logo
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১১:১৩
অবৈধ স’মিলের ছড়াছড়ি, বন বিভাগ ও প্রশাসন নীরব
নেত্রকোনা প্রতিনিধি

অবৈধ স’মিলের ছড়াছড়ি, বন বিভাগ ও প্রশাসন নীরব

লাইসেন্স ছাড়াই যত্রতত্র অবৈধ স’মিল গড়ে উঠেছে

সরকারের সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে লাইসেন্স ছাড়াই প্রশাসনের নাকের ডগায় নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ স’ মিল (করাত কল)। নিয়ম-নীতি ও লাইসেন্স ছাড়াই যত্রতত্র অবৈধ স’মিল গড়ে উঠায় একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার রাজস্ব আয় বঞ্চিত হচ্ছে।


অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী মিল মালিকদের কাছ থেকে বাৎসরিক উৎকোচ আদায় করে থাকে। এতে করে লাভবান হয় ওই কর্মকর্তা কর্মচারী ও মিল মালিকরা। অপর দিকে সরকারের রাজস্ব তহবিলের খাতা শূন্যই থেকে যায়।


নেত্রকোনা বন বিভাগ অফিস সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনার ১০ উপজেলার আনাচে কানাচে মিলিয়ে তিনশত ২৮টি স’মিল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২১টি মিলের লাইসেন্স আছে। তবে এদের অনেকেই নিয়মিত ভাবে লাইসেন্স নবায়ন করছেন না।


অভিযোগ রয়েছে, এসব মিলের ফারিয়া দালালরা গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে সব ধরণের গাছ বিক্রি করতে প্রলুব্ধ করছে। অনেক মিলে রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ কাঠ ও বন বিভাগের কাঠ ছিড়াই করা হয়। এতে করে একদিকে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন বিভাগের জনৈক কর্মচারী জানান, একটি স’মিলের লাইসেন্স করতে বেশ কিছু কাগজপত্র এবং ২৩০০টাকার প্রয়োজন হয়। বাস্তবে লাইসেন্স করতে আসা স’মিল মালিকদেরকে সাত-পাঁচ বুঝিয়ে দিনের পর দিন হয়রানী ও সেই টাকার ৩/৪ গুণ বেশি টাকা নেওয়া কারণে স’মিল মালিকেরা লাইসেন্স করতে আগ্রহী হন না। বন কর্মকর্তারা ‘টু-পাইস’ ধান্দা করে জনবল সঙ্কট দেখিয়ে মিল তদারকি যুগের পর যুগ বন্ধ করে রেখেছেন।


নেত্রকোনা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রফিক জানান, মিল মালিকদের একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই লাইসেন্স করছেন না। এ বিষয়ে তিনি কার্যকরী মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানান। অবৈধ মিল মালিকদের বড় ধরনের জরিমানা বা মিল সিলগালা করলে তারা লাইসেন্স করতে বাধ্য হতেন। সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।


সরেজমিনে নেত্রকোনা সদরের লক্ষিগঞ্জ, আটপাড়ার তেলিগাতী, বারহাট্টার অতিথপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একাধিক মিল মালিকের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল স’মিলের লাইসেন্স কেন করছেন না ? এ ব্যাপারে তারা কোন জবাব দিতে রাজি হন নি। শুধু এটুকু জানান, লাইসেন্স করতে গেলে হয়রানীর শিকার হতে হয়। প্রতিটি স’মিল সম্পর্কে বন বিভাগ অবগত আছেন।


নেত্রকোনা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক এ এফ জি মোস্তফা জনবল সঙ্কটের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তারা সব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রতিটি স’মিল মালিককে লাইসেন্স করার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। লাইসেন্স না করলে পরবর্তীতে এসব স’মিল মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম আব্দুল ওয়াদুদ জানান, লাইসেন্স করানোর জন্য মিল মালিকদের বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে। কিন্তু মিল মালিকরা নানা ধরণের টালবাহানা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চলেছে। অবৈধ স’মিল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান বা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। অচিরেই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে মালিকদেরকে লাইসেন্স করাতে বাধ্য করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু