logo
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১১:১৩
সমাজের মূলধারায় ফিরতে চায় যাযাবর বেদে সম্প্রদায়
বাগেরহাট প্রতিনিধি

সমাজের মূলধারায় ফিরতে চায় যাযাবর বেদে সম্প্রদায়

কাটাখালি বেদে পল্লির বেদেরা

আধুনিক সমাজে পিছিয়ে পড়া এক যাযাবর জনগোষ্ঠী বেদে সম্প্রদায়। পথে পথেই যাদের কেটে যায় পুরোটা জীবন। শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপদ বাসস্থান তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুদের বেড়ে ওঠাও যেন বিভীষিকাময়। আধুনিক সমাজের সঙ্গে এগিয়ে চলতে এদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে সমাজের মূলধারায় ফিরতে চায়। তাদের শিশুরাও স্বপ্ন দেখে পরিবর্তনের, হতে চায় চিকিৎসক ও শিক্ষক। তবে প্রয়োজনীয় সরকারি সুযোগ-সুবিধার অভাবে তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না।


বাগেরহাটের ফকিরহাটের কাটাখালি ও সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ অস্থায়ী বেদে পল্লিতে গিয়ে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। তারা জানান, একটা সময় ছিল যখন বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নৌবহরে চলাচল করত। তবে সেসব এখন অতীত। অধিকাংশ বেদে এখন নৌকা বাদ দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় এক থেকে দুই মাস অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে।


কাটাখালি বেদে পল্লির সরদার ইসরাফিল হাওলাদার বলেন, ‘দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই কাটাখালি বেদে পল্লিতে আমি বসবাস করি। আমাদের এখানে ২০টি বেদে ঘর রয়েছে। এছাড়া আরও ৫০টি অস্থায়ী ঘর এখানে ছিল, যারা প্রায় ১ মাস আগে চলে গেছে। আমি ফকিরহাটের পিলজঙ্গ ইউনিয়নের বাসিন্দা। আমার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। খুব কষ্ট করে মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে বারবার ধন্না দিয়ে আমি এই ইউনিয়নের বাসিন্দা হয়েছি। তবে বাসিন্দা হলেও সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি। আমরা তো সবাই ভূমিহীন। সরকার তো ভূমিহীনদের জন্য ঘর এবং জমির ব্যবস্থা করেছে। আমরা এমনই হতভাগ্য সম্প্রদায় যারা সরকারি ঘর কিংবা জমি কিছুই পাইনি।’


একই পল্লির বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, ‘বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের মূল পেশা হচ্ছে সাপ ধরা, সাপের খেলা, শিঙ্গা লাগানোসহ বিভিন্ন কবিরাজী চিকিৎসা। তবে মানুষ এখন আমাদের চিকিৎসাসেবা নিতে চায় না। এ কারণে আগের মতন আয়-রোজগারও নেই। আমাদের অনেকেই এখন পেশা পরিবর্তন করেছেন। এই যাযাবর জীবন বাদ দিয়ে আমিও পরিবার নিয়ে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছি।’


একই পল্লির ১০ বছরের শিশু তাবাসসুম খাতুম বলেন, ‘পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে থাকতে আমার ভালো লাগে না। আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করি। বড় হয়ে আমি ডাক্তার হতে চাই।’


বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার সমাজের সব জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বেদে সম্প্রদায়ের জন্য সরকারের সামাজিক যে নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে, তার আওতায় তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে তাদের আমাদের কাছে আসতে হবে এবং সমস্যাগুলো বলতে হবে। এ ছাড়া আমি নিজেও খোঁজখবর নেব। যারা ইতোমধ্যে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন বা বাসিন্দা হয়েছেন তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারি জমিতে ঘর এবং জমি বরাদ্দের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।’

 

ভোরের আকাশ/ সু