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আগামী মাসে পালিত হবে বিশ্ব পানি দিবস।

 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিবছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালন করা হয়ে থাকে। দিবসটি পালনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। খাবার পানি সহ রান্না, গোসল ও চাষাবাদে পানির চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যবহার হয় ভূ-গর্ভস্থ স্তর থেকে। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশে গভীর নলকূপ বসানো শুরু হয়। তখন মাত্র ৩০ থেকে ৪০ ফুট নিচে নলকূপ বসিয়েই পানি পাওয়া যেতো। আর এখন ১৬০ ফুট নিচেও পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত পানি। অথচ একযুগ আগেও ৬০-৭০ ফুট নিচে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যেতো।

 

উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক নিয়মে ভূ-গর্ভস্থ পানির যে স্তরটুকু খালি হয়, তা পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিকভাবে পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত পানি উত্তোলন ও অনাবৃষ্টির কারণে তা আর হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত ঝুঁকি। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের লক্ষে ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ পানির প্রাকৃতিক উৎস সংরক্ষণ করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/মি