logo
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৮:৫৪
পরিচয় গোপন করে রোহিঙ্গা-দাগী অপরাধীদের পাসপোর্ট
চক্রের ২৩ সদস্য গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিচয় গোপন করে রোহিঙ্গা-দাগী অপরাধীদের পাসপোর্ট

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নাগরিক এবং বাংলাদেশের দাগী অপরাধীদের নাম-পরিচয় গোপন করে পাসপোর্ট তৈরি চক্রের ২৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা দালাল ও আনসার সদস্য রয়েছেন।

 

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর-রশীদ। এতে উপস্থিত ছিলেন ডিবি লালবাগ বিভাগের ডিসি (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মশিউর রহমান।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উম্মে ছলিমা ছমিরা, মরিজান ও মো. রশিদুল। রোহিঙ্গা দালাল আইয়ুব আলী ও মো. মোস্তাকিম। আনসার সদস্য মো. জামসেদুল ইসলাম ও মো. রায়হান। বাঙালি দালাল রাজু শেখ, শাওন হোসেন ওরফে নিলয়, ফিরোজ হোসেন, তুষার মিয়া। আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর ও উত্তরা এলাকার দালাল সদস্যরা হলেন- শাহজাহান শেখ, শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমেদ হোসেন, মাসুদ আলম, আব্দুল আলিম, মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন ও মো. সোহাগ।

 

মোহাম্মদ হারুন অর-রশীদ বলেন, তারা তিন ভাগে রাজশাহী, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানের কম্পিউটার অপারেটরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা থেকে শুরু করে দাগী অপরাধীদের জন্মসনদ করিয়ে নিতেন। পরে জন্মসনদের তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে দিতেন রোহিঙ্গাদের।

 

তিনি জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা থেকে পাসপোর্ট ও কম্পিউটারসহ তিন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ, ১০ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার, টাঙ্গাইল ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই আনসার সদস্যসহ রোহিঙ্গা ও বাঙালি দালাল চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি এনআইডি, ৫টি কম্পিউটার, তিনটি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্ট তৈরির সংশ্লিষ্ট শত শত দলিলপত্র জব্দ করা হয়েছে।

 

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, চক্রটি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদেরকে লাখ টাকার বিনিময়ে জন্ম সনদ, এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট বানিয়ে দিতেন। চক্রটি তিনভাগে এই কাজ করে আসছে। এদের মধ্যে একটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে রোহিঙ্গাদেরকে ঢাকায় নিয়ে আসে। আরেকটি দল এদের জন্য জন্ম সনদ, এনআইডি কার্ড বানিয়ে দেয়। সর্বশেষে অন্য দলটি ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে দ্রুত ও অতি দ্রুত ধরনের টাকা জমা দেওয়া, বায়োমেট্রিক্স করা ও ছবি তুলার ব্যবস্থা করে দেয়।

 

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে, ছয় ঘণ্টার মধ্যে জন্ম সনদের জন্য এরা ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। তিন দিনের মধ্যে এনআইডি করে নেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে।

 

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার করা দালালদের মোবাইলে শত শত পাসপোর্ট করে দেওয়ার প্রাসঙ্গিক সফট ডকুমেন্টস, ডেলিভারি স্লিপ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে গত তিন মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য করা ১৪৩টি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি রোহিঙ্গাদের, বাংলাদেশি দাগী অপরাধীদেরকে ভিন্ন নাম ও ঠিকানায় পাসপোর্ট করে দিচ্ছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে।

 

মহানগর ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ঢাকা, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম সনদ ও এনআইডি বানিয়ে তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট বানিয়ে থাকে। প্রযুক্তি অনুশীলনে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ডাটা, ডিজিটাল জন্মসনদ ডাটা, স্মার্ট এনআইডি ডাটা ব্যাংক আছে যেখানে বিভিন্ন বায়োমেট্রিক্স, ছবিসহ নানা তথ্য সংরক্ষিত।

 

গ্রেপ্তার আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এই চক্রে আর কারা কারা জড়িত, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিবির এই কর্মকর্তা।

 

ভোরের আকাম/মি